পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఇVR রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র ছিলেন। কিন্তু তাহার সহিত আমার অন্যরূপ ব্যক্তিগত সম্বন্ধ ছিল ; কলিকাতার মধ্যে র্তাহার স্থায় আত্মীয় আমার দ্বিতীয় ছিল না ; এবং এই স্থানে আমি পরিষদের সদস্য ও পরিষদের প্রতিনিধিরূপে দণ্ডায়মান হইলেও আমার পক্ষে সেই ব্যক্তিগত সম্পর্ক পরিহারপূর্বক কোন কথা বলা নিতান্ত কঠিন। আমার উক্তির অধিকাংশই আমার ব্যক্তিগত কথা ; আশা করি, পরিষদের সভ্যগণ তজ্জন্য অনুগ্রহপূর্বক ক্ষমা করিবেন। আমার বয়স যখন ৮৯ বৎসর, গ্রামের ছাত্রবৃত্তি পাঠশালার নিম্ন শ্রেণীতে যখন আমি অধ্যয়ন করিতাম, তখন একদিন আমাদের বাৰ্ষিক পরীক্ষা উপলক্ষে একখানি sFx *if...si FETS dictation দেওয়া হইতেছিল। কয়েকদিন পরে দেখিলাম, সেই ক্ষুদ্র পুস্তিকাখানি আমাদের বাড়ীতে তক্তাপোশের উপর পড়িয় আছে। পুস্তকখানির নাম জয়দেব চরিত' ; গ্রন্থকারের নাম দেখিলাম, শীরজনীকান্ত গুপ্ত। বইখানি পড়িবার চেষ্টা করিয়া ভাল বুঝিতে পারিলাম না ; কিন্তু উহার বিজ্ঞাপনট পড়িয়া মনের মধ্যে কিরূপ একটা গোলযোগ উপস্থিত হইল, তাহ আজ প্রায় ১৭২৮ বৎসর পরে মনে ঠিক আসিতেছে না। এই ঘটনার ৫৬ বৎসর পরে যখন আমি ইংরেজী স্কুলের নিম্ন শ্রেণীতে পড়িতাম, ৩থন বাঙ্গল বহি, বাঙ্গল কাগজ পড়া আমার রোগের মধ্যে ছিল। সেই সময়কার একখানা বান্ধব’ পত্রিকায় একটি ঐতিহাসিক প্রবন্ধ পাঠ করি। সেই প্রবন্ধের শেষভাগে দেখিলাম যে, শ্ৰীযুক্ত রজনীকান্ত গুপ্ত,—যাহার নামের সহিত পূর্বেই আমার পরিচয় ঘটিয়াছিল, সেই রজনীকান্ত গুপ্ত—সিপাহী যুদ্ধের বৃহৎ ইতিহাস লিখিবার সংকল্প করিয়াছেন। বাঙ্গলা ভাষায় একখানি স্ববৃহৎ ইতিহাস-গ্রন্থ রচিত হইলে, এই চিন্তায় আমার বালক-হৃদয় আনন্দে উন্মত্ত হইয়াছিল। একদিন সহস দেখিলাম, সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাসের খণ্ডশঃ প্রকাশিত প্রথম ভাগ রজনীবাবুর অন্যতম বন্ধু বঁকিপুরের বর্তমান গবর্ণমেণ্ট উকিল শ্ৰীযুক্ত পূর্ণেন্দ্রনারায়ণ সিংহ কর্তৃক পিতাঠাকুর মহাশয়ের নামে প্রেরিত হইয়াছে । আগ্রহ সহকারে গ্রন্থের আদ্যোপান্ত পাঠ করিলাম ; একবার পড়িয়া তৃপ্তি হইল না ; পুনঃ পুনঃ পাঠ করিলাম ; গ্রন্থের ওজস্বিনী ভাষা ও বিষয় বর্ণনায় গ্রন্থকারের এরূপ অনুরাগ ও উৎসাহ কোন বাঙ্গল গ্রন্থে ইহার পূৰ্ব্বে দেখি নাই । সত্যের প্রতি অনুরাগ, স্বজাতির প্রতি অনুরাগ, স্বদেশের প্রতি অনুরাগ গ্রন্থের প্রত্যেক পৃষ্ঠে ব্যক্ত দেখিয়া আমার বালক-হৃদয় পুলকিত হইল। গ্রন্থ পাঠ করিয়৷ যেন গ্রন্থকারের চরিত্র চোখের উপরে দেখিতে পাইলাম ; গ্রন্থপাঠে যে গ্রন্থকারের পরিচয় পাওয়া যায়, ইহার পূর্বে আমার ধারণা ছিল না। কতবার আমার বাল্যবন্ধুগণকে জোর করিয়া ধরিয়া রাখিয়া সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস পড়িয়া শুনাইতাম ; আমি স্বয়ং যে আনন্দ পাইয়াছিলাম, সে আনন্দভোগে অপরকে অধিকারী করিয়া আরও আনন্দ পাইতাম । তাহার পর তিন চারি বৎসর অতীত হইল। আমি যে বার এন্‌ট্রান্স পরীক্ষা দিই, রজনীবাবু সে বার এন্‌ট্রান্স পরীক্ষায় অন্যতম পরীক্ষক নিযুক্ত ছিলেন। এনট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া কলিকাতায় আসিয়া আমি সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস দ্বিতীয়