পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র وينسيان" ক্ষুদ্র করিয়া দেয় না ? আমবা পাশ্চাত্ত্য শিক্ষা লাভ করিয়া স্বাধীন চিন্তার অবকাশ পাইয়াছি বলিয়া ঘটা করিয়া বক্তৃতা করি ; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের সেই চিন্তা কি আমাদেরই চিন্তা ? আমরা প্রাদেশিক শাসন কার্য্যে প্রভূশক্তি হইতে কতকটা ক্ষমতা লাভ করিয়াছি বলিয়া অহঙ্কার করিয়া থাকি ; কিন্তু গত দুই সপ্তাহ কালের কাউন্সিলগুহের র্যাহারা সংবাদ রাখেন, তাহারা কি বলিতে পারেন যে, সেই শাসন কি প্রকৃতই আমাদেরই আয়ত্ত ? আমরা বিলাতের লোকের সহিত স্বাধীনভাবে বাণিজ্য চালাইয়া থাকি ; কিন্তু সেই বাণিজ্য কি সৰ্ব্বতোভাবেই স্বাধীন ? আমি রাজনীতির সম্পর্ক একবারে বর্জন করিয়া নিতান্ত একাডেমিকৃ অর্থে জিজ্ঞাসা করিতেছি, প্রবলের সাহায্যে যে দুৰ্বল মুগ্ধ, তাহার স্বাতস্থ্য কোথায় ? স্থৰ্য্যালোকের সন্নিধানে খদ্যেতের স্বাভাবিক দীপ্তি কত দূর পর্য্যন্ত প্রকাশ পায় ? মাতৃক্রোড়শায়ী স্তন্যপায়ী শিশুর কতকটা স্বাতন্ত্র্য আছে বটে, কিন্তু সে স্বাতন্ত্র্যের দৌড় কতটুকু? আমাদের দয়াময়ী ঘটোপ্পী গবর্ণমে ট -জননী আমাদিগকে যে স্তন্যপীযুষদানে অহরহ তৃপ্ত রাখিয়াছেন, এবং ঘুম-পীড়ানিয়া গান অবিরত কর্ণকুহরে ঢালিয়া দিয়া আরামের পালঙ্কে আমাদের ঘুম পাড়াইতেছেন, আমাদের এই পীযুষপানের ও মুখনিদ্রার ও স্বপ্ন-দর্শনের স্বাতস্থ্যের দৌড় কতটুকু ? আমাদের অবস্থা কতকটা হটহাউসের যত্নপালিত চারার মত। আমরা যথাসময়ে জল পাই, আলো পাই, শীতাতপ উপভোগ করি, আমাদের কীটের ভয় নাই, শিশিরের ভয় নাই, বড় বড় মহীরুহ যখন প্রভঞ্জনের সহিত মল্লযুদ্ধে পরাজিত হইয়া ভূমিশায়ী হয়, আমরা তখন গ্লাসকেসের ভিতর হইতে তাহাদের অবস্থা দেখিয়৷ হাসিয়া থাকি ; কিন্তু হায়! দৈব বিধানে আমাদের প্রভুর যদি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ শিথিল হয়, যদি আমাদের মালী মহাশয় একদিন আমাদিগকে জল যোগাইতে ও সার যোগাইতে ভুলিয়া যান, তবে সংসারের নিষ্ঠুর জীবনদ্বন্ধে আমাদের ঔদ্ভিদিক জীবনের পরমায়ু কতটুকু হইয়া দাড়ায় ? আমাদের এই হট্টহাউস পালিত জীবনে স্বাভাবিকতা থাকিতে পারে, কিন্তু তাহ। আভিধানিক অর্থে নহে। অন্য সমাজে যে কারণে যে কার্য্যের উৎপত্তি হয়, আমাদের সমাজে সে কারণে সে কার্যের উৎপত্তি হয় না। পৃথিবীর ইতিহাস হইতে যে সকল সমাজতত্ত্বের স্বত্র সঙ্কলন করিয়াছ, ভারতবর্ষের ইতিহাসে তাহা প্রয়োগ করিতে যাইও না । আমি বলিতে চাহি যে, এই অস্বাভাবিকতাই আমাদের সমাজশরীরের সকল ব্যাধির লিদান ; এখন ইহাই একমাত্র ব্যাধি ; অন্য সকলই তাহার বিশেষ বিশেষ লক্ষণ বা উপসর্গ মাত্র। অন্যান্য দেশে সমাজজীবন স্বাভাবিক নিয়মে প্রকৃতির সহিত দ্বন্দ্ব করিয়া বধিত হইয়াছে ও বিকাশ লাভ করিয়াছে ; আমাদের দেশে সমাজ পরপ্রদত্ত অঙ্কগ্রহের উপর ভর করিয়া জীবনরক্ষা করিতেছে। পরে না বলাইলে আমরা বলিতে চাই না, কাজেই আমাদের বলিবার শক্তি কতটুকু আছে, সে বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ। আমাদের গায়ে কতটুকু বল আছে, তাহ জানি না । খাপনার সম্বন্ধে এই শোচনীয় অনভিজ্ঞতা হইতে আমাদের অক্ষমতার উৎপত্তি। যে