শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বিজয় বলিল, ওকে নিয়ে আপনার ঝঞ্চাট বেড়েচে, কিন্তু আমার দোষে নয় । ও নিজেই কি করে যে আপনার সংসারের মধ্যে নিঃশব্দে ঢুকে পড়ল তাই আমি ভাবি ৷ আমিও ঠিক তাই ভাবি ৷ মনে হয়, ও বাড়ি চলে গেলে আপনার কষ্ট হবে। অনুরাধা চুপ করিয়া কহিল, পরে বলিল, নিয়ে যাবার আগে কিন্তু আপনাকে একটি কথা দিয়ে যেতে হবে । আপনাকে চোখ রাখতে হবে ও যেন কষ্ট না পায় । কিন্তু আমি ত থাকি বাইরে নানা কাজে ব্যস্ত, কথা রাখতে পারব বলে ভরসা হয় না । - - তা হলে আমার কাছে ওকে দিয়ে যেতে হবে। আপনি ভুলে যাচ্ছেন যে সে আরও অসম্ভব । বলিয়া বিজয় হাসিয়া খাওয়ায় মন দিল। একসময়ে বলিল, আমার বৌদিদিদের আসার কথা ছিল, কিন্তু তারা বোধ করি আর এলেন না । কেন ? যে খেয়ালে বলেছিলেন সম্ভবতঃ সেটা গেছে । শহরের লোক পাড়াগায়ে সহজে প। বাড়তে চান না। একপ্রকার ভালই হয়েচে । এক আমিই ত আপনার যথেষ্ট অস্থবিধে ঘটিয়েছি, তারা এলে সেটা বাড়ত । অনুরাধা এ-কথার প্রতিবাদ করিয়া বলিল, এ বলা আপনার অন্যায়। বাড়ি আমার নয়, আপনাদের। তবু আমিই সমস্ত জায়গা জুড়ে বসে থাকব, তারা এলে রাগ করব, এর চেয়ে অঙ্কীয় হতেই পারে না । আমার সম্বন্ধে এমন কথা ভাবা আমার প্রতি সত্যিই আপনার অবিচার । যত দয়া আমাকে করেচেন আমার দিক থেকে এই কি তার প্রতিদান ? এত কথা এমন করিয়া সে কখনো বলে নাই। জবাব শুনিয়া বিজয় আশ্চৰ্য্য হইয়া গেল—যতটা অশিক্ষিত এই পাড়াগায়ের মেয়েটিকে সে ভাবিয়াছিল তাহা নয়। একটুখানি স্থির থাকিয় আপনার অপরাধ স্বীকার করিয়া কহিল, সত্যই এ-কথা বলা আমার উচিত হয়নি। যাদের সম্বন্ধে এ-কথা খাটে আপনি তাদের চেয়ে অনেক বড়। কিন্তু দু-তিনদিন পরেই আমি বাড়ি চলে যাব, এখানে এসে প্রথমে আপনার প্রতি নানা দুর্ব্যবহার করেচি, কিন্তু সে না-জানার জন্তে। অথচ সংসারে এমনিই হয়, এমনিই ঘটে। তবু যাবার আগে আমি গতীর লজ্জার সঙ্গে আপনার ক্ষম ভিক্ষা করি । $bro
