পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষোড়শী

 শিরোমণি। যা ভাবা গিয়েছিল ব্যাট হাবা-গোবা নয়—বিশেষ সুবিধে হবে না বলেই যেন শঙ্কা হচ্চে, না?

 জনার্দ্দন। মায়ের অভিরুচি।

 শিরোমণি। তার আর কথা কি! কিন্তু ব্যাপারটা যেন খিচুড়ি পাকিয়ে গেল। না গেল একে ধরা, না গেল তাকে মারা। তোমার কি ভায়া, পয়সার জোর আছে, ছুড়ি যক্ষের মত আগলে আছে, গেলে সুমুখের বাগান-বেড়াটা তোমার টানা দিয়ে চৌকোশ হতে পারবে। কিন্তু বাঘের গর্তের মুখে ফাদ পাততে গিয়ে না শেষ আমি মারা পড়ি।

 জনার্দ্দন। আপনি কি ভয় পেয়ে গেলেন না কি?

 শিরোমণি। না না, ভয় নয়,–কিন্তু তুমিও যে খুব ভরসা পেলে তা ত তোমারও মুখ দেখে অনুভব হচ্ছে না। হুজুরটি ত কানকাটা সেপাই—কথাও যেমন হেঁয়ালী, কাজও তেমনি অদ্ভুত। ও যে ধরে গলা টিপে মদ খাইয়ে দেয়নি এই আশ্চর্য্য। এককড়ির মুখে ভৈরবী ঠাকুরুণের হুমকিও ত শুনলে? তোমরা চুপ করে ছিলে, আমিই মেল। কথা কয়েচি–ভালো করিনি। কি জানি, এককোড়ে ব্যাট ভেতরে ভেতরে সব বলে দেয় না কি! দুয়ের মাঝ খানে পড়ে শেষকালে না বেড়াজালে ধরা পড়ি।

 জনার্দ্দন। (উদাস-কণ্ঠে) সকলই চণ্ডীর ইচ্ছে। বেলা হ’লো, সন্ধ্যের পর একবার আসবেন।

 শিরোমণি। তা আসব। কিন্তু ঐ যে আবার এরা ফিরে আসচেন হে!

[ মন্দির-প্রাঙ্গণের একটা দ্বার দিয়া ষোড়শী ও তাহার পশ্চাতে সাগর ও তাহার সঙ্গী প্রবেশ করিল। অন্য দ্বার দিয়া জীবানন্দ, প্রফুল্ল, তৃত্য ও কয়েকজন পাইক প্রবেশ করিল। ]

 জীবানন্দ। চলে যাচ্ছিলাম, শুধু তোমাকে আসতে দেখে ফিরে এলাম। এককড়িকে দিয়ে তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম, এবং তারই মুখে তোমার জবাবও শুনলাম। তোমার বিরুদ্ধে রাজার আদালতে গিয়ে দাড়াবার বুদ্ধি আমার নেই, কিন্তু নিজের প্রজাদের শাসনে রাখবার বিদ্যেও জানি। সমস্ত গ্রামের প্রার্থনা-মত তোমার সম্বন্ধে কি আদেশ করেচি শুনেচ?

 ষোড়শী। না।

 জীবানন্দ। তোমাক বিদায় করা হয়েচে। নতুন ভৈরবী করে, তাকে মন্দিরের ভার দেওয়া হবে। অভিষেকের দিনও স্থির হয়ে গেছে। তুমি রায়মশায়

৩৯