পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় সারা কছিল, কেবল ভালবাসাই নয়, আমরা আপনাকে বহু সম্মান করি। শুধু আপনি ভালো বলেই কবিনে, আপনি বড় বলেই করি। তাই কল্পনা করা দূরে থাক, ও কথা মনে ভাবলেও আমরা লঙ্গ পাই । সেই আমাদের বিসর্জন দিয়ে কেমন করে চলে যাবেন ? কিন্তু না গিয়েও যে উপায় নেই। উপায় যদি না থাকে, আমাদেরও সঙ্গে না নিয়ে উপায় নেই। আর, আমি না থাকলে কাজ করবে কে মা ? সবিতা বলিলেন, কে করবে জানিনে, কিন্তু বড় ঘর থেকেই যদি এসে থাকি সারদা, তুমিও তেমন ঘর থেকে আসে নি যারা পরের কাজ করে বেড়ায় । তোমাকে দাসীর কাজ করতে আমি দেবো কেন ? সারদা জবাব দিল, তা হলে দাসীর কাজ করবো না, আমি করবো মায়ের সেবা। অপমানের লজ্জায় একলা গিয়ে পথে দাড়াবেন, তার দুঃখ যে কত সে আমি জানি। সে আমার সইবে না মা, সঙ্গে আমি যাবোই। বলিয়া আঁচলে চোখ মুছিয়া ফেলিল। সে স্পষ্ট করিয়া বলিতে চাহে না, কেবল ইঙ্গিতে বুঝাইতে চায় নিরাশ্রয়ের দুঃখ কত ! সবিতার নিজেরও মনে পড়িল সেদিনের কথা যেদিন গভীর রাত্রে স্বামী-গৃহ ছাড়িয়া বাহিরে আসিয়াছিলেন। আজও সে দুঃখের তুলনা করিতে জগতের কোন দুঃখই খুজিয়া পান না। তাহার পর সুদীর্ঘ বারো বছর কাটিল এই গৃহে। এই নরক-কুণ্ডেও বাচার প্রয়োজনে আবার তাহাকে ধীরে ধীরে অনেক কিছুই সঞ্চয় করিতে হইয়াছে, সে-সকল সত্যই কি আজ ভার-বোঝা ? সত্যই কি প্রয়োজন একেবারে ঘুচিয়াছে ? আবার কি নিজেকে তিনি ফিরিয়া পাইয়াছেন ? সারদার সতর্কবাণী র্তাহাকে সচেতন করিল, সন্দেহ জাগিল নির্বিঘ্নে আশ্রয়-তাগের নিদাকণ দুঃসাহস হয়তো আজ র্তাহার নাই! পুণ্যময় স্বামী-গৃহবাসের বহু স্বতি মানস-পটে ফুটিয়া উঠিল, ভয় হইল সেদিনের সেই দেহ, সেই মন, সেই শাস্ত পল্লী-ভবনের সরল সামান্ত প্রয়োজন এই বিক্ষুব্ধ নারীর অশুচি জীবন-যাত্রার ঘূর্ণবর্তে পাক খাইয়া কোথায় ডুবিয়াছে, কোন মতেই আর তাহাদের সন্ধান মিলিবে না। মনে মনে মানিতেই হইল সে নতুন-বোঁ আর তিনি নাই, তাহার বয়স হইয়াছে, অভ্যাসের বহু পরিবর্তন ঘটিয়াছে, এ আশ্রয় যে দিয়াছে তাহার দেওয়া লাঞ্ছনা ও অপমান যত বড় হোক, সেআশ্রয় বিসর্জন দিয়া শূন্ত-হাতে পথে বাহির হওয়া আজ তাহার চেয়েও কঠিন ; কিন্তু হঠাৎ মনে পড়িল, থাকাই বা যায় কিরূপে । এই লোকটার বিরুদ্ধে তাহার বিদ্বেষ ও স্বণ আহরহ পুঞ্জিত হইয়া যে এতবড় পৰ্ব্বতাকার হইয়াছে তাহা এতদিন নিজেও এমন করিয়া হিসাব করিয়া দেখেন নাই। মনে হইল সে আসিয়াছে ; খাটে বসিয়া পান ও দোক্তায় একটা গাল আবের মত ফুলাইয়া বারংবার উচ্চারিত সেই সকল অত্যন্ত

  • {