শরৎসাহিত্য সংগ্ৰহ বেলার হতবুদ্ধি ভাবটা কাটিয়া গেলে ক্ষণিকের জন্ত মুখ ক্রোধে রক্তিম হইয়া উঠিল, রাগ করিয়া ঝগড়া করিতে তাহার শিক্ষা ও সৌজন্তে বাধে, সে আপনাকে সংবরণ করিয়া কহিল, আমাকে কটাক্ষ করে কোন লাভ নেই। শুধু অনধিকারচর্চা বলেই নয়, হাহাকার করে বেড়ানো যত উচ্চাঙ্গের ব্যাপারই হোক সে আমি পামিনে এবং তার থেকে কোন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতেও আমি অক্ষম । আমার আত্মসন্মানবোধ বজায় থাক, তার বড় আমি চাইনে। নীলিমা কাজ করিতেই লাগিল, জবাব দিল না । আপ্তবাবু অন্তরে ক্ষুণ্ণ হইয়াছিলেন, কিন্তু আর না বাড়ে এই ভয়ে ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, না, না, তোমাকে কটাক্ষ নয় বেলা, কথাটা নিশ্চয়ই উনি সাধারণভাবেই বলেচেন । নীলিমার স্বভাব জানি, এমন হতেই পারে না—কখন পারে না তা বলচি । বেলা সংক্ষেপে শুধু কহিল, না হলেই ভাল। এতদিন একসঙ্গে আছি এ ত আমি ভাবতেই পারভূম না। নীলিমা ই-না একটা উত্তরও দিল না, যেন ঘরে কেহ নাই এমনিভাবে নিজের মনে সেলাই করিয়া যাইতে লাগিল। গৃহ সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ হইয়া রহিল। বেলার জীবনের একটু ইতিহাস আছে, এইখানে সেটা বলা আবশ্বক। তাহার পিতা ছিলেন আইন-ব্যবসায়ী, কিন্তু ব্যবসায়ে যশ বা অর্থ কোনটাই আয়ত্ত করিতে পারেন নাই। ধৰ্ম্মমত কি ছিল কেহ জানে না, সমাজের দিক দিয়াও হিন্দু, ব্রাহ্ম, भूडॉन কোন সমাজই মানিয়া চলিতেন না । মেয়েকে অত্যন্ত ভালবাসিতেন এবং সামর্থ্যের অতিরিক্ত ব্যয় করিয়া শিক্ষা দিবার চেষ্টাই করিয়াছিলেন। সে চেষ্টা সম্পূর্ণ নিফল হয় নাই তাহ পূর্বেই বলিয়াছি। বেলা নামটি সখ করিয়া তাহারই দেওয়া । সমাজ না মানিলেও দল একটা ছিল। বেলা সুন্দরী ও শিক্ষিতা বলিয়া দলের মধ্যে নাম রটিয়া গেল, অতএব ধনী পাত্র জুটিতেও বিলম্ব হইল না। তিনিও সম্প্রতি বিলাত হইতে আইন পাশ করিয়া আসিয়াছিলেন, দিন-কতক দেখা-শুনা ও মন জানা-জানির পালা চলিল, তাহার পরে বিবাহ হইল আইন-মতে রেজেস্ত্রী করিয়া । মাইনের প্রতি গভীর অমুরাগের এক অঙ্ক সারা হইল। দ্বিতীয় অঙ্কে বিলাস-ব্যসন, একত্রে দেশ-ভ্রমণ, আলাদা বায়ু-পরিবর্তন, এমনি অনেক কিছু। উভয় পক্ষেই মানাবিধ জনরব শুনা গেল, কিন্তু আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু প্রাসঙ্গিক অংশ যেটুকু তাহ অচিরে প্রকাশ হইয়া পড়িল । বর-পক্ষ হাতে হাতে ধরা পড়িলেম এবং কন্যা-পক্ষ বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা রুক্কু করিতে চাহিলেন । বন্ধু-মহলে ՀօՀ