পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাল্যে
২৫

 এই উপলক্ষে বাবা আমাকে কয়েকবার থিয়েটার ও বায়স্কোপ দেখাইতে লইয়া গিয়াছিলেন। নন্দ দাদাও সঙ্গে যায়। থিয়েটারের অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের সঙ্গীত ও অভিনয় দেখিয়া আমি অতিশয় মুগ্ধ হইয়াছিলাম। আমার মনে আছে, আমি প্রথম নাটক অভিনয় দেখি―দেবীচৌধুরাণী ও আলিবাবা। দেবীচৌধুরাণীর ‘বীণা―বাজেনা কেন’ এবং আলিবাবার ‘ছি ছি এত্তা জঞ্জাল’ এই দুইটী গান আমি এমন সুন্দর অনুকরণ করিয়াছিলাম যে আমার পিতা অনেকবার বাড়ীতে আমার মুখে উহা শুনিয়াছিলেন। রবিবার বায়স্কোপে যাওয়া আমার ক্রমশঃ অভ্যাস হইয়া উঠিল। কখনও নন্দ দাদা,―কখনও বা বাবা নিজে আমার সঙ্গে যাইতেন। কোন কোন রবিবারে আমি বাবার সঙ্গে ব্রাহ্মসমাজের উপাসনা মন্দিরে যাইতাম। আমার পিতা ব্রাহ্মধর্ম্মাবলম্বী ছিলেন না, কিন্তু সামাজিক রীতিনীতিতে তিনি ব্রাহ্মদের মত উদার ভাবাপন্ন ছিলেন।

 মাতার মৃত্যুর পর হইতে বাবা প্রতিদিন মায়ের ছবিতে একটী ফুলের মালা দিতেন। এখন আর মায়ের ছবিতে ফুলের মালা দেওয়া হয় না। বহুদিন যাবৎ একছড়া বেলফুলের মালা উহাতে শুকাইয়া ছিল, একদিন চাকর দেওয়াল ঝাড় দিতে উহা ফেলিয়া দিয়াছে। আমাদের কাহারও মনেই তাহাতে কোন চঞ্চলতা বা বিরক্তি আসে নাই। সকাল ছয়টা হইতে নয়টা―অপরাহ্ন একটা হইতে চারিটা মাষ্টার মহাশয় পড়াইতেন। শনিবারে কখনও কখনও থিয়েটারে, রবিবারে বায়স্কোপে যাওয়া আমার নিয়মিত কার্য্য মধ্যে ছিল।