পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গোচর হয়েছে, কিন্তু পূর্ণদৃষ্টিতে সেটাকে মোকাবিলায় কবুল করতে লাবণ্য নারাজ। বাঁধের মুখ পর্যন্ত লাবণ্য যেই গেছে অমিত আর থাকতে পারলে না, দৌড়োতে দৌড়াতে তার পাশে উপস্থিত।

 বললে, ‘জানতেন এড়াতে পারবেন না, তবু দৌড় করিয়ে নিলেন। জানেন না কি দূরে চলে গেলে কতটা অসুবিধা হয়?’

 ‘কিসের অসুবিধা?’

 অমিত বললে, যে হতভাগা পিছনে পড়ে থাকে তার প্রাণটা ঊর্ধ্বস্বরে ডাকতে চায়। কিন্তু, ডাকি কী বলে? দেব-দেবীদের নিয়ে সুবিধে এই যে, নাম ধরে ডাকলেই তাঁরা খুশি। দুর্গা দুর্গা বলে গর্জন করতে থাকলেও ভগবতী দশভুজা অসন্তুষ্ট হন না। আপনাদের নিয়ে যে মুশকিল।’

 ‘না ডাকলেই চুকে যায়।’

 ‘বিনা সম্বোধনেই চালাই যখন কাছে থাকেন। তাই তো বলি, দূরে যাবেন না। ডাকতে চাই অথচ ভাকতে পারি নে, এর চেয়ে দুঃখ আর নেই।’

 ‘কেন, বিলিতি কায়দা তো আপনার অভ্যাস আছে।’

 ‘মিস ডাট্‌? সেটা চায়ের টেবিলে। দেখুন-না, আজ এই আকাশের সঙ্গে পৃথিবী যখন সকালের আলোয় মিলল সেই মিলনের লগ্নটি সার্থক করবার জন্যে উভয়ে মিলে একটি রূপ সৃষ্টি করলে, তারই মধ্যে রয়ে গেল স্বর্গমর্তের ডাকনাম। মনে হচ্ছে না কি, একটা নাম ধরে ডাকা উপর থেকে নীচে আসছে, নীচে থেকে উপরে উঠে চলেছে? মানুষের জীবনেও কি ওই-

৫৯