পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

te ব্ৰাহ্মণ-সভার আবশ্যক হইত। যাক, ভদ্রলোকের কথা আজ এই পৰ্যন্তই থাক। হোটেলে যাহাবা সারি সারি পংক্তি-ভোজনে বসিয়া গেছে, তাহারা ভদ্রলোক নয়। অন্ততঃ আমরা বলি না । সকলেই কারিকর, ওয়ার্কশপে কাজ করে। সাড়ে দশটার ছুটিতে ভাত খাইতে আসিয়াছে। শহরের প্রান্তে মস্ত একটি মাঠের তিনদিকে নানা বকমের এবং নানা আকারের কাবখানা এবং একাধারে এইট পল্লীর মধ্যে দা’ঠাকুরের হোটেল। এ এক বিচিত্র পল্পী। লাইন করিয়া গায়ে গায়ে মিশাইয়া জীৰ্ণ কাঠের ছোট ছোট কুটীর। ইহাতে চীনা আছে, বর্মী আছে, মাদ্রাজী, উড়িষ্যা, তৈলঙ্গ আছে, চট্টগ্রামী মুসলমান ও হিন্দু আছে, আব্ব আছে আমাদের স্বজাতি বাঙ্গালী । ইহাদেরই কাছে আমি প্ৰথম শিখিযাছি যে, ছোট জাতি বলিয়া ঘূণা করিয়া দূরে রাখার বদ অভ্যাসটা পরিত্যাগ করা মোটেই শক্ত কাজ নয়। যাহারা করে না, তাহারা যে পারে না বলিয়া করে না, তাহা নয় । যে জন্য করে না, তাহা প্ৰকাশ করিয়া বলিলে বিবাদ বাধিবে । দা’ঠাকুর আসিয়া আমাকে সযত্নে গ্ৰহণ করিলেন ; একটি ছোট ঘর দেখাইয়া দিয়া কহিলেন, আপনি যতদিন ইচ্ছা এই ঘরে থাকিয়া আমার কাছে আহার করুন, চাকরি বাকরি হ'লে পরে দাম চুকাইয়া দিবেন। কহিলাম, আমাকে ত তুমি চেনে না, একমাস থাকিয়া এবং খাইয়া, দাম না দিয়াও ত চলিয়া যাইতে পারি ? দা”ঠাকুর নিজের কপালটা দেখাইয়া হাসিয়া কহিল, এটা ত সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন না মশাই ! বলিলাম, ন, ওতে আমার লোভ নেই। দাঠাকুর মাথা নাড়িতে নাড়িতে এবার পরম গাম্ভীর্যের সহিত কহিলেন, তবেই দেখুন। বরাত মশাই, বরাত । এছাড়া আর পথ নেই এই আমি সকলকে বলি । বস্তুতঃ এ শুধু তার মুখের কথা নয়। এ সত্য তিনি যে নিজে কিরূপ অকপটে বিশ্বাস করিতেন, তাহা হাতে নাতে সংপ্ৰমাণ করিবার জন্য মাস