বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:শ্রীরাজমালা (প্রথম লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8wo/o তটস্থ জনৈক ব্রাহ্মণের মুখে ব্ৰহ্মপুত্ৰ মাহাত্মা, সুবিশাল কিরাত রাজ্যের বিবরণ এবং তদন্তর্গত পীঠস্থানের মাহাত্ম্যাদি শ্রবণ করিয়৷ বিস্মিত হইয়াছিলেন। তদবধি তাহার হৃদয়ে কিরাত জয়ের আকাঙক্ষ অস্কুরিত হয়। প্রতদন পাঠ সমাপনস্তে গৃহে প্রত্যাগমন করিয় তাহার পোষিত বাসনার কথা পিতৃ সমক্ষে নিবেদন করিলেন। কিন্তু ধৰ্ম্মণরায়ণ শক্রজিত নানাবিধ উপদেশ বাক্য দ্বারা পুত্রকে এই দুরূহ কার্য্যে তিনিবৃত্ত করেন। পিতৃভক্ত প্রতদিন পিতার অলঙ্ঘণীয় আদেশ শিরোধাৰ্য্য করিয়া সে বিষয়ে নিরস্ত ছিলেন। কিন্তু বিশাল ত্রিবেগ রাজ্যের অধিকার লাভ করিবার পর, তাহার যাপ্য লালস পুনরুদ্দীপ্ত হইল। তিনি বিপুল বাহিনী সহ কিরাতের বিরুদ্ধে অভিযান করিলেন । মহারাজ প্রতদন লৌহিত্য (ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে স্কন্ধাবার স্থাপন করিয়া তিন দিবস অতিবাহিত কপিলেন। চতুর্থ দিবসে তিনি ব্রহ্মপুত্রের পরপারে উত্তীর্ণ হইয়া শিবির সন্নিবেশ এবং ক্ষত্ৰধৰ্ম্মানুসারে কিরাত রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিলেন । এই ঘটনায় কিরাতগণ নিপতিশয় ক্ষুব্ধ এবং ক্রুদ্ধ হইল। তৎপ্রদেশের নায়কগণ প্রচুর সৈন্যবল সংগ্ৰহ করিয়া প্রতিদিনের বিরুদ্ধে সমরক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়া প্রতিপক্ষের সহিত তুমুল যুদ্ধ আবস্তু করিল বিপক্ষের বিক্রম ও অসমসাহসিকতা মহারাজ প্রতদনের বিস্মযকর হইয়াছল। এই যুদ্ধে তাহাকে বিস্তর আয়াস ও ক্ষতি স্বীকার করিতে হইয়াছে। চতুর্দশ দিবসব্যাপী অবিশ্রাস্ত যুদ্ধের পর বিজয়লক্ষী মহারাজ প্রতদনের অঙ্কশায়িনী হইলেন । কিরাতগণ উপায়ান্তর না দেখিয়া প্রভর্দনের বশ্যতা স্বীকার করিল। ব্ৰহ্মপুত্র নদের নামান্তর কপিল হইলেও কপিল নামক অন্ত এক নদীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এই নদী গৌহাটীর কিঞ্চিৎ উপরে ব্রহ্মপুত্রে আত্মসমপণ করিয়াছে। পাঞ্জিটার ( Pargiter ) সাহেবের মতে ইহার প্রাচীন নাম ‘কৃপা নদী। এতদুভয় নদীর সম্মিলন স্থানে প্রতদন নব বিজিত রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন । এই রাজধানীও ত্রিবেগ নামে আখ্যাত হইয়াছিল । কেহ কেহ বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও কপিলের সন্নিহিত আর একটী নদী ছিল, তাহা এখন মজিয়া গিয়াছে। র্তাহাজের মতে তিনটা নদীর সন্নিধ্যস্থল বালয় রাজধানীর নাম ত্রিবেগ হইয়াছিল। স্বন্দরবনস্থ রাজধানীর 'ত্রিবেগ নামের কথা পূর্বে বলা গিয়াছে। প্রাচীন রাজধানীর নামানুসারে এইস্থানের নামকরণ হওয়াই অধিকতর সম্ভব বলিয়া মনে হয়। নব প্রতিষ্ঠিত রাজ্য কিরাতদেশে স্থাপিত হইয়া থাকিলেও সমস্ত কিরাতভূমি এই রাজ্যের অন্তর্নিবিষ্ট হয় নাই। কিরাত দেশের বিস্তৃতি অনেক বেশী। তাহার কিয়দংশ প্রতদিনের রাজ্যভুক্ত হইয়াছিল। •