পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড করিয়া দুলালীতে অবস্থিতি করেন। ইহার পরে হবিনগর, মাজপাড়া, ইলাসপুরবাসী গুপ্তগণের আদি পুরুষ কাশীনাথ গুপ্ত দুলালীতে আসিয়া বাসভূমি নিৰ্দ্ধারণ করেন। কাশীনাথ রাঢ়দেশ হইতে আসিয়া প্রথমতঃ শ্ৰীহট্ট শহরের প্রান্তবর্তী বরশালা গ্রামে বাসস্থান নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন, পরে দুহালীতে চলিয়া যান। কাশীনাথের পুত্র ভরতরায় মুর্শিদাবাদের দেওয়ান ছিলেন, তিনি হরিনগর পরগণা নিজ অধিকার ভুক্ত করিয়া লইয়াছিলেন। হরিনগর পরগণা দুলালীর সহিত ওতপ্রোতভাবে সংমিশ্রিত। দাস বংশীয় প্রতাপনারায়ণ মুর্শিদাবাদের নবাব দরবারে পেশকার ছিলেন। ঐ বংশীয় কান্তনাথ দাস শ্রীহট্ট জজ আদালতের প্রসিদ্ধ উকিল ছিলেন। গুপ্তবংশের তিলকরায় কবিরাজ সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন, “তিনি শিরোমণি" উপাধি লাভ করেন। তিনি বৈষ্ণব গ্রন্থে সুপণ্ডিত ছিলেন এবং শ্রীহট্ট গোস্বামীকৃত একখানা গ্রন্থের টীকা রচনা করিয়াছিলেন। অধুনা-প্রকাশিত রঘুনাথ লীলামৃত নামক এক পুস্তকে লিখিত আছে যে শ্রীহট্টের তিনি সহজ ভজন মতের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এই মত প্রচারক শ্যামকিশোর ঘোষ,১১ ও রঘুনাথ ভট্টাচাৰ্য্য১২ প্রভৃতি তাহার শিষ্য ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণ শিষ্য করায় শ্রীহট্টের ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণ তাহার একান্ত বিরুদ্ধ ছিলেন; এবং তজ্জন্য উভয় শাস্ত্র-যুদ্ধের উদ্যোগ হইয়াছিলেন। গুপ্তবংশী গৌরীচরণ একজন শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন; তিনি মুন্সেফ নিযুক্ত হইয়াছিলেন। গুপ্তপাড়ার যুগলকিশোর গুপ্তের পুত্র স্বগীয় জগদ্বন্ধু গুপ্ত বৈষ্ণব ও সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। বিশ্বনাথ চক্রবর্তী কৃত রূপচিন্তামণি গ্রন্থের পদ্যানুবাদ তিনি প্রকাশ করেন। তৎকৃত "অপূৰ্ব্ব দর্শন" পদাবলী পাঠে তদীয় ভজননিষ্ঠার পরাকাষ্টর প্রমাণ পাওয়া যায়। মোসলমান রাজত্বকালে দাসপাড়ার দাসবংশীয় যোগ্যতম ব্যক্তি পরগণার পাটওয়ারীর কাজ করিতেন। জগন্নাথ পুরকায়স্থ শেষ পাটওয়ারী। ১৮৩৮ খৃষ্টাব্দে এই পদ উঠিয়া যায়। দাস বংশের বৰ্ত্তমান গৌরবভাজন পেনশন প্রাপ্ত ডিঃ মাঃ শ্ৰীযুত সদয়াচরণ দাসের প্রপিতামহ সমীপবৰ্ত্তী আখালিয়া গ্রামে গিয়া বাস করেন। ইহারা এখনও আখালিয়া বাসী । দুলালীস্থ তেরহাতী দত্তকাপনের সেন বংশে মনোহর সেনের উদ্ভব হয়। ইনি একজন প্রসিদ্ধ কবি ছিলেন, শ্ৰীমদ্ভাগবতের কৃষ্ণলীলা অবলম্বনে গুণরাজ খানের ন্যায় তিনি “কৃষ্ণ বিজয়” নামক গ্রন্থ রচনা করেন। “হাস্যনাথের পাঁচালী” ও কৃষ্ণলীলাত্মক সঙ্গীতাবলী তাহার কৃত। ঐ সকল সঙ্গীতের পসার এখনও আছে। “সেন মনোহরে বলে গুনহে কালিয়া । নিভাইল প্রেমের আগুণ কে দিল জ্বালাইয়া৷” তাহার নাম যুক্ত এই ভণিতাটি হইতেই বুঝা যায় যে তিনি প্রেম-রসে রসিক ছিলেন। ইলাসপুরের গুপ্তবংশে শ্রীগৌরাঙ্গ-পার্ষদ মুরারি গুপ্ত জাত হইয়াছিলেন।১৩ ৪র্থ ভাগে ইহার সংক্ষিপ্ত কথা কথিত হইবে। কিন্তু ঢাকাদক্ষিণের মিশ্রবংশীয়গণ বলেন যে, মুরারি গুপ্ত তত্রত্য “বেজের পাড়া” নামক পল্লীবাসী ছিলেন। বেজের পাড়ার গুপ্তবংশ মিশ্রবংশেরই যজমান ছিলেন। এক্ষণে এ বংশ বিলুপ্ত কেবল তাঁহাদের বাটিকাদির চিহ্ন পূৰ্ব্বস্মৃতি জাগাইতে বৰ্ত্তমান আছে। দশসনা বন্দোবস্তের পর পর্যন্ত এ বংশের ধারা চলিয়াছিল, তখন এ বংশীয় রঘুদেবের ১১. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ৩য় ভাগ ৩য় খণ্ড ৮ম অধ্যায়ে ইহার কথা উক্ত হইয়াছে। ১২. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ৪র্থ ভাগে ইহার জীবন চরিত বর্ণিত হইবে। ১৩. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ৪র্থ ভাগে ইহার জীবনচরিত বর্ণিত হইবে।