পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড বাদশাহ ফরকশিয়ার দিল্লীর সিংহাসনে উপবিষ্ট (খৃঃ ১৭১৩-১৯) ছিলেন। চণ্ডীচরণ চৌধুরী সম্রাটের অনুকম্পা লাভ করিয়া ঢাকাদক্ষিণ হইতে তাহাদের বাসস্থান খারিজ করিয়া লন । সম্রাটের নামানুসারে তাহা ফরক্কাবাদ পরগণা বলিয়া খ্যাত হয়। চণ্ডীচরণ সম্রাটের অনুগ্রহ প্রাপ্তির পরেই হঠাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হন, তখন তাহার ভাগিনেয়ই সনন্দ গ্রহণ করেন; কিন্তু দৈব বশতঃ ইহারও তখন মৃত্যু হয়। পরশুরাম তখন চণ্ডীচরণের কনিষ্ঠ ভ্রাতা পরিচয়ে দরখাস্ত করিয়া ফরক্কাবাদ প্রাপ্ত হন।২১ অধিকন্তু স্বীয় পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি “ভাইয়াজি” “ভাইয়ার দীঘী" প্রভৃতি তাহার নামের স্মৃতিরক্ষা করিতেছে। পরশুরামের পুত্র রাজবল্লভ নিঃসন্তান ছিলেন, তাহার ভ্রাতা রাধাবল্লভের বংশীয়গণ বৰ্ত্তমান আছেন। ঢাকা দক্ষিণের দত্ত বংশ দত্তরালি গ্রাম চৌধুরী বংশের বীজীপুরুষ পূৰ্ব্বোক্ত দেবদাসের বংশে হলধর নামে এক খ্যাতনামা ব্যক্তি ছিলেন। তাহার চেষ্টায় ঢাকাদক্ষিণে বহুতর ভদ্রলোকের বসতি স্থাপিত হইয়াছিল। তিনি দত্ত বংশীয় হৃদয়ানন্দ নামক এক দরিদ্র ভদ্র ব্যক্তিকে পুত্র ও পৌত্ৰাদি সহ সপরিবারে “রাণীঘাট” হইতে আনয়ন করিয়া স্থাপন করেন ও নিজ তনয়া সুতপাকে তাহার পৌত্র বিপুলানন্দের কাছে বিবাহ দেন। এই “রাণীঘাট" কোথায় ছিল? এ রাণীঘাট নদীয়ার রাণীঘাট বলিয়া বোধ হয় না। কুশিয়ারা নদীর পশ্চিমে “রণাডহর” বলিয়া একটা স্থান আছে, উহাই উক্ত রাণীঘাট নামে কখনও খ্যাত ছিল কিনা বলা যায় না। কিন্তু জনশ্রুতি আছে যে, হৃদয়ানন্দ কুশিয়ারার পূৰ্ব্বতীরে অবস্থিতি করিতেন। হলধর কর্তৃক যে স্থানে হৃদয়ানন্দ দত্তের বাসস্থান নির্দিষ্ট হয়, দত্তদেব বাস নিবন্ধন তাহা “দত্তরালি” গ্রাম নামে খ্যাত হয় । বংশবিস্তৃতি হৃদয়ানন্দ দত্তের২২ পুত্র ছিলেন নয়নানন্দ, ইহার তিন পুত্র জ্যেষ্ঠ দেবকীনন্দন, মধ্যম দেবীদাস এবং কনিষ্ঠ বিপুলানন্দ। কালে ইহাদের বংশ বিস্তৃতির সহিত তাহারা প্রত্যেকে পৃথক পৃথক বাড়ীতে বাস করায়, উক্ত স্থান যথাক্রমে পূৰ্ব্বপাড়া, মাইজপাড়া ও উত্তরপাড়া নাম খ্যাত হয়; উত্তরপাড়াতেই বিপুলানন্দ ও সুতপার সন্তান বর্গের বাস দৈবকীনন্দের পুত্রের নাম শ্রীনাথ । শ্রীনাথ অতি প্রতাপান্বিত ব্যক্তি ছিলেন । অল্পকাল মধ্যেই ক্ষমতায় ঢাকাদক্ষিণ মধ্যে তিনি প্রধান স্থান অধিকার করেন। ২১. রাজধানী মুর্শিদাবাদের অধীন পং ঢাকাদক্ষিণ হইতে এই নূতন পরগণা খারিজ করার কথা একখানা সুরতহাল পত্রে লিখিত আছে তাহাতে জানা যায় যে ১৭১৮ খৃষ্টাব্দের পরে ইহা কাৰ্য্যে পরিণত হয়; যথাঃ“হবিগত ছুরতাল পত্র মিদং কাৰ্য্যষ্ণাগে সন ১১২৫ সাল ভাইরা পুরুষ রাম দাস মোকাম মুর্শিদাবাদ পং ঢাকাদক্ষিণ হনে পং ফুরকাবাদ খারিজ করিতে মুচ্ছদি সকলে তোমার আধা খচ্চ পাকড় করিছিলা তাতে ভাইয়া মুজকরে বহুত তোল্লাস করিয়া তোমার তিহাই হিম্বা নং ৭০০ সাত শত কাহণ কৌড়ি মহাজনি করিয়া খচ্চ দিলা-মোকাম মজকুর পরগণা মজকুর খারিজ করিলা । এক সেহাই মোকাম শ্রীহট্ট মুফস্বল খারিজ করিতে একশত কাহণ কৌড়ি খঙ্গ হইল। এতে পরগণা মজকর খরিদ করিতে আমরাও রাজি আছিলাম । রাজিনামা দেওয়ানী দফৰ্দ্দক স্বগীয় মহরে দিছি এই সমাচার আমরা জানি এতদার্থে ছুরতাল পত্র দিলাম। ইতি সন ১১২৯ সাল ২৩শে অগ্রহায়ণ সহরে মহরম।" ২২. ঘ পরিশিষ্ট দেখ। পরবর্তী প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের নামনিৰ্দ্দেশে তত্রস্থানে তাহাদের প্রসিদ্ধির কথা বলা যাইবে ।