পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড তাহা বিতরণ করে। সাধুর হস্ত রোপিত বৃক্ষ-পত্র সাদরে গৃহীত হয়। রহিম উদ্দীনের পুত্রসিরাজ উদ্দীন ও আব্দুল মনাফ, ইহার প্রপৌত্রের নাম মকলিস খা, ইহার প্রপৌত্র জুনিদ খা, ইহার প্রপৌত্র লাল মোহাম্মদ, ইহার প্রপৌত্র মোহাম্মদ জসির, ইহার পুত্ৰগণ জীবিত আছেন। ভাদেশ্বরের শেখ বংশ শেখ করমমোহাম্মদ আরব দেশবাসী ছিলেন। যখন হজরত শাহজলাল শ্রীহট্টের আগমন করেন, তাহার অব্যবহিত পরে তিনি আরব হইতে যাত্রা করিয়া শাহজলালসহ সম্মিলিত হন ও ৩৬০ আউলিয়ার একতমরূপে গণ্য হন। শেখ করম মোহাম্মদ বিবাহ করিয়াছিলেন, শ্রীহট্ট শহরেই তাহার বংশীয়গণ ছিলেন। যখন শ্রীহট্টে নবাব এক্রামউল্লা খা বাহাদুর নবাব হইয়া আগমন করেন, শেষ বংশে তখন ফয়জুল্লা নামে এক ব্যক্তি বৰ্ত্তমান ছিলেন। এক্রামউল্লা খা ইহাকে “ওস্তাদ” বা গুরু জ্ঞানে ভক্তি করিতেন এবং “বখশী” উপাধি দান করেন। বখশীকে প্রত্যহ নবাব দরবারে উপস্থিত হইতে হইত। একদা রাজস্ব বাকির দায়ে ঢাকাদক্ষিণ ও ঢাকাউত্তরের জমিদার বর্গ ধৃত ও শ্রীহট্টে নীত হইয়া অশেষ অত্যাচার ভোগ করিতে ছিলেন। ইহা দর্শন করিতে না পারিয়া বখশী ফয়জুল্লা পরদিবস দরবারে অনুপস্থিত হন। জিজ্ঞাসায় নবাব অবগত হন যে পরদুঃখ কাতর ফয়জুল্লা জমিদারদের তাড়না দর্শন করিতে অসমর্থ বলিয়া দরবারে অনুপস্থিত রহিয়াছেন। ইহাতে নবাব লজ্জিত হন ও জমিদারদিগকে অব্যাহতি দেন। জমিদারেরা এই উপকারী সাধুকে নিমন্ত্রণ করিয়া দেশে লইয়া গিয়াছিলেন। ফয়জুল্লা প্রথমে ঢাকাউত্তরে ও পরে ভাদেশ্বরে উপস্থিত হইয়া সেই স্থানের সৌন্দর্য্যে মোহিত হন এবং তথায় প্রায় একহাল পরিমিত ভূমি নিষ্কর দান করেন, সেই দান প্রাপ্ত ভূমে ফয়জুল্লা পুত্রদ্বয়ের সহিত বাস করেন, সেই স্থানই অধুনা "শেখপাড়া" নামে খ্যাত হইয়াছে। ফয়জুল্লার পুত্র শেখ গোলাম নবি ও শেখ গোলাম মোহাম্মদ । শেখ নবির আব্দুল গণি প্রভৃতি তিন পুত্র হয়; শেখ আব্দুল গণির আব্দুল মনাফ প্রভৃতি পাচ পুত্র ছিলেন; আব্দুল মনাফেরও আব্দুল হেকিম প্রভৃতি পাচ পুত্র জন্মেন, এই বিবরণ প্রদাতা শ্ৰীযুত আবদুল রহিম ইহারই পুত্র। সমাপ্তি শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগের প্রথম খণ্ড এই স্থানেই সমাপন করা হইল। উত্তর শ্রীহট্ট সবডিভিশনে পঞ্চ লক্ষাধিক অধিবাসী বাস করেন, হিন্দু মোসলমানে এই অধিবাসী মধ্যে কয়টি বংশের বিবরণ এস্থলে বিবৃত হইল? আমরা নিজ বংশ কাহিনী রক্ষার প্রতি কিরূপ মনোযোগী, এতদ্বারা তাহা বেশ বুঝা যায়। উত্তর শ্রীহট্টে কত প্রাচীন ও সন্ত্রান্ত বংশ পড়িয়া রহিয়াছে, কিন্তু তাহাদের গৌরব সূচক কাহিনী অল্পলোকেই স্মরণ রাখিয়াছেন, আমরা এই জন্যই কি বহুতর সন্ত্রান্ত বংশের বিবরণ পাই নাই? যে অল্প সংখ্যক ব্যক্তি বংশকথা পাঠাইয়াছেন, তন্মধ্যে কেহ কেহ শুধু বংশপত্রিকা দিয়াছেন, কেহ কেহ বা নামের লিষ্ট সহ দুই চারিটি কথা পঠাইয়াছেন, কিন্তু কীৰ্ত্তিকথা ব্যতীত এরূপ বংশ তালিকা বা নামের লিষ্ট ছাপাইলে সাধারণের তাহা সুপাঠ্য হইবে কেন? যাহারা পাঠাইয়াছেন, তাহাদের বংশ সন্ত্রান্ত হইতে পারে, বহু গুণবান পুরুষ সে বংশে জন্মগ্রহণ করিয়া থাকিতে পারেন, কিন্তু কোনও কীৰ্ত্তিকাহিনীর সহিতই তাহাদের নামের