পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম অধ্যায় : পঞ্চখণ্ডের ব্রাহ্মণগণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৩৫ মধুসূদনের কনিষ্ট পৌত্র রামকৃষ্ণ, তৎপুত্র কমলাকান্ত ভট্টাচাৰ্য্য হেড়ম্বেশ্বর হইতে কতক ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হন, তিনি এদেশ প্রচলিত নৌকাপূজা বিশেষ আড়ম্বরে সম্পন্ন করেন এবং এক মৃন্ময়ী রক্ষাকালী মূৰ্ত্তি স্থাপন করিয়া যশস্বী হন। ইহার জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রসিদ্ধ গোপীনাথ শিরোমণি তর্কশাস্ত্রে ও তন্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। তিনি সৰ্ব্বদা যোগশাস্ত্র আলোচনা করিতেন ও যোগ্যানুষ্ঠান নিরত ছিলেন। তিনি প্রণায়াম পূৰ্ব্বক জলের উপর ভাসমান থাকিতেন, জলের উপর দিয়া হাটিতে পারিতেন এবং “নেতি ধৌতি” যোগে নাড়ী শোধনাদি প্রক্রিয়া করিতেন। হেড়ম্বাধিপতি কৃষ্ণ চন্দ্র নারায়ণ তাহার গুণগ্রাম জ্ঞাত হইয়া তাঁহাকে সভাসদ নিযুক্ত করেন ও বহুতর নিষ্কর ভূমি প্রদান করেন।১৬ f গোপীনাথের ভ্রাতার নাম মহেশ্বর ভট্টাচাৰ্য্য। তিনি পূৰ্ব্বোক্ত মৃন্ময়ী মূৰ্ত্তির জন্য এক ইষ্টকমন্দির প্রস্তুত করেন এবং গ্রাম দুর্গম পথগুলিকে সুগম শড়কে পরিণত করিয়া সাধারণের হিত সাধন করেন। ইহার পুত্র অভয়ানাথ ন্যায়পঞ্চানন দেশে একটােল স্থাপন পূৰ্ব্বক বহু বিদ্যার্থীকে বিদ্যাদান করেন। পণ্ডিত শ্রীযুক্ত সূৰ্য্যকুমার তর্কসরস্বতী মহাশয় উক্ত গোপীনাথেরই সুযোগ্য পুত্র। মধুসূদন কাহিনী তিনিই আমাদের নিকট প্রেরণে উপকৃত করিয়াছেন। মধুসূদনের জ্যেষ্ঠ পৌত্রের নাম গঙ্গাধর, তাহার রূপেশ্বর ও হরিকান্ত নামে দুই পুত্র ছিল। তন্মধ্যে রূপেশ্বরের পৌত্রের নাম রমানাথ তর্কসিদ্ধান্ত । ইহার টোলে ইটার প্রসিদ্ধ পণ্ডিত রাজ গোবিন্দ সাৰ্ব্বভৌম প্রভৃতি অধ্যায়ন করিয়াছিলেন; মুদ্রিত বিধবা বিবাহের চরম বিচার প্রভৃতি বহুগ্ৰন্থ প্রণেতা খাসা টোলের অধ্যাপক পণ্ডিত রামনাথ বিদ্যারত্ন ইহারই পুত্র। তাহার প্রেরিত বিবরণী অবলম্বনে পরাশর কৃষ্ণাত্রেয় প্রভৃতি গোত্রীয়গণের বিষয় এস্থলে সন্নিবেশিত হইয়াছে। তাহারই সুযোগ্য পুত্র শ্ৰীযুত রজনী নাথ ভট্টাচাৰ্য্য হইতে আমরা স্বর্ণকৌশিক কথা প্রাপ্ত হইয়াছি। কাত্যায়নাদি গোত্রীয়গণের কথা পঞ্চখণ্ডের কাত্যায়ন ও ভরদ্বাজ গোত্রীয় সাম্প্রদায়িক ব্রাহ্মণগণের বিস্তুত বিবরণ প্রাপ্ত দ্ধিপ্রহর অতীত হইয়া গেল, মধুসূদনের চিত্ত চঞ্চল । হায়, তবে কি সে স্বাভিলষিক সুস্বপ্ন সফল হইবে না? ইহা কি চিত্তের আত্মবঞ্চনা মাত্র? না তাহা নহে; সাংসারিক আবিলতা শূন্য নিৰ্ম্মলান্তঃকরণ ভক্তের চিত্তে সত্যের ছায়াই যথাযথ প্রতিফলিত হইয়া থাকে। ভক্তের স্থির চিত্তের সে স্বপ্ন বিফল হইবে কেন? অকস্মাৎ বাকশক্তি-বিহীন এক কুষ্ঠরোগ সন্ন্যাসী দেবালয়ের সম্মুখে আসিয়া দাড়াইলেন; সন্ন্যাসী মুখব্যাদান করিয়া দাড়াইয়া রহিলেন । মধুসূদন তখন ধ্যান নিমগ্ন। তিনি ইহাকেই জগন্নাথ বলিয়া ধ্যানে অনুভব করিলেন ও ধ্যান ভঙ্গে সংগৃহীত ভোজ্য দ্রব্যাদি ভক্তি ভরে তদীয় ব্যাদিত বদন-গহবরে অর্পণ করিতে লাগিলেন। কিন্তু সংগৃহীত সমস্ত গলাধকরণান্তে সে ব্যাদিত বদন সঙ্কুচিত হইল না! নিরূপায় হইয়া মধুসূদন তখন দেবগৃহে সহিত জল কলস মুখে ঢালিয়া দিলেন। তাহাতে ভোজনের অভিপ্রায় নিবৃত্ত হইল না, বদন পূৰ্ব্ববৎই ব্যাদিত রহিল! মধুসূদন আর দিবেন? অগত্যা তিনি মাকে ডাকিলেন ও ঘরে যাহা কিছু খাদ্য দ্রব্য আছে, আনিয়া দিতে বলিলেন; অমনি সে মৃত্তি লুক্কায়িত হইল । মধুসূদন বিষাদিত হইয়া ধরাবলুষ্ঠিত হইতে লাগিলেন, এইরূপে দিব৷ অতীত হইল রাত্রে কিঞ্চিত নিদ্ৰাকর্ষণ হইলে, স্বপ্নে পূৰ্ব্ববৎ তিনি দেব দর্শন পাইলেন। জগন্নাথ তাহাকে সান্তনা দান করিলেন।" বলিলেন-তোমার স্বহস্তে আমি আহার করিয়াছি। তোমার আমি দুঃখ কি? তোমার বংশে কেহ ক্ষেত্রধামে না গেলেও আমি সন্তুষ্ট থাকিব, তোমার সন্তোষার্থ প্রতিজ্ঞা করিলাম।" আজ পর্য্যন্ত এ বংশীয় কেহ শ্ৰীক্ষেত্র যান নাই। ১৬. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশের উপসংহারাধ্যায়ে এই ভূদান সনন্দ উদ্ধৃত হইয়াছে