পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড অধিকার করিতে সমর্থ হন ও সেই স্থানেই বসতি স্থাপন করেন। কুমুদানন্দের জিতামনু ও জিতামিত্র নামে দুই পুত্র হয়। তন্মধ্যে জিতামনুরি পুত্র উমাকান্ত এবং জিতামিত্রের পুত্র রাজেন্দ্র চক্রবত্তী। অতি পরবর্তী কালে ইহাদের বংশে যথাক্রমে পুরকায়স্থ চৌধুরী উপাধি ধারণ করিয়াছেন। যাদবানন্দের দুইজন পৌত্রের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য; একজনের নাম কমল নারায়ণ, অপর আগমবাগীশ বলিয়া খ্যাত । আগমবাগীশ এই বংশের প্রদীপ স্বরূপ ছিলেন, তিনিই প্রসিদ্ধ হাটকেশ্বর শিব জয়ন্তীয়া হইতে সেনগ্রামে আনিয়া স্থাপন করেন। আগমবাগীশ এই বংশের প্রদীপ স্বরূপ ছিলেন, তিনিই প্রসিদ্ধ হাটকেশ্বরের বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১ম ভাগ ৯ম অধ্যায়ে বর্ণিত হইয়াছে। আগমবাগীশ জয়ন্তীয়ারাজ জয়নারায়ণের (খৃঃ ১৭০৮-১৭৩১) সমসাময়িক ছিলেন। জিতামনুরি বংশে জগন্নাথ তর্কচূড়ামণি মুর্শিদাবাদের দেওয়ান খানার সৰ্ব্বোচ পদে ছিলেন। তিনি কনিষ্ঠ গঙ্গাচরণের নামে একটি নিষ্কর ব্রহ্মত্র মঞ্জুর করাইয়া নেওয়াইয়া ছিলেন।২ তর্কচূড়ামণির পুত্র শিবনারায়ণ শ্রীহট্টে পাটওয়ারি নিযুক্ত হন। ইনি আখালিয়াবাসী নিজ গুরু করুণাময় ভট্টাচাৰ্য্য দ্বারা এক পঞ্চবটী নিৰ্ম্মাণ পূৰ্ব্বক মহাকাল ভৈরব প্রতিষ্ঠা করাইয়াছিলেন। উক্ত পঞ্চবটীস্থ বকুলবৃক্ষে অদ্যপি ভৈরবের পূজা হইয়া থাকে। এই বংশীয় বিশ্বেশ্বর ও রাজেন্দ্র চক্রবত্তীর নামীয় দুইটি তালুক আছে। শিব নারায়ণের প্রপৌত্র শ্রীযুক্ত দীনেশচন্দ্র পুরকায়স্থ হইতে এ বিবরণী প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। এই বংশীয় সুরানন্দ ভট্টাচাৰ্য্য এক প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন, নবাব আবুল হুসেন বাহাদুর এক সনন্দে (নং ৪৫৪) তাহাকে সেনগ্রামে তিন কেদার ভূমি ব্ৰহ্মত্র দেন। ১১৬১ সালে তাহার মৃত্যু হইলে ঐ ভূমি তৎপুত্র রমাকান্তের "তছরূপে" থাকে। সেনগ্রামের সেনদের দানপত্র হইতে জানা যায় যে, গোবিন্দ চক্রবত্তী ও রঘুনন্দন চক্রবর্তী নামে তাহার দুই ভ্রাতা ছিলেন, তাহারা দেড়কুবলা ভূমি দেবত্র প্রাপ্ত হন; তাহদের পুত্রাদি নাই, তাহাদের মৃত্যুর পর সুরানন্দ উক্তভূমি প্রাপ্ত হন।৩ জগন্নাথ স্বয়ং স্বদেশে, নবাব এক্রামউল্লা খা বাহাদুর হইতে কতক ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হন, ইহাব নিদর্শন শ্রীহট্টের কালেক্টরীর কাগজে আছে । দানপত্র, যথা (অবিকল)ঃ “ইয়াদকিদ শ্রীগোবিন্দ রাম চক্রবৰ্ত্তি ও শ্রীরঘুনন্দন চক্রবৰ্ত্তি সাদাসয়েযুলিখিতং শ্রীপরগণা সেনগ্রামের চৌধুরী ও পুরকাইস্ত স্বগীয় পত্র মিদং কাৰ্য্যঞ্চ আগে আমার পরগণা মজকুব ময়াজি ১০ দেড় কুবলা জমিন খারিজ জমা জঙ্গলা শ্রীশ্রী স্বগীয় ++ পূজা ও তুমার ভরনপুসনব কারণ মকরর আছে আমরার সেই ময়াজি মকজুর মহাফিক তপছিল আবাদ আবাদানা করিয়া শ্ৰীশ্ৰী স্বগীয় সেবা করিয়া পুত্র পৌত্র ক্রমে ভুগ করহ আমরায় প্রকাশ সদর জব্দ জমাবন্দি হৈতে যাহার চিঠা সামিল লেখাইয়া দিব এতদৰ্থে ব্ৰহ্মউত্তর ও দেবউত্তর পত্র লেখিয়া দিলাম ইতি সন ১১০৩ সাল মাহে ৫ বৈশাখ।" দাতার নাম-“সৰ্ব্বানন্দ সেন, শীবরাম সেন, ধনরাম সেন, যাদবরাম দেব, মহমুদ ছালে আসাদ খা ।“ এই দানপত্র কালেক্টরী হইতে সংগৃহীত, ইহার নীচে নিম্নলিখিত মন্তব্যলিপি লিখিত আছেঃ“প্রাপ্ত কাগজ গোবিন্দরাম চক্রবর্তী ও রঘুনন্দন চক্রবর্তী সাং সেনগ্রাম । ইহারা সজীব থাকিতে সহদব ভ্রাত সুরানন্দ ভট্টাচার্যের তছরূপ ছিল, ১১২০ সালে রঘুনন্দন ও ১১৪৭ সালে গোবিন্দরাম চক্রবত্তীর মৃত্যু-উহারা নিঃসন্তান থাকায় সুরানন্দ ভট্টাচার্য্যের তছরূপ ছিল সন ১১৬১ সালে সুরানন্দর মৃত্যুপৰ তান পুত্র রামাকান্ত ভট্টাচার্য্যের তছরূপ ছিল সন ১১৯০ সালে রমাকান্তর মৃত্যুপর উহান পুত্র রতিকান্ত শৰ্ম্মাব তছরূপ আছে।" উক্ত রতিকাস্তের পুত্র কাশীনাথ ভট্টাচার্য তৎপুত্র কালীচন্দ্র নিঃসস্তান থাকায় তদীয় পিতৃব্য পুত্র রজনীকান্ত প্রভৃতি বৰ্ত্তমানে বর্ণিত ভূমির স্বত্ববান হইয়াছেন।