পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৮২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড তিনি আসিবেন না বলিয়াই প্রতিবেশীবর্গের ধারণা জন্মে। এই ধারণা ক্রমে লোকের মনে দৃঢ়তর হইয়া যায়, তাহাতে দেশে তাহার যে জমি ভূমি ছিল, পঞ্চখণ্ডের জনৈক জমিদার বলে তাহার কিয়দং আত্মসাৎ করেন। সত্যরামের পুত্র কুশলরাম তখন বালক মাত্র, তিনি স্বয়ং কোন প্রতিকার করিতে না পারিয়া কাছাড়ে গিয়া পিতার নিকট একথা বলিলেন। বাড়ীতে সত্যরামের কয়েকটি বলবান পাইক থাকা সত্ত্বেও পুত্র কোন প্রতিকার না করাতে তেজস্বী সত্যরাম পুত্রকে অপদার্থ মনে করিয়া অত্যন্ত ভৎসনা করেন, তদ্রুপ অযোগ্য পুত্র থাকা না থাকা সমান, ইত্যাকার বাক্যে বালককে প্রপীড়িত করেন। বালক পিতৃবাক্যে জর্জরিত হইয়া, কাছাড় ত্যাগ করিল, কিন্তু আর বাড়ীতে গেল না, প্রতাপগড়ে আসিয়া উপস্থিত হইল। প্রতাপগড়ে তখন নবাব রাধারামের প্রচণ্ড প্রতাপ ॥৩০ রাধারাম একজন দক্ষ কৰ্ম্মচারীর সন্ধান করিতেছিলেন, কাছাড়ের দেওয়ান বা মন্ত্রীপুত্রকে পাইয়া তিনি সাগ্রহে আশ্রয় দিলেন, জমিবাড়ী দান করিয়া আপন দফতর খানার “সরকার” বা প্রধান লেখক নিযুক্ত করিলেন। কাছাড়ের মন্ত্রীপুত্রকে আশ্রয় দান নবাব রাধারামের গৃঢ় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক ছিল সন্দেহ নাই। কুশলরাম এই স্থানেই বিবাহ করিয়া বাস করিতে লাগিলেন। কুশলরামের জননী পুত্রের বিরহে অতি কাতর হইয়া নানাস্থানে সন্ধান করিতে জানিলেন যে, সে প্রতাপগড়ের “নবাবের” আশ্রয়ে আছে; তখন স্নেহ-কাতরা জননী পুত্রের কাছে আগমন করেন। সত্যরামও একমাত্র পুত্রের উপর চিরদিন ক্রোধ রক্ষা করিতে পারেন নাই, বৃদ্ধ বয়সে তাহার ক্রোধের উপশম হইয়াছিল। কুশলরামের সাহেবরাম ও হরেকৃষ্ণ নামে দুই পুত্র হয়, তন্মধ্যে সাহেবরাম পিতৃপদ প্রাপ্ত হন, দশসনা বন্দোবস্তের সময়ে ইহার নামে প্রতাপগড়ের একটি তালুকের নামকরণ হয়। হরেকৃষ্ণ জ্যোতিষ শাস্ত্রালোচনায় যশস্বী হন। ইহাদের উভয়েরই বংশধরবর্গ বৰ্ত্তমান আছেন। সাহেবরামের পুত্র কৃষ্ণ চরণ, তৎপুত্র শ্রীযুক্ত মহেন্দ্র চরণ জীবিত আছেন। দুইটি বংশ কথা এরূপ দৃষ্টান্তের অভাব নাই যে, কোন কোন পরিবারে বলশালী লোকের সংখ্যা অধিক, কোন কোন পরিবার বা দীর্ঘজীবী পুরুষ-বহুল। এস্থলে যে দুটি বংশ কথা লিখিত হইতেছে, প্রায় একই সময়ে একই স্থানে সে বংশদ্বয়ের প্রতিষ্ঠা হইলেও একটি বংশের পুরুষানুক্রমে প্রায় সকলেই অমিত বলশালী ছিল, অদ্যাপি তাহাদের বলের কথা গল্পের ন্যায় শ্রুত হওয়া যায়। উভয় বংশেরই মূল দুইজন বিদেশগত বিপদাপন্ন ব্রাহ্মণ ছিলেন, পরে গ্রহবৈগুণ্যে তাহারা জাতিচু্যত হইয়া পড়েন। উভয় বংশেই বৰ্ত্তমান ৭/৮ পুরুষ চলিতেছে। এই দুই বংশের একটির আদিপুরুষের নাম বলুনাথ, ইনি অতিশয় বলবান ও উদ্ধত ব্যক্তি ছিলেন এবং হাঙ্গামার অপরাধে কারারুদ্ধ হন । অসহ্য কারা-যন্ত্রণায় অধৈর্য্য হইয়া, শৃঙ্খলাবদ্ধাবস্থাতেই কারাগারের বেড়া ভগ্ন করতঃ পলায়ন করেন। সারারাত্র হাটিয়া প্রভাতে এক নদী-তীরে তিনি উপনীত হন; তিনি তখনও শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিলেন বলিয়া সন্তরণে নদী উত্তরণের উপায় ছিল না। সে জঙ্গলময় স্থানে নৌকাদিও ছিল না, তাই তিনি চিন্তাকুলিত চিত্তে কিছুকাল অবস্থিতি করেন; এমন সময় পরপারে লোকের কথাবাৰ্ত্তা শুনিতে পাইয়া তাহাদের সাহায্য প্রার্থী হন। পরপারস্থিত যোগী৩১ জাতীয় সেই ব্যক্তিবর্গ বনান্তরাল হইতে উত্তর করিল ৩০. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ১১শ অধ্যায় দেখ। ৩১. আগম সংহিতাদি আলোচনা করিলে এই জাতির যোগী নমোৎপত্তির প্রকৃত তথ্য অবগত হওয়া যায়। অতএব “যুগী” এই প্রচলিত শব্দের পরিবর্তে “যোগী” শব্দ ব্যবহৃত হইবে।