পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম অধ্যায় : মোসলমান বংশ বর্ণন শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৮৭ হন। এই জায়গীর ভূমে একটি মসজিদ প্রস্তুতের জন্য দিল্লী হইতে তৎকর্তৃক কয়েকটি রাজমিন্ত্রি প্রেরিত হয়, তাহারা এই স্থানে আসিয়া আলমের বৈভবের অল্পতা দৃষ্টে অবজ্ঞার ভাবে বলিয়া উঠে যে, "মজলিস মসজিদের মাল মসল্লাই মিলাইয়া উঠিতে পারিবেন না।" সামান্য লোকের মুখে এই অবজ্ঞাবাণী মজলিস আলম সহিতে পারিলেন না, তৎক্ষণাৎ তাহাদিগকে বধ করিলেন। এ সংবাদ দিল্লীতে পৌছিলে অপরাধীকে ধৃত করিতে আদেশ হয় এবং তজ্জন্য “আসোয়ার” প্রেরিত হয়। মজলিস ভয়ে আত্মহত্যা করেন। তাহার পুত্রই ফারম পাশার চৌধুরীদের আদি পুরুষ। ফারমপাশাতে এখনও কয়েকটি সুবৃহৎ দীর্ঘিকা মজলিসের কীৰ্ত্তি প্রচার করিতেছে; ঐ স্থানটী “দীঘরপার” নামে খ্যাত হইয়াছে। এই দীঘীগুলির মধ্যে “ধলিদীঘী" বৃহত্তম, ইহার পশ্চিম তীরে আলমের আবাস বাটী ছিল; দীঘীর সুবৃহৎ বাঁধাঘাটের চিহ্ন এখনও লক্ষিত হয়। আর একটি বৃহৎ দীঘীর নাম “বালিদীঘী।” ইহার উত্তর পারে হিন্দুপল্লী ছিল, ১৫/২০ বৎসর যাবৎ তাহা উঠিয়া গিয়াছে। আলমের দৌহিত্রের নাম শাহ মসউদ, তৎপুত্র মুজাফল খা, ইনি ডেীয়াদির চৌধুরাই সনন্দ প্রাপ্ত হন। ইহার পুত্রের নাম মহবৎ খা । তৎপুত্র কর মোহাম্মদ ও দিনমোহাম্মদ। ১১২৬ সালের লিখিত বাটওয়ারা পত্রে দৃষ্ট হয় যে, এই দুই ভ্রাতার মধ্যে সম্পত্তি বিভাগত হয়। কর মোহাম্মদের পুত্র মোহাম্মদ ফৈজ প্রভৃতি, ফৈজ-তনয় মোহম্মদ হাদি; ইহার পুত্র গোলাম নজব, ইহার পৌত্ৰাদি জীবিত আছেন। এই বংশীয়গণ বহুকাল পূৰ্ব্ব হইতেই ফারমপাশা পরিত্যাগ পূৰ্ব্বক ভগীরখলা নামক স্থান বাসী । পঞ্চখণ্ড কালার চৌধুরী বং শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগে "নবাবি আমলে দেশের অবস্থা" প্রকরণে পঞ্চখণ্ডে সম্পাদিত সংস্কৃত ভাষায় লিখিত এক খানা দলিল মুদ্রিত হইয়াছে। উহাতে লিখিত আছে যে ১০৯২ সালে সম্রাট আরঙ্গজেবের রাজত্বকালে, যখন শ্রীহট্টে নবাব আব্দুর হেম খা বাহাদুরের শাসন ছিল, পঞ্চখণ্ডে তখন শাহবাজ খা নামে এক ব্যক্তি জমিদার ছিলেন। ইহার জমিদারী পঞ্চখণ্ড হইতে খারিজ হইয়া শাহবাজপুর নামে ভিন্ন পরগণায় পরিণত হয়; তৎপূৰ্ব্বে সে স্থান কাউয়াকোণা নামে খ্যাত (ও পঞ্চখণ্ডের এলাকাধীনে) ছিল। এই শাহবাজ খা “জাংদার” বংশীয় ছিলেন। একটি প্রবাদ বাক্য আছেঃ– “পাল, প্রচণ্ড; জাংদার। এই তিন মিরাশদার ।" অর্থাৎ পঞ্চখণ্ডে পালবংশীয়গণ, প্রচণ্ড খার সন্তানবর্গ এবং জাংদার বংশের পরবত্তী পুরুষ বগই প্রধান মিরাশদার, অন্য কেহ নহে। পূৰ্ব্ববৰ্ত্ত ৩য় অধ্যায়ে পাল বংশের কথা প্রসঙ্গে বলা গিয়াছে যে, উক্ত বংশে প্রায় চতুর্দশ পুরুষ পূৰ্ব্বে যাদবানন্দ পালের পাচ পুত্রের মধ্যে সৰ্ব্ব কনিষ্ঠ প্রতাপ চন্দ্র কোন কারণে মোসলমান ধৰ্ম্ম অবলম্বন করেন; ইনি একটি বৃহৎ দীঘ খনন করাইয়া ছিলেন ও অতি প্রতাপশালী ব্যক্তি ছিলেন । মোসলমান ধৰ্ম্ম অবলম্বন করিয়া তিনি প্রচণ্ড খা আখ্যায় খ্যাত হইয়াছিলেন। তাহার বাসস্থান তদীয় নামানুসারে “বাঘপ্রচণ্ড খা মৌজা" বলিয়া আখ্যাত হয়।