পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম অধ্যায় : মোসলমান বংশ বর্ণন শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৮৯ রজাকপুরের জায়গীরদার বংশ মোগল বাদশাহদের সময়ে শ্রীহট্ট হইতে দিল্লীতে খোজা প্রেরিত হইত; আইন-ই-আকবরি গ্রন্থেও ইহা লিখিত আছে। পূৰ্ব্বে শ্রীহট্টের ঢাকা উত্তর পরগণায় লুৎফউল্লা খা নামে এক সন্ত্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন, সম্রাট আরঙ্গজেবের সময়ে তাহার বংশে এনায়েত খাঁ নামে এক নপুংসকের জন্ম হয় । শ্রীহট্টের নবাব এই সংবাদ পাইয়া এনায়েত খাকে দিল্লীতে প্রেরণ করেন। দিল্লীতে তিনি সম্রাট মহলের তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হন। এনায়েতের শাহবাজ খা ও জামিল খা নামে দুই ভ্রাতা ছিলেন, তাহাদের পুত্রের নাম যথাক্রমে নওয়া খা ও মোহাম্মদ ইউনস। কিছুদিন পরে এই উভয় ভ্রাতা পিতৃব্য-দর্শনে দিল্লী উপস্থিত হইলে, এনায়েত খা নওয়া খাকে রাজসরকার হইতে বহু অর্থ দেওয়াইলেন ও বাড়ীতে গিয়া একটি মসজিদ এবং একটি পুষ্করিণী দেওয়াইতে অনুরোধ করিলেন। তাহার অনুরোধ রক্ষিত হইয়াছিল, নওয়া খা বাড়ীতে গিয়া মসজিদ ও পুষ্করিণী প্রস্তুত করিয়াছিলেন। শ্রীহট্ট কাছাড় ট্রাঙ্ক রোডের (১৫ মাইলের) নিকট উক্ত প্রাচীন মসজিদ এখনও পথিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া থাকে । ইউনস দিল্লীতে থাকিয়া কোরাণ অধ্যয়ন করেন ও তাহাতে বিশেষ অভিজ্ঞতা লাভ করেন। খুল্লতাতের যত্নে ইহা সম্রাটের কর্ণগোচর হইলে, তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে “হাফেজ" উপাধির সহিত ঢাকাউত্তর পরগণায় কতক জায়গীর ভূমি দান করেন। তদবধি তদ্বংশীয়গণ “জায়গীরদার বংশ" বলিয়া খ্যাতি লাভ করিয়াছেন । ইউনস মক্কায় গিয়া হাজি উপাধি প্রাপ্ত হন । ইহার পুত্রের নাম মোহাম্মদ শরিফ। তৎপুত্র মোহাম্মদ রজাক ও মোহাম্মদ ওমি। রজাকের নামে ঢাকাউত্তরের রজাকপুর মৌজার নামকরণ হয়। ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর দেওয়ানী গ্রহণের সময় ওমি জরাজীর্ণ বৃদ্ধ ছিলেন, তিনি তৎকালীন ভূমিতে কিয়দংশে করধাৰ্য হইয়া তাহ সাতটি পৃথক মহালে পরিণত হয়। মোহাম্মদ রজার পুত্রের নাম মোহাম্মদ বাসির, তাহার মোহাম্মদ আসগর প্রভৃতি তিন পুত্র হয়। ইহাদের সময়ে লাখেরাজ ভূমির জরিপ হইয়া যখন বন্দোবস্ত আরম্ভ হয়; তখন তাহারা আপনাদের জায়গীর ভূমের অবশিষ্ট অংশ “ইউনস জিম্বে মোহাম্মদ ওমি" নামে এক ছেগা তালুকে বন্দোবস্ত করিয়া রাখেন। মোহাম্মদ আসগরের পুত্র আরজদ আলী বিদ্যোৎসাহী লোক ছিলেন, তিনি ১৮৯২ খৃষ্টাব্দে রজাকপুরে লোকাল বোর্ডের সাহায্যে একটি মধ্যবঙ্গ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেন । তাহার মধ্যম পুত্র শ্ৰীযুত মসজ্জিদ আলী জায়গীরদার এই বংশ বিবরণ প্রেরণ করিয়াছেন । সমাপ্ত করিমগঞ্জ সবডিভিশনের যে সামান্য বিবরণ পাওয়া গিয়াছে, তাহা এই স্থলেই পরিসমাপ্ত হইল । প্রথমেই সবডিভিশনের অবস্থান ও নামাদি কীৰ্ত্তন পূৰ্ব্বক প্রাচীন দেব বিগ্রহ বাসুদেব ও তাহার প্রতিষ্ঠাতা পূজাধিকারী ব্রাহ্মণ বংশের কথা সংক্ষেপে বলা গিয়াছে। তৎপর পরাশর গোত্রীয় সাম্প্রদায়িক বিপ্রবর্গের কথা প্রসঙ্গে অষ্টাবিংশতি প্রশীপ প্রণেতা মহেশ্বর ন্যায়ালঙ্কারের পরিচয় প্রদত্ত হইয়াছে। তাহার পর সাম্প্রদায়িক কৃষ্ণাত্রেয় ও স্বর্ণকৌশিকের কথা:–তৎপ্রসঙ্গে