পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড জগদানন্দের বংশাখ্যান জগদানন্দ সেই স্থানেই জীবনাতিবাহিত করিয়াছিলেন, নানা বিষয়ে অসুবিধা সত্ত্বেও তিনি ডলায় প্রত্যাবৰ্ত্তন করেন নাই। কিন্তু জগদানন্দ২ পরলোক গমন করিলে পর তাহার পুত্র রঘুনাথ বিশারদ ডলায় চলিয়া আসেন। রঘুনাথ বিশারদ খ্যাতনামা পণ্ডিত ছিলেন। নবাব লুৎফউল্লা খা বাহাদুর হইতে ১০৭০ বাংঙ্গলায় তিনি কতক ভূমি দান প্রাপ্ত হন। রঘুনাথ বিশারদ নবাব মহাফতা খাঁ বাহাদুর হইতে ১০৭৭ বাংঙ্গলায় আরও সাদ্ধ ত্রিহল ভূমি (মদতমাস স্বরূপ) দান প্রাপ্ত হইয়া ছিলেন ॥৩ রঘুনাথের পুত্রের নাম রতিকান্ত তর্কালঙ্কার, তর্কালঙ্কার একজন কৃতী পুরুষ ছিলেন, নবাব লুৎফউল্লা খা প্রদত্ত সনন্দে (নং ৬৮) আলীনগর হইতে তিনি ৫॥২ ॥৪ ভূমি (মদতমাস স্বরূপ) প্রাপ্ত হন । এই সনন্দে প্রাপকের বাসস্থান আলীনগর লিখিত থাকায় অনুমিত হয় যে তিনি কিয়ৎ কালের জন্য তথায় গমন করিয়া থাকতে পারেন। তর্কলঙ্কারের মৃত্যুর পর উক্তভূমি তৎপুত্র কৃষ্ণরাম ন্যায়ালঙ্কারের তছরূপ" থাকে।৪ কৃষ্ণরাম ন্যায়লঙ্কার এক সময়ে কামরূপ সিদ্ধপীঠে গমন করিয়াছিলেন, তথায় কিছুদিন অবস্থিতি করিয়া তিনি একাধিক্রমে অষ্টোত্তরশত পুরশ্চরণ করেন, কিন্তু তাহাতে সফল মনোরথ হইতে পারেন নাই। কৃষ্ণরামের পুত্রের নাম ঘনশ্যাম । মৃত্যুর পূৰ্ব্বে কৃষ্ণরাম আপন গুরুর নিকটে একটি মন্ত্রের উল্লেখ করিয়া সেই মন্ত্রে বালক ঘনশ্যামকে দীক্ষিত করতে অনুরোধ করিয়াছিলেন, উপনয়ন উপলক্ষে উপস্থিতি হইয়া গুরুদেব সেই মন্ত্রেই ঘনশ্যামকে দীক্ষিত করেন । ঘনশ্যাম বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে পিতার ন্যায় কামরূপ গমন করিয়া সাধনে প্রভুত্ত হন ও অচিরেই সিদ্ধিলাভ করেন । ૨. বৈদিক পুরাবৃত্ত নামক এক কুল গ্রন্থের কল্পিতত্বে বিষয় শ্রীহট্টেল ইতিবৃত্তেব পূৰ্ব্বাংশে আলোচনা করা গিয়াছে; বলা গিয়াছে যে ঐ নামে কোন গ্রন্থের অস্তিত্ত্ব সাম্প্রদায়িকদের মধ্যে অনেকেই অস্বীকাব কবেন; তলে শ্রীহট্টে বৈদিক ব্রাহ্মণাগমন সম্বন্ধে কয়েকটা শ্লোক আমরা ডলা হইতে কাশ্যপ গোত্ৰীযেব যে বিবরণ পাইয়াছি তাহাতেও উহা জগদানন্দের রচিত বলিয়া উল্লেখিত হয় নাই । জগদানন্দকে রাজা সুবিদ নারাযণেব সমসাময়িক বলা হইয়াছে; ইহার সম্বন্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি হইতে নানারূপ বিভিন্ন বিবরণ আমরা প্রাপ্ত হইয়াছি; তাহা একে অন্যের বিসংবাদি, সে জন্য সে সকল সংশয়াহুক কথা ত্যাগ কবিতে আমরা বাধ্য হইয়াছি। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশে ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৪র্থ অধ্যায়ে উদাহরণ স্থলে রঘুনাথ বিশাৰদ নামীয় উক্ত দুখানা সনন্দের উল্লেখ কবা হইয়াছে । নবাব মহাফতা থা প্রদত্ত সনন্দ (নং ৪০) ইহারই প্রাপ্তি সন্দেহ নাই । কিন্তু নবাব লুৎউল্লা খা প্রদত্ত সনদে প্রাপকের ঠিকানা স্থলে “শমশের নগব” লিখিত আছে । সনন্দ দাতা উভয় নবাবই সম্রাট আরঙ্গজেবেল সমকালবৰ্ত্তী ছিলেন । ৪. শ্রীহট্টের কলেক্টরীতে সনদের যে সকল নকল বহি আছে, তাহাতে উক্ত সনদেব মস্তব্যে কৃষ্ণবামের মৃত্যুরপর ঘনশ্যাম ভট্টাচাৰ্য ঐ ভূমি “তছরূপ" করেন বলিয়া লিখিত আছে এবং তাহাতে জন আমুটি সাহেবের দস্তখত আছে। আমরা যে বিবরণী প্রাপ্ত হইয়াছি তাহাতে কৃষ্ণরামের উপাধি ন্যায় বাগীশ লিখিত হইয়াছে, সনন্দে “ন্যায়ালঙ্কার” উপাধি লিখিত । ৫. কথিত আছে কৃষ্ণবাম সিদ্ধি লাভে অকৃতকাৰ্য হইয়া নায়িকা সাধনে প্রবৃত্ত হন ঐ নায়িক একদা ভাবান্তরিত হইয়া বলিয়াছিল যে কৃষ্ণবাম পূৰ্ব্বজন্মে বুরুঙ্গায় জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন । নিত্য নৈমিত্তিক ক্রিয়াকাণ্ডে যে কুশময় ব্রাহ্মণ প্রস্তুত করা হয়, “ক্রিয়ান্তে" তিনি তাহা মুক্ত না করিয়া বিসৰ্জ্জন করাতে শত ব্ৰহ্মহত্যার পাতক তাহাকে আশ্রয় করিয়াছিল, তৎকৃত শত পুরশ্চরণে সেই পাতক সশালিত হইয়া অবশিষ্ট আটটি পুরশ্চরণ মাত্র পুণ্যজনক হইয়াছে । তাহার দ্বারা এ জন্মে আর কিছু হইবে না, তবে তাহাব পুত্র অনায়াসে সিদ্ধিলাভে সমর্থ হইবে। এই প্রত্যাদেশ কাহিনী কৃষ্ণরাম মৃত্যুর পূৰ্ব্বে স্বীয় গুরুর নিকটে মাত্র ব্যক্তি করিয়াছিলেন। ডলার কাশ্যপ গোত্রীয়গণ ইহাকেই “বৈদিক পুরাবৃত্ত" সংজ্ঞিত বিবরণ রচয়িতা করেন। ○.