পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড অৰ্জ্জুন বংশীয় রতিরাম এক বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন;২ তাহার চেষ্টাতেই তর্কালঙ্কার তদীয় পুরৌহিত্য স্বীকার করিয়াছিলেন। রতিরাম তাহাকে স্বীয় অধীন গ্রাম সমূহের "রাজপণ্ডিতি" বিদায় পাইবার ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছিলেন। রামদাস তর্কলঙ্কারের এক পৌত্রের নাম রাধাকান্ত বাচস্পতি; ইহার এক সংস্কৃত চতুষ্পাঠী ছিল, অনেক শিষ্য তাহাতে অধ্যয়ন করিত। তাহার পুত্রের নাম রাম রামভদ্র। ইটার প্রসিদ্ধ দেওয়ানের দীঘী খনন কালে রামভদ্র বালক মাত্র ছিলেন, রামভদ্র বালক হইলেও সমাগত পণ্ডিতদের সহিত শাস্ত্রচর্চায় সমর্থ হইয়াছিলেন। দেওয়ান শ্যামরায় তুষ্ট হইয়া তাহাকে তখন ১/২ কেদার ভূমি দান করেন। রামভদ্রের প্রণীত সাববেদীয় রুদ্রাধ্যায়ের এক টীকা আছে।৩ ইহার পত্নী সৰ্ব্বানী দেবী উত্তম লেখাপড়া জানিতেন, তিনি স্বীয় শিষ্য যাদব রাম অৰ্জ্জুনকে একদিন একটি কবিতা প্রেরণ করেন, তাহা এইঃ “জিতধূম প্রসেকায় জিত ব্যজন বায়বে। এই শ্লোক প্রাপ্তে শিষ্য পরদিন একটি মশারি আনিয়া সৰ্ব্বানী দেবীকে প্রদান করেন । রামভদ্র ও তদ্বংশীয় হরিহরের যুক্ত নামে ১১৪নং রাম-হরি সংজ্ঞক একটি তালুক আছে, হরিহরের পিতামহ রাজেন্দ্রের নামে তত্ৰত্য ৬৪৩নং তালুকের নামোৎপত্তি হয়। এই বংশীয় রাজ বল্লভ একটি দীঘ খনন করাইয়া ছিলেন, “রাজ পুকুর” নামে উহা খ্যাত আছে। এ বংশীয় কৃষ্ণ কিঙ্কর ও কামদেব প্রভৃতি তত্ৰত কালভৈরব দেবতার নামে তথায় "ভৈরবগঞ্জ” নামক বাজার স্থাপন করেন । এ বংশে যাহারা উপাধি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, শুনা যায় যে তাহাদের প্রত্যেকেরই টোল ছিল। এ বংশীয় শ্ৰীযুত রজনী কুমার কাব্যতীর্থ বিদ্যারঞ্জন হইতে আমরা এই বংশবিবরণ ও বংশ তালিকা এবং অৰ্জ্জুন বংশের তালিকা প্রাপ্ত হইয়াছি। ঘৃত কৌশিক গোত্রীয় ব্রাহ্মণগণ ইটার ক্ষেম সহস্র গ্রামে ঘৃত কৌশিক গোত্রীয় এক ব্রাহ্মণ বংশের বাস। ইহাদের শুধু নামের তালিকা মাত্র আমরা পাইয়াছি । এই গোত্রীয় রামভদ্ৰ কান্যকুজ হইতে আসিয়া কাশীতে বাস করেন বলিয়া কথিত আছে । তাহার পুত্র বলরাম কামরূপস্থ পীঠস্থান দর্শন পূৰ্ব্বক শ্রীহট্টের অন্তর্গত ক্ষেম সহস্ৰে আসিয়া বাস করেন; ইহার প্রপৌত্রের নাম বলগোবিন্দ। বলগোবিন্দের প্রপৌত্র হলধর, হলধরের পুত্র গদাধর তর্কালঙ্কার। ইহার প্রপৌত্রের নাম গোপীরাম । গোপীরামের চারিজন প্রপৌত্র ছিলেন, তন্মধ্যে রতিরাম জ্যেষ্ঠ; এবং “সৰ্ব্বশাস্ত্রার্থ তত্ত্ববিৎ" আত্মরাম বাচস্পতি তৃতীয়। রতিরাম চক্ৰবৰ্ত্তী প্রকৃতই কৃতী ব্যক্তি ছিলেন। জনৈক নবাব হইতে ইটায় তিনি কতক ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হন। ঐ ভূমি অদ্যাপি তদ্বংশীয়গণের অধিকারে আছে। এই বংশীয় শ্ৰীযুত কালী চন্দ্র বিদ্যাবিনোদ স্বরচিত সংস্কৃত শ্লোকবন্দে আমাদিগকে ইহা লিখিয়া জানাইয়াছেন। আর একটি বংশ কথা ইটার বালিসহস্র গ্রামে ত্রিপ্রবরান্বিত ঘৃত কৌশিক গোত্রীয় আর এক বংশ ব্রাহ্মণ আছেন । ইহারাও আপনাদিগকে কান্য কুজাগত বলিয়া পরিচয় দেন । এই বংশীয় শিবজী ঠাকুর ২. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৯ম অধ্যায়ে রতিরামের কথা বর্ণিত হইযাছে এবং পরবর্তী ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে তদ্বংশের অবশিষ্ট কথা কীৰ্ত্তিত হইলে । ৩. উক্ত টীকার ১ম শ্লোকঃ-“রুদ্রং প্ৰণম্য সাষ্টাঙ্গং শ্রীরামরুদ্ৰ শৰ্ম্মণা।”