পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম অধ্যায় : আরও কতিপয় বংশ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২২৫ যবনোৎপীড়নে সপরিবারে দেশত্যাগ পূৰ্ব্বক গঙ্গাতীরে আসিয়া অবস্থিতি করেন, তথায় তাহার মৃত্যু হয়। তাহার ভ্রাতা রমাপতি সেই স্থানেই বাস করেন। শিবজীর পুত্র শ্রীকান্ত, তৎপুত্র পুরুষোত্তম, ইহার পুত্রের নাম হরিহর ছিল । হরিহর নিজ পুত্র সহ জ্ঞাতি বর্গের উদ্দেশে গমন পূৰ্ব্বক তাহাদের সহিত সাক্ষাৎ ক্রমে পরিচিত হন। হরিহরের পুত্র দয়াকুল সেই স্থানেই বিদ্যাশিক্ষা করিয়া “ত্রিবেদী” খ্যাতি লাভ করিয়াছিলেন। ইহার পরে পিতাপুত্রে দেশে আসার মানসে যাত্রা করেন। পথে হরিহরের মৃত্যু হয়। দয়াকুলের পুত্রের নাম রামেশ্বর, তৎপুত্র বিশ্বেশ্বর, তাহার পুত্র পিতাম্বর, পিতাম্বর বিদ্যাবিশারদ ছিলেন এবং তিনি “পণ্ডিত” নামে খ্যাত হন। ইহার পুত্র দিগম্বর পণ্ডিতের নামে ত্রিপুরাধিপতি, মাণিক্য ভাণ্ডার নামক স্থানের উপস্বত্ব হইতে একটি বৃত্তি অবধারিত করিয়া দেন। দিগম্বরের বাসস্থান “দিগম্বরপুর" বলিয়া খ্যাত হয়। দিগম্বরের পুত্র লক্ষীকান্ত পণ্ডিত দিগম্বরপুরের একক্রোশ দূরে বালি সহস্র গ্রামে আগমন করেন ও সেই স্থানবাসী হন। ইহার জয়দেব, দেবচন্দ্র ও মণিরাম নামে তিন পুত্র হয়; তন্মধ্যে জয় দেবের পুত্র রমাকান্ত বিশারদ প্রভৃতি, মণিরামের কনিষ্ঠ পুত্র রাম নাথ ভ্রমণোপলক্ষে কান্যকুজে গমন করিয়াছিলেন, তথায় তিনি “শিরোমণি" উপাধি লাভ করেন, কিন্তু অচিরেই সন্ন্যাস ব্রত অবলম্বনে গজরাজ গিরে নাম ধারণে এদেশে আগমন করেন ও শিব মন্দিরাদি প্রস্তুত ক্রমে শিব প্রতিষ্ঠা করিয়া সাধন-নিবিষ্ট হন । ইহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা গোবিন্দ রাম ভট্টাচাৰ্য স্বাধীন ত্রিপুরার পূৰ্ব্বোক্ত বৃত্তি লাভ করেন; তাহার পুত্র কৃষ্ণচন্দ্রও আজীবন উক্ত বৃত্তিভোগ করেন। কৃষ্ণচন্দ্রের তিন পুত্র, ইহাদের নাম অনন্ত রাম, রাজকৃষ্ণ ও প্রাণকৃষ্ণ ন্যায় ভূষণ । অনন্ত রামের সময় স্বাধীন ত্রিপুরার বৃত্তি উঠিয়া গিয়াছিল, তাহার পুত্র রাজকৃষ্ণ উহা পুনঃপ্রাপ্ত হন। ত্রিপুরার “শ্রীগুরু আজ্ঞা” মোহরাঙ্কিত হইয়া ১২৬৫ ত্ৰিং (১২৬২ বাং) সনে ১৫ জ্যৈষ্ঠ তারিখে এই আজ্ঞাপত্র প্রদত্ত হয়। উক্ত রাজ কৃষ্ণের কনিষ্ঠ ভ্রাতা প্রাণকৃষ্ণ ন্যায় ভূষণের পুত্র শ্ৰীযুত কালী কুমার ভট্টাচাৰ্য এই বিবরণ প্রেরণ করিয়াছেন। পূতিমাস গোত্রীয় ব্রাহ্মণ ত্রিপপ্রবরান্বিত সামবেদীয় পূতিমাস গোত্রের ব্রাহ্মণ গণের বংশ সংখ্যা এতদঞ্চলে অধিক নহে। ইটার পূতিমাস গোত্রীয় ব্রাহ্মণগণ কোথা হইতে কি কারণে শ্রীহট্টে আগমন করেন, জানা যায় না; ইহারাও বালিসহস্র বাসী । এ বংশীয় প্রথমাগত ধনুৰ্দ্ধর পণ্ডিত হইতে এ বংশে বৰ্ত্তমান কাল পর্য্যন্ত ২৪/২৫ পুরুষ চলিতেছে। সুতরাং অনুমান করা যাইতে পারে যে মোসলমান বিপ্লব কালে উত্তর পশ্চিমাঞ্চল হইতে ধনুৰ্দ্ধর পণ্ডিত এদেশে আসিয়া থাকিবেন। ধনুৰ্দ্ধরের পুত্রের নাম বিদ্যাধর, তৎপুত্র-শ্রীধর; এই তিন জনের পণ্ডিত পদবি ছিল । শ্রীধরের পুত্রের নাম ব্যাস দেব, তৎপুত্র বশিষ্ঠ দেব, ইহার দ্বাদশ পৰ্য্যায় শুকদেব বিদ্যানিবাস নামক একজন পণ্ডিত ছিলেন, তাহার পৌত্র মহেশ রাম পঞ্চাননের নামে এই বংশ "মহেশ পঞ্চাননের বংশ" বলিয়া খ্যাত হইয়াছে। মহেশ রামের ৫ম পৰ্য্যায়ে তিলক বাচস্পতির উদ্ভব, ইহার জ্ঞাতিভ্রাতা রত্নবল্পভের প্রপৌত্র শ্ৰীযুক্ত জয়চন্দ্র তর্কভূষণ জীবিত আছেন।” ৪. আজ্ঞাপত্ৰঃ-"রাজগী মোতাবেক মোকাম কমলপুর মাণিক্য ভাণ্ডারের কাপাস ও বনকর মহারে বেপারিয়ান ও দোকারদারান ও বন কামলাগয়রহকে সমাজ্ঞেয়ং কার্যঞ্চ পরং পরগণে ইটা সাং বালিসহস্ৰবাসী শ্রীরাজকৃষ্ণ ভট্টাচাৰ্য্য এক কিত্তা দরখাস্থ দাখিল করিয়াছে যে তুমারগ পাশ তুলামুটীবাঞ্চ ফি টাকাতে <১০ আদ আনা হিসাবে উহার পিতামহের আমল পৰ্য্যন্ত বৃত্তি পাইয়া আসিছে এহাতে ২/৩ বৎসর যাবৎ তুমরা সবাবর্তি করিয়া দেও না অতএব লিখা জায় চিটি দর্শনে পূৰ্ব্ব রিতি মতে ভট্টাচাৰ্য মজকুরের বৃত্তি আদায় করিবা। ইতি ১২৬৫ ত্রিং তাং ১৫ জ্যৈষ্ঠ । মরকমা শ্ৰীযুগল কিশোর দত্ত ।” শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত(উত্তরাংশ-তৃতীয় ভাগ)-১৫