পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৮০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড বাৎস্যগোত্রীয় ব্রাহ্মণ কথা জয়পুরে বাৎস্যগোত্রীয় এক প্রাচীন ও সন্ত্রান্ত ব্রাহ্মণ বংশের বাস, ইহারা মহাদেবী বড়কাপনের বাৎস্যগোত্রীয়গণের শাখা-বংশ। সাৰ্দ্ধ ত্রিশত বৎসর হইল, তথাকার জয়রাম নামক একব্যক্তি তরফের জয়পুরে আসিয়া বাস করেন।৭ এই জয়রামের বংশধর শঙ্কর শিকদার “সুবোধিনী” নামী চণ্ডী-টীকা প্রণয়ন করিয়া প্রসিদ্ধ হইয়াছেন । ইহার সময় হইতেই এ বংশ ভট্টাচাৰ্য্য বংশ নামে খ্যাত হয়। শঙ্কর শিকদারের পৌত্র রামদেব বিদ্যানিবাস "শ্রাদ্ধদীপিকা" নামে এক স্মৃতিগ্রন্থ প্রণয়ন করেন। রামদেবের প্রপৌত্র গোপীনাথ (শ্রীচন্দ্র) ও তদভ্ৰাতৃবর্গ সকলেই উপাধিধারী পণ্ডিত ছিলেন। কথিত আছে, গোপীনাথ পাঠ্যাবস্থায় বিদ্যাৰ্জ্জনোদেশে কনিষ্ঠ মহোদর গৌরীকান্ত সহ নিরুদ্দিষ্ট হন; গৌরীকান্তের ন্যায়ালঙ্কার উপাধি এবং গোপীনাথের তর্কসিদ্ধান্ত উপাধি ছিল। ভ্রাতৃযুগল নিরুদ্দিষ্ট হইলে, রামকান্ত বিশারদ ও রমাকান্ত বাচস্পতিনামক অপর ভ্রাতৃদ্বয় তাহাদের অনুসন্ধানে নানা স্থানে ভ্রমণপূৰ্ব্বক কুচবিহারে উপস্থিত হন ও তত্ৰত্য গোবরাছড়া নিবাসী শচীনন্দন মোস্তফির বাড়ীতে আতিথ্য গ্রহণ করেন। শচীনন্দন ইহাদের পাণ্ডিত্যে মোহিত হইয়া, তাহাদের অনুর্দিষ্ট ভ্রাতৃদ্বয়ের অনুসন্ধানের সহায়তা করিতে স্বীকৃত হন; কিন্তু কয়েক দিন মধ্যেই তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। শচীনন্দনের শ্রাদ্ধে যে সকল নিমন্ত্রিত পণ্ডিত আগমন করেন, তন্মধ্যে নরেন্দ্র তর্কভূষণ নামক জনৈক পণ্ডিত সহ তাহার দুইটি ছাত্রও আগমন করিয়াছিল; শাস্ত্রবিচারে ইহারা সভাসীন পণ্ডিতবর্গকে পরাস্ত করেন । আমাদের বিশারদ ও বাচস্পতি তখন আশ্রয়দাতার ক্রিয়া উপলক্ষে বৃত ছিলেন; একজন প্রাচীন পণ্ডিত সেই বিচারার্থী ছাত্র দুটির সম্মুখীন হইতে ইহাদিগকে অনুরোধ করেন। উক্ত প্রাচীনের অনুরোধ উপেক্ষা করিতে না পারিয়া ইহারা সভ্যাস্থ হইয়া দেখিলেন যে, বিচারার্থী ছাত্রদ্বয় তাহাদেরই নিরুদ্দিষ্টভ্রাতা! আর বিচার চলিল না, ভ্রাতৃবর্গের পরস্পর সম্মিলনে সেই স্থানে এক আনন্দ কোলাহল উথিত হইল । ভ্রাতৃদ্বয়ের গৌরবে রামকান্ত ও রমাকান্ত বিশেষ প্রীত হইলেন, ও তাহাদিগকে গৃহে আনিতে সচেষ্ট হইলেন; কিন্তু তথাকার কর্তৃপক্ষ তাহাদিগকে তথায় এক টোল সংস্থাপনের জন্য অনুরোধ করিলেন। তাহারা সে অনুরোধ উপেক্ষা করিতে পারিলেন না; তখন তখায় এক চতুষ্পাঠী স্থাপিত হয় এবং দুইভ্রাতা পৰ্য্যায়ক্রমে তথায় থাকিয়া অধ্যাপনার সহিত স্থানীয় ব্যবস্থাদি প্রদান করিতে লাগিলেন। রেঙ্গানিবাসী প্রসিদ্ধ রামরাম পণ্ডিতের কথা ৩য় ভাগ প্রথম খণ্ডে বলিয়াছি, কথিত আছে একদা কোন এক মোকদ্দমার বিচার কার্য্যে, তাহার ব্যবস্থা বা অভিমতের অবৈধতা লক্ষিত হইয়াছিল, তখন গোপীনাথ তর্কসিদ্ধান্ত শবর্ণমেণ্টের নিকট উপস্থিত হইয়া, রাম রাম পণ্ডিতের পক্ষে তদীয় সিদ্ধান্তের বৈধতা প্রদর্শন করিয়াছিলেন । ৭. “এবং মহাদেবো নামা শিকদারো মহামতিঃ । নিৰ্ম্মায় বাটিকাং রম্যাং গ্রামে শ্ৰীবড়কাপনে। উবাস স্বজনৈঃ সাৰ্দ্ধং মহামান পুরঃসবং। অতস্তদ্বংশীয়াঃ সৰ্ব্বে মান্যা ধৰ্ম্মপরাণাঃ। তদধস্তনসন্তানো জয়রাম মহাকবিঃ । যবৌ জয়পুরগ্রামে লব্ধা মাতামহাস্পদং" ইতি জনৈক প্রাচীন কৃত শ্লোক হইতে ।