পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনত্রিশ] ভট্টাচাৰ্য্য ও চক্রবর্তী আখ্যাতি ব্রাহ্মণগণের ভট্টাচাৰ্য্য ও চক্ৰবৰ্ত্তী খ্যাতি সম্বন্ধে কথিত আছে যে, প্রাচীন কালে যাহারা কুমারিল ভট্ট ও শঙ্করাচার্য্যের মতে বিশেষজ্ঞ ছিলেন, তাহারাই ভট্টাচাৰ্য (ভট্ট+ আচাৰ্য্য) উপাধি পাইতেন। এবং সমাজ-চক্র যাহাদের দ্বারা ব্যবস্থিত হইত, তাহারা চক্ৰবৰ্ত্তী খ্যাতি ধারণ করিতেন; যাহাহউক, এ অঞ্চলে কোন কালেই উপাধি ধারণের কোন শৃঙ্খলা ছিল বলিয়া বোধ হয় না। বরং তত্তুলনায় “চৌধুরী” “পুরকায়স্থ" প্রভৃতি পদবি ধারণের কিঞ্চিৎ শৃঙ্খলা ছিল। তথাপি এদেশে যাহারা চৌধুরী; ব্রাহ্মণ হইলে স্বয়ং তাহারা “শৰ্ম্মা (এবং কায়স্থাদি হইলে "দেব" "দাস" ইত্যাদি) লিখিতেন। অন্যে তাহাদিগকে কথাবাৰ্ত্তায় “রায়" লেখায় “চৌধুরী” ব্যবহার করিত। এতদনুসারে পুত্র টাকা ধার লইতে স্বয়ং শ্রীঅমুক শৰ্ম্ম, (কি দেব কি দাস) লিখিয়া, পিতার নাম স্থলে “পিং অমুক চৌধুরী বা রায়চৌধুরী" লিখিতেন। স্বনামে উপাধির অনুল্লেখ শিষ্টতা বা দৈন্যজ্ঞাপক রীতি। এ রীতির এক্ষণে অনেকটা পরিবর্তন হইয়াছে। এই পরিবর্তন হেতু কিঞ্চিৎ গোলযোগ হইলেও এই পরিবর্তনের পরিনাম মন্দ নহে। ডাকে এক, লেখায় অার এবং স্বাক্ষরে অন্যতর, একই ব্যক্তির এই ত্ৰিবিধ উপাধি না হইয়া সৰ্ব্বাবস্থায় এক উপাধি থাকিলে অনেকটা শৃঙ্খলা থাকে। কায়স্থ জাতি ব্রাহ্মণের পরেই বৈদ্য কায়স্থের উল্লেখ আবশ্যক । চাতুব্বর্ণ্যের দ্বিতীয় বা ক্ষত্রিয় জাতিই কায়স্থ ৮ কায়স্থ নামেই তাহাদের ক্ষত্রিয় মূলত্ব প্রকটিত করে; ব্ৰহ্ম-কায়া সমুদ্ভূত বলিয়াই ইহারা কায়স্থনামে কথিত । ব্ৰহ্মা হইতে চিত্রগুপ্ত, তাহা হইতে চৈত্ররথ প্রভৃতির উৎপত্তি। কায়স্থগণ ক্ষত্রিয় হইলেও, নামান্তর গ্রহণ জন্য যুদ্ধের পরিবৰ্ত্তে লেখ্য বিদ্যাই ইহাদের উপজীবিকা নিরুপিত হয় ॥১০ ইহাদের এই বৃত্তি গ্রহণ ও নাম ধারণ সম্বন্ধে স্কন্ধপুরাণে লিখিত আছে। “ক্ষত্র-কুল-নাশন পরশুরাম কাৰ্ত্তবীৰ্য্যাৰ্জ্জুনকে নিহত করতঃ নিশিত শরসন্ধান পুরঃসর ধাবিত হইতেছেন দেখিয়া রাজণ্যগণ এবং ক্ষত্রিয়রাজ চন্দ্রসেনের সগর্ভা ভাৰ্য্যা পলায়ণপূৰ্ব্বক মহর্ষি দালভোর আশ্রমে আশ্রয় গ্রহণ করেন । ইহার পরেই রাম দালভ্য ঋষির আশ্রমপদে উপনীত হইয়া ঋষি কর্তৃক পরিপূজিত হইলেন। তিনি ভোজনকালে স্বীয় মনোরথ জ্ঞাপন করিলে দালভ্য তাহার অভীষ্ট প্রদানে স্বীকৃত হইলেন বটে, কিন্তু তিনিও তৎসকাশে একটি বর প্রার্থনা করিলেন । অতঃপর উভয়ে আহার সমাপন করিলেন । আহারান্তে দালভ্য জিজ্ঞাসা করিলেন, "দেব! আপনি ইতিপূৰ্ব্বে যাহা কামনা করিয়াছিলেন, এক্ষণে প্রকাশ করুন।” রাম প্রত্যুত্তরে বলিলেন, “মহাভাগ! ক্ষত্রিয় চন্দ্রসেনের সগর্ভা স্ত্রী আপনার আশ্রমে আশ্রয় লইয়াছে; তাহাকেই আমি চাহি।" ঋষি “তথাস্তু" বলিয়া ভয়কম্পিতা চঞ্চলনেত্রা চন্দ্রসেনপত্নীকে আনিয়া পরশুরামের হস্তে সমর্পণ করিলেন। ভার্গব ইহাতে অতিশয় তুষ্ট হইয়া দালভ্যকে জিজ্ঞাসা ৮. বাহেবশচ ক্ষত্রিয়াঃ জাতাঃ কায়স্থা জগতীতলে।" আপস্তম্ব। ৯. "ব্রহ্মকারাৎ সমুদ্ভুতঃ কায়স্থো বৰ্ম্মনসংজ্ঞকঃ। ব্যোম সংহিতা । ১০. ক. “কায়স্থো রাজসাক্ষী স্যাৎ গণকো লেখকস্ততা ।" বিষ্ণুসংহিতা । খ, “লেখকানপি কায়স্থান লেখ্যবৃত্ত হিতৈষিণঃ।” বৃহৎপরাশর।