পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায় : বিবিধ বংশীয় ব্রাহ্মণ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩০৭ গোলগোবিন্দের পিতা, পুত্রকে তৈল মাখাইতে মাখাইতে যাহা বলিয়াছিলেন, তাহা প্রতিপালনে তাহার সামর্থ্য ছিল না কি? স্বেচ্ছায় কোথাও জন্মগ্রহণ করাও কি মানুষের (হউন তিনি সিদ্ধ পুরুষ) সাধ্যায়ত্ত? এ সকল প্রশ্নের মীমাংসার স্থল ইহা নহে। কিন্তু ইহাই আশ্চৰ্য্য যে তৎপুত্র হরগোবিন্দের পদতলে রক্তবর্ণ একটা চিহ্ন ছিল। আমরা যাহার নিকট হইতে এই বংশবিবরণ প্রাপ্ত হইয়াছি তিনিই (শ্রীযুক্ত গুরুগোবিন্দ গোস্বামী) হরিগোবিন্দের পুত্র। পিতৃপদতলে লাল রঙ্গের একটা পদ্ম তিনি বহুবার দর্শন করিয়াছেন বলিয়া লিখিয়াছেন। দোলগোবিন্দ পুত্রের পদতলে লালরঙ্গের চিহ্ন দর্শনে পিতৃবাক্য স্মরণে “বাবা, বাবা" বলিয়া পুলকিত হন। তিনি পুত্রকে কদাপি তাড়না ভর্ৎসনা করেন নাই, মনে পুত্রের প্রতি পিতৃজ্ঞান পোষণ করিতেন। তিনি তাড়নাদি না করিলেও শিশুকালাবধি হরিগোবিন্দ মাৰ্জ্জিতচরিত্র ছিলেন, তাহাকে কাহারই কোন কথা শিখাইয়া দিতে হইত না । তুলসী রাম হরিরামের ২য় পুত্রের নাম তুলসীরাম। ইনি সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন, প্রায়শঃ উলঙ্গ থাকিতেন। তিনি রাত্রে নিকটবৰ্ত্তী মালিটীলা-শ্মশানভূমে গমন করিয়া নিশ্চিন্তে দুর্গার ধ্যান করিতেন। একদা এইরূপ ধ্যান করিতেছেন, কথিত আছে যে তখন হঠাৎ শুনিতে পাইলেন, কে যেন তাহাকে নাম ধরিয়া ডাকিতেছে। সে অমৃতমাখা ধ্বনি শ্রবণে বুঝিলেন যে ইহা নরকষ্ঠ নিঃসৃত ধ্বনি নহে, তাহারই ধোয় দুর্গা তৎপ্রতি কৃপাপরতস্ত হইয়া যেন বলিতেছেন-"এবার পূজাকালে তোমার অভীষ্ট সিদ্ধ হইবে।” তুলসী এ শূন্যবাণী শ্রবণে দেবীর উদ্দেশ্যে প্রণত হইয়া পড়িলেন। আশ্বিন মাস আগত প্রায়; বাড়ীতে আসিয়াই তুলসী পূজার আয়োজন করিতে ব্যস্ত হইলেন। কপদক বিহীন উদাসীন-প্রায় তুলসীরামের এই কাণ্ড দর্শনে স্ত্রীপুত্রাদির হাস্য উদ্রিক্ত হইল; কিন্তু ভক্তের সঙ্কল্প পূর্ণ রহে না, বেজোড়াবাসী তাহার জনৈক শিষ্য পূজার দ্রব্য সম্ভার লইয়া হঠাৎ উপস্থিত হইলেন। তাহার মনে এইভাব জনিয়াছিল যে, এবার গুরুর দ্বারা দেবীর পূজা করাইবেন। তিনদিন পূজা হইল; প্রতিমা বিসৰ্জ্জন দিয়া তুলসী স্ত্রীলোকের ন্যায় বিলাপ করিতে লাগিলেন। কথিত আছে ত্রিলোকতারিণী তখন আবির্ভূত হইয়া ভক্তের হৃদয়ে শান্তিদান করেন এবং তাহাকে একছড়া রুদ্রাক্ষমালা প্রদান করেন; একছড়া রুদ্রাক্ষের মালা এখনও তদ্বংশীয়গণ পূজা করিয়া থাকেন, এবং তাহাই দেবীদত্ত মালা বলিয়া প্রকাশ করেন। কেহ কেহ বলেন, এই মালা সেই শ্মশানভূমে নিশীথরাত্রে দেবী তাহাকে প্রদান করিয়াছিলেন। বাগচি বংশের কথা হরিহরের বংশ বৃত্তান্ত বাগচি উপাধি হইতেই জানা যাইতেছে যে, এই বংশীয়গণ বঙ্গীয় বারেন্দ্র শ্রেণীর কুলীন ব্রাহ্মণ। হরিহর অগ্নিহোত্রী নামে বাগচি বংশীয় এক উগ্রতপা মহাত্মা সম্ভবতঃ খৃষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে উত্তর বঙ্গ হইতে আসিয়া দিনারপুরে বাস করেন; দিনারপুরের পাণিউন্দা নামক স্থানে ইহার প্রাচীন বাসবাটী এখনও আছে; হরিহর সাগ্নিক ব্রাহ্মণ ছিলেন। হরিহরের যজ্ঞকুণ্ডের চিহ্নও সেই স্থানে দৃষ্ট হয়। হরিহর এদেশে আগমন করিলে রাজদত্ত বহু পরিমিত ভূমি ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হইয়া, একজন