পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩১০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড হইলে, রাঘবানন্দ তাহাকে পরম যত্নে আশ্রয়দান করেন ও আহারাদির সুব্যবস্থা করিয়া দেন। রাঘবের আতিথ্য সৎকারে প্রীত হইয়া সেই আগন্তুক, গমনকালে বলিয়া যান যে কখনও যদি দিল্লী নগরে বাদশাহ দরবারে রাঘব গমন করেন, তবে আগন্তুক রাঘবকৃত এই সৎকারের প্রত্যুপকার করিতে ভুলিবেন না। রাঘব সম্মিত-বদনে সেই সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির বাক্যে স্বীকৃত হন। কিন্তু তিনি ইহার অব্যবহিত পরেই দিল্লী যাইতে পারেন নাই, বহুকাল পরে তিনি দিল্লীতে গিয়া, অনুসন্ধানে সেই সম্ৰান্ত মোসলমান ভদ্রলোকের সহিত সাক্ষাৎ করেন। সেই মোসলমান ভদ্রলোকের চেষ্টায় রাঘবানন্দ ১৬০৫ খৃষ্টাব্দে জাহাঙ্গীর বাদশাহের আদেশে তরফের কানুনগো পদ প্রাপ্ত হন। কথিত আছে, দিল্লী গমনকালে পথে জনৈক সন্ন্যাসী সহ তাহার সাক্ষাৎ হইয়াছিল, সন্ন্যাসী তৎপ্রতি তুষ্ট হইয়া তাহাকে মন্ত্রপূত মদ্যপান করিতে দেন ও সফলতার জন্য আশীৰ্ব্বাদ করেন। সন্ন্যাসীর কৃপায় রাঘবানন্দের অনেক দৈবশক্তি জনিয়াছিল এবং তাহার কানুনগো পদ ও মজুমদার উপাধি প্রাপ্তিবিষয়ে তাহা কার্যকরী হইয়াছিল। রাঘবানন্দ দিল্লী হইতে কানুনগো পদ ও মজুমদার উপাধি প্রাপ্তির পর দেশে আসিলে এক নূতন বাটী প্রস্তুত করিলেন। এই নবনিৰ্ম্মিত বাটী তাহার মনোনীত না হওয়ায় তিনি জয়পুর হইতে তুঙ্গেশ্বর গ্রামে গিয়া গৃহ প্রস্তুত করিতে সঙ্কল্প করিলেন। তথায় পুন্যস্রোতা ক্ষমা নদী (খোয়াই) প্রবাহিতা ও তুঙ্গেশ্বর ভৈরব বিরাজিত, ঐ স্থান ধৰ্ম্মনিষ্ঠ রাঘবের বাসযোগ্যই ছিল এবং অচিরেই তিনি তথায় গমন করেন। রাঘবানন্দের খুল্লতাত-পুত্র পূর্ণানন্দ ও হৃদয়ানন্দ জয়পুরেই অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। এই সময়ে বহুপরে হৃদয়ানন্দের সন্তানগণ জয়পুর ত্যাগে তুঙ্গেশ্বরবাসী হন।২ রাঘবানন্দের পাচ পুত্র হয়, জ্যেষ্ঠ শ্রীনাথ পিতার মৃত্যুর পর ১৬৫৮ খৃষ্টাব্দে পৈতৃক কানুনগো পদ প্রাপ্তির সনন্দ লাভ করেন। এই সময় তিনি অনেক ভূমির অধিকার প্রাপ্ত হন; তাহার নামানুসারে তরফের তালুক শ্রীনাথ মৌজার নাম হয়। রাঘবানন্দের পঞ্চম পুত্র রঘুনাথ সেনের সহিত অন্যান্য ভ্রাতৃবৃন্দের সৌহৃদ্য না থাকায়, তিনি তুঙ্গেশ্বর ত্যাগ করতঃ আঠালিয়া গ্রামে গমন করেন; তাহার বংশীয়গণ অদ্যাপি তথায় বাস করিতেছেন। রামেশ্বর সনন্দ শ্রীনাথের পুত্রের নাম কাশীনাথ, তাহার পুত্রের নাম হরগোবিন্দ। হরগোবিন্দ দিল্লী গমন করিয়াছিলেন ও বাদশাহ দরবার হইতে কানুনগো পদের সনন্দ প্রাপ্ত হন।৩ ইহার পুত্রের নাম রামেশ্বর, সম্রাট মোহাম্মদ শাহের সময়ে তিনি দিল্লী গমন করিয়া ১৭১৫ খৃষ্টাব্দে তরফের কানুনগো নিযুক্ত হইয়া তথা হইতে সগৌরবে আগমন করেন। কানুনগো পদের জন্য তরফে তিনি যে ভূমি প্রাপ্ত হন, দশসনা বন্দোবস্তের কালে ঐ ভূমিই তাহার পুত্ৰগণকর্তৃক তদীয় নামে “৪নং তাং ২. ণ পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য । ৩. হরগোবিন্দ প্রপিতামহের ন্যায় মহৎ কৃপায় অদ্ভুত ক্ষমতালাভ করেন। কথিত আছে, তিনি যখন দিল্লী গিয়াছিলেন, তখন অবিবাহিত ছিলেন এবং নিজ ভাবিপুত্রের জন্য সনন্দপ্রার্থী হন; কিন্তু যখন জানা গেল যে তিনি বিবাহিত নহেন, তখন বাতুল বলিতে নির্দেশিত হন; পরে সম্রাট তাহাব অলৌকিক ক্ষমতার কথা জ্ঞাত হইয়া, তদীয় প্রার্থনা বাতুলের প্রলাপ বাক্যবৎ ভাবেন নাই। হরগোবিন্দের মহিমায় তদীয় প্রার্থনা সম্রাটনিকটে অগ্রাহ্য হয় নাই, ইহার বহু পরে যখন রাশ্বের দিল্লী গিয়া সনদপ্রাপ্তির প্রার্থনা করিয়াছিলেন, কোন কোন প্রাচীন সভাসদ তখন সেই বিষয় উত্থাপন করেন এবং তাহাতেই রামেশ্বর অতি সহজে সনন্দ লাভ করেন ।