পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩১২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড বলিলে, সে অকপট চিত্তে তাহা স্বীকার করিয়াছিল। তিনি পরবৎসর পূজাকালে চণ্ডীপাঠের নূতন ব্যবস্থা করিলেন। কিন্তু তাহার ভ্রাতুষ্পপুত্র ঈশান চন্দ্র হঠাৎ কালগ্রাসে পতিত হওয়ায়, ভীত হইয়া তৎপর বৎসর পূৰ্ব্ব নিয়মেই, অধিকতর সতর্কতার সহিত চণ্ডীপাঠ করাইয়াছিলেন। শিবচন্দ্রের পৌত্র শ্রীযুক্ত শ্রীশচন্দ্র সেন মজুমদার মহাশয় আমাদিগকে বলিয়াছেন যে, যেদিন শিবচন্দ্রের মৃত্যু ঘটিবে, সেদিনও তাঁহার দেহ রোগশূণ্য ও সুস্থ ছিল। তাহার পূৰ্ব্বরাত্রে তিনি কিছুই আহার না করায়, শ্রীশ বাবুর পিশী তাহাকে শিবচন্দ্রের নিকট প্রেরণ করেন; শ্রীশ বাবু তখন ৮/৯ বর্ষীয় বালক মাত্র। পৌত্র আসিয়া খাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করিলে, শিবচন্দ্র তাহাকে বলেন, "দাদা, আজই যে আমার মৃত্যুর দিন, এ সময় কি খায়?” বাল্যচাপল্য বশতঃ শ্রীশ বাবু তখন একথা কাহাকেও বলেন নাই, কিন্তু তাহার কিছুকাল পরেই হঠাৎ কোন অজ্ঞাত কারণে শিবচন্দ্রের দেহ অবশ হইয়া পড়িল এবং সেই অভুক্ত অবস্থায় শুদ্ধদেহে কিয়ংক্ষণ মধ্যেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়িলেন। ভৈরবচন্দ্রের পাচ পুত্র, তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ গিরীশ চন্দ্র সুশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন, তিনি সাংসারিক কোন কার্য্যে লিপ্ত না হইয়া ধ্যান ধারণায় সময় কৰ্ত্তন করিতেন। সৰ্ব্বজীবে তাহার দয়া ছিল, পাছে পদতলে দলিত হইয়া কোন প্রাণী বিনষ্ট হয়, এই ভয়ে তিনি পথ চলিতে সদা সতর্ক থাকিতেন। সৰ্ব্বদা তিনি শুচি ভাবে থাকিতেন; একদা শৌচাদি সমাধা করিয়া গৃহে আসিতে আসিতে হঠাৎ তাহার দেহ অবসন্ন হইয়া পড়ে, তাহাতেই তিনি সজ্ঞানে মৃত্যুমুখে পতিত হন (১৭৫৯ শকাব্দ); মৃত্যুর পূৰ্ব্ব মুহূৰ্ত্তে তাহার গৃহে ব্ৰাহ্মণভোজন সমাপ্ত হইয়াছিল। ইহারই সুযোগ্য পুত্র পূৰ্ব্বোক্ত শ্রীশচন্দ্র সেন মজুমদার মহাশয় হইতে এই বিবরণী প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। সুঘরের মজুমদারদের কথা হেরম্বরায় ও তদ্বংশ কথা প্রায় চারিশত বৎসর হইল, রাঢ়দেশ হইতে বৈদ্যবংশীয় কৃষ্ণাত্রেয় গোত্রোদ্ভব হেরম্ব রায় নামক জনৈক সন্ত্রান্ত ব্যক্তি এ দেশে আগমন করিয়া তরফের সুকরিপাড়া গ্রামে বাস করেন; তাহার অনুষঙ্গে ব্রাহ্মণ, নাপিত, নট, ধোপা, ও মালী প্রভৃতি বহুলোক আসিয়াছিল। সুঘরের আচাৰ্য বংশীয়ঘণের পূৰ্ব্বপুরুষ মুরারি আচাৰ্য হেরম্বরায়ের সহিত এ দেশে আসিয়াছিলেন। হেরম্বরায় কয়েক বৎসর সুকরিপাড়ায় বাস করিয়া, পরে ইহার অল্প দূরে সুঘর গ্রামে নূতন বাটী প্রস্তুতক্রমে তথায় উঠিয়া যান। ইহার পুত্র নারায়ণ দাস তরফের কানুগো পদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। নারায়ণের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম যাদবাদ। ইহাদের কৌলিক খ্যাতি "রায়” । যাদবানন্দ পৈতৃক কানুগো উপাধি ধারণ করিয়াছিলেন। মধ্যম ও কনিষ্ঠ পুত্র রায় খ্যাতিতে খ্যাত হইয়াছিলেন। যাদবানন্দের তিন পুত্র হয়, তন্মধ্যে রাঘবানন্দ জ্যেষ্ঠ ছিলেন, ইহার পুত্রের নাম ভবানী দাস। ভবানী দাসের পাচ পুত্রের মধ্যে রঘুনাথ অতি প্রসিদ্ধ ব্যক্তি। রঘুনাথ স্বগুণে তরফের কানুনগো পদের সনন্দ লাভ করেন ও দিল্লীর বাদশাহের অভিমতে “মজুমদার” উপাধি প্রাপ্ত হন। রঘুনাথ হইতেই এই বংশের বিশেষ প্রতিপত্তি হইয়াছিল বলিতে হইবে। রঘুনাথের সময় হইতেই এই বংশের ব্যক্তিবর্গ “মজুমদার” উপাধি ধারণ করিয়া আসিতেছেন। রঘুনাথ অতি দক্ষতা সহকারে নিজ কৰ্ত্তব্য সম্পাদন করেন, তিনি কানুনগো পদের জায়গীর স্বরূপ এক বৃহৎ ভূখণ্ড প্রাপ্ত হন। তাহার মৃত্যুর পর তদীয় জ্যেষ্ঠ পুত্র রমাবল্লভ পিতৃপদ প্রাপ্ত युन ७ পৈতৃক জায়গীর ভাগ করেন। তদীয় অপর সহোদরবর্গ জায়গীর ভূমির অংশ