পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড বিপুলানন্দের ছয় পুত্রের মধ্যে তিন জনই নিঃসন্তান, ষষ্ঠ বা সৰ্ব্ব কনিষ্ঠ পুত্র গোপীনাথ এক প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন; ইহার নামে লাখাইর গোপীনাথপুর মৌজার নাম হয়। গোপীনাথেরও ছয়পুত্র হয়, তাহাদের পুত্ৰগণের মধ্যে কেহ কেহ দশসনা বন্দোবস্তের সময় জীবিত ছিলেন; উহাদের নামে তালুক বন্দোবস্ত হইয়াছিল। পং লাখাইর ১৩/১৪/১৫/ ১৬/১৭ নং তালুক দত্তদের নামেই বন্দোবস্ত হইয়াছিল। গোপীনাথের পৌত্রদের মধ্যে অনন্তরাম পূৰ্ব্বোক্ত ১৪ নং তালুকের অধিকারী ছিলেন, ইহার পুত্র চণ্ডীপ্রসাদ, ইনি বলভদ্রপুর গ্রাম স্থাপন করেন । ইহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ভবানীপ্রসাদ দত্ত, ইংরেজ রাজত্বের প্রথম সময় পরগণার পাটওয়ারি নিযুক্ত হন ৫ ইনিই লাখাই দত্তবংশের বিবরণ (স্বগীয় ভবানী দত্তের লিপি) লিখিয়া গিয়াছেন। বিপুলানন্দের ৪র্থ পুত্র গঙ্গারাম। গঙ্গারামের তিনপুত্রের মধ্যে ২য় ও ৩য় পুত্রের নাম সন্তোষ ও বাসুদেব। ইহারা ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ছিলেন ও নিজ নামে দুইটি গ্রাম স্থাপন করেন। বাসুদেবপুরের স্থাপয়িতা বাসুদেবের পুত্রের নাম কৃষ্ণজীবন দত্ত, ইনি কৃষ্ণপুর নামক গ্রাম স্থাপন করিয়া যশস্বী হন। পূৰ্ব্বোক্ত সন্তোষ ও বাসুদেবের দুই পৌত্রের যুগানামে ("আত্মাঅনুপ") নামে তত্ৰত্য ৪নং হালাবাদি তালুকের বন্দোবস্ত হয়। অনুপ দত্ত অতি শান্ত প্রকৃতি বিশিষ্ট ও ধাৰ্ম্মিক ব্যক্তি ছিলেন । লাখাইর দত্ত বংশের এই সংক্ষিপ্ত বিবরণ সম্বন্ধে তদ্বংশীয় নগেন্দ্ৰ নাথ দত্ত উকীল মহাশয় সহায়তা করিয়া উপকৃত করিয়াছেন। পরগণা-রিচি দত্ত বংশ কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের ৩য় ভাগ ২য় খণ্ডে উল্লেখিত হইয়াছে যে রিচির দত্তবংশীয়গণ পঞ্চখণ্ডের সুপাতলাবাসী দত্তবংশীয়গণেরই এক শাখা সস্তৃত। প্রায় ত্রিশথ বৎসর পূৰ্ব্বে রিচিতে হিন্দুভদ্রলোকের বড় বাস ছিল না। জনৈক মোসলমান জমিদার তখন রিচির মালীক ছিলেন। হিন্দুর মধ্যে এক ঘর ব্রাহ্মণ, আশাদের নামে একজন কায়স্থ ও দাসবংশীয় সোণারাম তথায় বাস করিতেন । ইহাদের সামান্য জমিজমা ছিল। মোসলমান জমিদারটি বিলাস-পরতন্ত্র ও আলস্য-পরবশ ছিলেন। ঐ সময়ে কোন অজ্ঞাত কারণে পঞ্চখণ্ডের জনৈক দত্ত চৌধুরী এই স্থানে আসিয়া বাস করেন; ও বুদ্ধিবলে কতক ভূমির অধিকার লাভ করেন। তরফবাসী কালাচান্দ ভট্টাচাৰ্য্য নামক জনৈক ব্রাহ্মণ-যুবক তৎকালে পঞ্চখণ্ডের এক চতুষ্পাঠীতে অধ্যয়ন করিতেন, তিনিই সেই দত্ত চৌধুরীর পৌরহিত্ব গ্রহণ করিয়াছিলেন; এবং রিচিতে উঠিয়া আসিয়া বাস করেন বলিয়া শ্রীযুক্ত কৃষ্ণমোহন দে মহাশয় আমাদিগকে লিখিয়াছেন । দত্ত চৌধুরীর পুত্র পৌত্রগণ অচিরকাল মধ্যেই রিচির প্রায় ছয়পণ অংশের অধিকারী হইয়া পড়েন। তাহার পরে জয়গোবিন্দ চৌধুরীর সময় সমস্ত পরগণা দত্তবংশের হস্তগত হয় । জয়গোবিন্দ ঢাকায় থাকিয়া কাজ করিতেন, তিনি একদা জানিতে পারিলেন যে, রিচির রাজস্ব অনাদায় রহিয়াছে এবং শীঘ্রই তাহা নীলামে উঠিবে। তিনি এই সুযোগ ত্যাগ করিলেন না, নীলাম ক্রয় করিয়া রিচির একাধিপতি হইয়া উঠিলেন। জয়গোবিন্দের পুত্রের নাম জয় নারায়ণ। ইনি পৈতৃক সম্পত্তি প্রাপ্ত হইয়া নানা সৎকার্যের অনুষ্ঠান করিয়া গিয়াছেন। জলা ও প্রান্তরভূমি বলিয়া তদঞ্চলে স্বভাবতঃই দস্যভীতি ছিল; ৫. কালেক্টরীর প্রাচীন কাগজপত্রে ইহার স্বাক্ষর দৃষ্ট হয়। সন ১২০৯ বাংলার এলাম ও দশসনা সংক্রান্ত পং প্রতাপগড়েরর “মৌজা মিলান" "একওয়াল জমি" নামক, ইহার দস্তখত যুক্ত কাগজ আমাদের হস্তগত হইয়াছে।