পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ অধ্যায় : পুনঃ বিবিধ বংশ কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩৩১ সাদৃশ্য ছিল যে নিরাণাং মাতুলাকৃতিঃ এই বাক্য আনন্দমোহনে সম্পূর্ণরূপে সার্থক হইয়াছিল" (১ দাস বংশ জলসুখাস্থ দাস বংশীয় গঙ্গারাম দাস চৌধুরীর কথা উল্লেখযোগ্য। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশে বাণিয়াচঙ্গাধিপতি গোবিন্দখার কাহিনী বর্ণিত হইয়াছে; গোবিন্দ খার জাতিচু্যুতি ঘটিয়াছিল; ইহার পরে তিনি যখন দেশে আগমন করেন, তখন তৎসহ গঙ্গারাম দাস নামক এক ব্যক্তি বাণিয়াচঙ্গে আসিয়াছিলেন বলিয়া জানা যায়। ইনি রাজানুগ্রহে জলসুখাতে কতক ভূসম্পত্তি প্রাপ্ত হইয়া সুখে বাস করেন। গোবিন্দ খার অনুষঙ্গী এই গঙ্গারামের পুত্র পৌত্রাদির সংবাদ অবগত হওয়া যায় না। এই দাসবংশে পরে ঐ নামেই এক ব্যক্তির উদ্ভব হয়, তাহা হইতেই বংশ থা জ্ঞাত হওয়া যায়। ইহারই নামে জলসুখার ১নং তালুকের বন্দোবস্ত হইয়াছিল; তত্ৰত ৩নং তালুক ইহার পুরোহিত রামগোপাল চৌধুরীর নামে বন্দোবস্ত হইয়াছিল। বন্দোবস্ত হইয়াছিল; তত্ৰত্য ৩নং তালুক ইহার পুরোহিত রামগোপাল চৌধুরীর নামে বন্দোবস্ত হয়। উক্ত গঙ্গানারায়ণের পুত্রের নাম রামনারায়ণ ইহার পুত্রের নাম কীৰ্ত্তি নারায়ণ । পূৰ্ব্বে জলসুখার একটি নবাবি তহশীল কাছারী ছিল; সে স্থানে কাছারী ছিল, উহা অদ্যাপি “কাছারীঘাট" নামে খ্যাত আছে। একদা রামনারায়ণ চৌধুরী কাছারী ঘাটে নদীতে স্নান করিতে যাইতেছিলেন, পথিমধ্যেই কাছারী। কাছারীর সন্নিকটে উপস্থিত হইলে একটি দৃশ্যে তিনি বড়ই ব্যথিত হইলেন; দেখিলেন যে, খাজানা দিতে অসমর্থ একটি প্রজাকে হাত পা বাধিয়া গাছে ঝুলাইয়া রাখা হইয়াছে। তহশীল কৰ্ম্মচারী নিকটেই দণ্ডায়মান, তাহার আদেশে ক্রুর পাইকবর্গ হতভাগ্য প্রজাকে ক্ষণে ক্ষণে যষ্টি প্রহার করিতেছে, আর সে যন্ত্রণায় "আহা হা” বলিয়া চিৎকার করিতেছে! এ দৃশ্যে রামনারায়ণ ধৈর্য্যহারা হইয়া সেই কৰ্ম্মচারীকে, ইহাকে ছাড়িয়া দিতে অনুরোধ করিলেন। কিন্তু কৰ্ম্মচারী তাহার অনুরোধ রক্ষা করিল না, তখন “পর দিন আসিয়া" তিনি উক্ত প্রজার দেনা শোধ করিতে প্রতিশ্রুত হইলেন। হতভাগ্য প্রজা নিষ্কৃতি পাইল । পরদিন যখন দেনা শোধ করিতে রামনারায়ণ কাছারীতে গমন করিলে, দেখিতে পাইলেন, তখন কাছারীতে একটা সভা সম্মিলিত; বহু মৌলবী ও পণ্ডিত তাহাতে সমাসীন। রামনারায়ণ আসিয়া আসন গ্রহণ করিলে সেই তহশীল কৰ্ম্মচারিটী চৌধুরীকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন “আপনে গত কল্য প্রতিশ্রুত হন যে আজ দিন' আসিবেন, সেই জন্যই এই সভার উদ্যোগ করা হইয়াছে; সৰ্ব্বসমক্ষে আপনার প্রতিশ্রুতি পালন করুন। পারশ্য 'দিন' শব্দ দিবা বাচক নহে, আপনে এই পণ্ডিতমণ্ডলীকে জিজ্ঞাসা করিয়া প্রতিজ্ঞা রক্ষা করুন " কৰ্ম্মচারীর কথাবসানে সমাগত সকলেই সেই বাক্যের পোষকতা করিল; রামনারায়ণও দিনের অর্থান্তই তাহার প্রতিশ্রুতি জ্ঞান করিয়া, অগত্যা অঙ্গীকার রক্ষার্থ সেই স্থলেই মোসলমান-ধৰ্ম্ম অবলম্বন করিলেন; তাহার নাম রহমত উল্লা হইল। এরূপ জনশ্রুতির কথাও কেহ কেহ বলেন যে, পরদিন কৌশলে প্রজার খাজানা প্রেরণে বাধা জন্মান হয় ও পরে সেই ছলে চৌধুরীকে জাতিচু্যত করা হয়। ১. বসু বংশের উদ্ধৃত কথাগুলি ১৩১৪ সালের আষাঢ় সংখ্যা "আরতি"তে অধ্যাপক শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচাৰ্য্য বিদ্যাবিনোদ এম,এ মহাশয়ের “স্বগীয় অনীন্দ মোহন বসু” শীর্ষক নামক প্রবন্ধ হইতে গৃহীত।