পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৫২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-পঞ্চম খণ্ড রাঘবের দেহত্যাগ রাঘব বা রাঘবানন্দের বেদান্তরত্ন উপাধি ছিল। তাহার পুত্র তিনজন; ইহাদের নাম বিষ্ণুদাস, রামনাথ ও বংশীবদন । ইহারা যখন শিশু, সেই সময় বাণিয়াচঙ্গাধিপতি গোবিন্দ বা হবিবখার সহিত বিজয় সিংহের বিবাদ উপস্থিত হয় এবং হবিবখা কর্তৃক বিজয় নিহত হন। এ বৃত্তান্তও পূৰ্ব্বাংশে বর্ণিত হইয়াছে। বিজয় সিংহ যে গুপ্ত ঘাতকের করে নিহত হন, তাহাকে মৃত্যুর পূৰ্ব্বে বলিয়াছিলেন-"তোমার প্রভুকে আমার একটি অনুরোধ জানাইও, সে অনুরোধটি এই যে, আমার গুরুদেবকে তিনি যেন আমার সম্পত্তির কিয়দংশ প্রদান করেন।” ঘাতক স্বীকার করিল এবং কৰ্ত্তব্য পালন পূৰ্ব্বক রাজগুরুকেও নিহত করার জন্য ধাবিত হইল । রাঘবের নিকট যখন সে উপস্থিত হইল, তাহার অভিপ্রায় বুঝিতে পারিয়া রাঘব তখন নিজ ইষ্টমন্ত্র জপের জন্য একটু সময় চহিলেন। ঘাতক স্বীকৃত হইল ও অস্ত্র হস্তে পার্শ্বেই দাড়াইয়া রইল। রাঘব বদ্ধাসনে উপবিষ্ট হইয়া নাসা দৃষ্টি সহকারে ইষ্টমন্ত্র জপ করিয়া সমাধিযোগে তনুত্যাগ করিলেন; ঘাতকের অস্ত্র তাহার অঙ্গ স্পর্শ করিতে পারিল না। ঘাতক তথা হইতে আগমন করিয়া, রাজার অন্তিম অনুরোধ ও রাঘবের দেহত্যাগের কথা হবিবখার গোচর করিল। কিসমত আতুয়াজান ও শিক সোনাইতার নামকরণ পিতৃহত্যার সংবাদ প্রাপ্তমাত্র রাজকুমারগণ এবং তাহাদের আত্মীয় স্বজন বর্গ রাজবাড়ী পরিত্যাগপূৰ্ব্বক পলায়ন করিয়াছিলেন, ইহা পাঠক পূৰ্ব্বাংশে পাঠ করিয়াছেন। যখন রাঘবেরও মৃত্যু সংবাদ প্রচারিত হইল, তখন রাঘবের ভৃত্য সাচারাম দাস রাঘবের পত্নী ও পুত্রত্ৰয় সহ পলায়ন করিয়া রায়পুরের উত্তরে এক বন মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিল, ও পরে তথা হইতে তাহাদের মাতুলালয় পঞ্চখণ্ডে চলিয়া যায়। এদিকে হবিব খা, বিজয়ের অধিকৃত আতুয়াজান পরগণার দশপণ অংশ নিজ কৰ্ম্মচারী পালি গ্রামের চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে রাখিলেন; (সেই দশপণ অংশই কিসম আতুয়াজান নামে খ্যাত হয়), এবং বাকি ছয়পণের শিকি বা চতুর্থাংশ বিজয়সিংহের অন্তিম অনুরোধ অনুসারে, রাঘবের পুত্রত্রয়কে দিবার অভিপ্রায়ে ঘোষণা প্রচার করিলেন। রাঘবের পুত্রত্ৰয় তখন মাতুলালয়ে; এ সংবাদ তাহারা পাইলেন না। রাঘবের পুত্রত্ৰয় এই সম্পত্তি গ্রহণের জন্য উপস্থিত না হওয়ায়, কৃষ্ণানন্দ নামক এক ব্যক্তি আপনাকে রাঘবের ভ্রাতৃ-পরিচয়ে উক্ত শিকি অংশ (চতুর্থাংশ) গ্রহণ করিলেন; উহাই শিকি বা শিক সোণাইতা পরগণায় পরিণত হয় । সাচারামের কার্য্য ও সাচায়নি গ্রাম প্রভূভক্তি পরায়ণ সাচারাম দেশের অবস্থা অবগত হইবার জন্য পঞ্চখণ্ড হইতে এক সময় তথায় উপস্থিত হইয়া জানিতে পারিল যে, দেশে শান্তি স্থাপিত হইয়াছে এবং কৃষ্ণানন্দ নামক এক ব্যক্তি চাতুর্য্যবলে প্রভুর সম্পত্তি আত্মসাৎ করিয়া নিয়াছেন। এতদৃষ্টে সাচারাম পঞ্চখণ্ডে প্রত্যাগমন পূৰ্ব্বক রাঘবের পুত্রত্রয়কে দেশে আনিতে সচেষ্ট হইলে, রামনাথ ও বংশীবদন যাইতে অস্বীকৃত হইলেন; বিষ্ণু দাস সাচারামের সহিত দেশে আসিলেন। তাহারা পূৰ্ব্বনিবাস রায়পুরে না গিয়া যে বনে প্রথমে আশ্রয় লইয়াছিলেন, সেই জঙ্গল কাটিয়া বাড়ী প্রস্তুতপূৰ্ব্বক বাস করিতে লাগিলেন। বিষ্ণুদাস পিতৃ-ভূত্যের সৎপরামর্শ ও প্রভুপরায়ণতায় এতাদৃশ ১. রামনাথের বংশধরগণ পঞ্চখণ্ড নয়াগ্রামে বাস করিতেছেন । ইহার একশাখা তথা হইতে ইন্দেশ্বর গিয়াছেন । বংশীবদন পরে পঞ্চখণ্ড হইতে বোযালজুরে গমন করেন, তদ্বংশীয়গণ তথায় আছেন ।