পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম অধ্যায় :ব্রাহ্মণ বংশ বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩৫৩ বিমোহিত হইলেন যে সাচারাম যে তাহাকে সেস্থানে আনিয়াছে, এইকথাটা স্মরণীয় করিবার জন্য তিনি সেই নুতন স্থানকে সাচায়নি বলিয়া পরিচিত করিলেন। সুচতুর কৃষ্ণানন্দ এই সংবাদ পাইয়া পূৰ্ব্বনিবাস নন্দিগ্রাম ত্যাগ করিয়া এই স্থানে আসিয়া বাটী নিৰ্ম্মাণ করিলেন ও বিষ্ণুদাসকে ভ্রাতুষ্পপুত্র বলিয়া আলিঙ্গনপূৰ্ব্বক আপ্যায়িত করিলেন। সাচারাম পুনঃপুনঃ বিষ্ণুদাসকে সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য উত্তেজিত করিতে থাকিলেও, তিনি মোকদ্দমা করিয়া কৃষ্ণানদের সহিত বিবাদে প্রবৃত্ত হওয়া অপেক্ষা সেই নব বসতি স্থানটিতে নিরুদ্বেগে বসিয়া জীবন কৰ্ত্তন করাই শ্ৰেয়ঃ বলিয়া বোধ করিলেন। যাহার যাহা প্রাপ্য, এক সময় না এক সময়, সে না পাইলে তাহার বংশের পরবর্তী কেহও তাহা ভোগ করিয়া থাকে; অনেক সময় ইহা দেখা যায়। বিষ্ণুদাস কৃষ্ণানদের সহিত বিবাদে প্রবৃত্ত না হইলেও, তাহার পুত্ৰগণ সম্পত্তির কিয়দংশ উদ্ধারে সমর্থ হইয়াছিলেন। রতিনাথের সম্পত্তি উদ্ধার বিষ্ণুদাসের ছয়পুত্র; তন্মধ্যে রতিনাথ অতি মেধাবী ছিলেন। একদা বাড়ীর পার্শ্বে বালকবর্গ খেলা করিতেছিল, সেই পথে একটি প্রজা পাকা কলা লইয়া কৃষ্ণানন্দকে উপহার দিতে যাইতেছিল, বালস্বভাববশতঃ রতিনাথ সেই ব্যক্তিকে, কয়েকটি কলা দিয়া যাইতে বলিলে সে উত্তর দিল “এই কলা তোমারই প্রাপ্য ছিল, কিন্তু তোমার পিতা সম্পত্তি ছাড়িয়া দিলেন; কৃষ্ণানন্দই এখন আমাদের মিরাশদার । তোমার প্রাপ্য পরে কাড়িয়া নিয়াছে, আমরা কি করিব?" এই কথাগুলি বালকের মৰ্ম্মে প্রবেশ করিল ও তখনই তিনি সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য মনে দৃঢ়সঙ্কল্প করিলেন। রতিনাথ যখন বয়ঃপ্রাপ্ত হইলেন, তিনি কখনও সেই কথাটি ভুলিয়া রহিলেন না; সংসারে প্রবেশ করিয়া প্রথমেই তিনি স্বীয় কনিষ্ঠ ভ্রাতা রত্নগৰ্বকে সঙ্গে লইয়া ও কয়েকজন অনুচর সহ বহুকষ্টে বঙ্গ রাজধানীতে উপস্থিত হইলেন এবং অনেক চেষ্টায় আপনাদের অবস্থা নবাবের গোচর করিলেন। নবাব যুবকের বুদ্ধি ও সাহস দর্শনে প্রীত হইয়া শিক সোণাইতার প্রকৃত মালিক বলিয়া তাহাকে সনন্দ প্রদান করিলেন। রতিনাথ চৌধুরাই সনন্দ প্রাপ্ত হইলেন এবং রত্নগৰ্ভ পুরকায়স্থ পদবি লাভ করিলেন। ইহারা পরে দেশে আসিয়া সনন্দের বলে স্বীয় সম্পত্তির উদ্ধার সাধন করেন।২ এই সময়ে রতিনাথ, শিউড়ী উপাধিবিশিষ্ট কোন ব্রাহ্মণকে নিজ কৰ্ম্মচারী নিযুক্তি করেন; এবং রাজপুরোহিত নারায়ণ পণ্ডিতের বংশধর যাদব চক্রবর্তীকে স্বীয় পৌরহিত্যে বরণ করিয়া, তাহাদের পূৰ্ব্ববাস রতিয়ার পাড়া হইতে সাচায়ানিতে স্থাপন করেন। কেবল তাহাই নহে, তিনি আরও কয়েক বংশীয় ব্রাহ্মণকে ভূদানাদি করিয়াছিলেন বলিয়া জানা যায়। একদা রতিনাথ শ্রীহট্ট শহর হইতে বাড়ীতে আসিতে পথে রৌদ্র পীড়িত হইয়া পড়িয়াছিলেন, তদৃষ্টে জনৈক ঘোষ তাহাকে একভাণ্ড উত্তম দধি প্রদান করে, তিনি সেই দধি ভক্ষণে এত তুষ্ঠিলাভ করেন যে ঘোষকে সেই ক্ষেত্রটি তৎক্ষণাৎ দান করেন। ঘোষ চমকিত হইয়া রহিল। দধির "টুপী" বা পাত্রই তাহার সৌভাগ্য সূচক হইল, এই জন্য সে সেই স্থানটি “দধিটুপী" নামে আখ্যাত করে। পরবর্তী কথা রতিনাথের পুত্রের নাম শ্রীরাম। একদা এক মোসলমান রাজকৰ্ম্মচারী গ্রামে আসিয়া নানা উৎপাত উপস্থিত করেন। শ্রীরাম ইহা সহ্য করিতে না পারিয়া সেই কৰ্ম্মচারীর নৌকা টানিয়া ২. পরবীন পরিশিষ্টে ইহাদের বংশাবলী লিখিত হইবে।