পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ ছিলেন।১০ অদ্বৈতাচাৰ্য্য তাঁহাকে প্রাপ্ত হইয়া পরম আনন্দ সহকারে কৃষ্ণ কথা রসে তৎসহ নিশি অতিবাহিত করেন, তাহার পরদিন তিনি কাশী হইতে যাত্রা করিয়া প্রয়াগে উপস্থিত হন। তথায় ত্রিবেণীতে স্নান ও পিণ্ডদান এবং বেণীমাধব দর্শনান্তর তথা হইতে মথুরায় গমন করেন। মথুরায় যমুনা স্নান, আরতি দর্শন ও ধ্রুবঘাটে পিণ্ড প্রদান পূৰ্ব্বক বৃন্দাবনে উপস্থিত হন। মদন মোহন প্রকাশ বৃন্দাবনে তিনি কয়েক দিন অবস্থিতি করেন। বৃন্দাবনে তখন প্রকৃতই বন মাত্র, তখন বৃন্দাবনে কৃষ্ণলীলাস্থল সকল বিলুপ্ত অপরিচিত হইয়া রহিয়াছে,—কোন তীর্থই প্রকাশিত হয় নাই; তখন তথায় কোন লোকালয়ও ছিল না। অদ্বৈত গোবৰ্দ্ধন দর্শনের পর এক বটবৃক্ষতলে রাত্রি যাপন করিলেন। অদ্বৈতের মনে কৃষ্ণলীলার নানা কথাই উত্থিত হইতে লাগিল, তিনি ভাবিতে ভাবিতে নিদ্রিত হইয়া পড়িলেন, নিদ্রিতাবস্থায়ও তাহার চিত্তে তাহাই উদিত হইতে লাগিল, তিনি এক অপূৰ্ব্ব স্বপ্ন দর্শন করিলেন। দেখিলেন যে, কৃষ্ণচন্দ্র তাহার সাক্ষাতে উপস্থিত; বলিতেছেন– “মদন মোহন নামে আমারই প্রাচীন এক প্রতিমূৰ্ত্তি ছিল,১১ উহা দ্বাদশাদিত্য—তীর্থে নাতিগভীর ভূগর্ভে আছে, অদ্বৈত। তুমি উহা উদ্ধার কর।” স্বপ্লাটিকে অদ্বৈত মনের ভ্রান্তি বা অমূলক চিন্তা মাত্র বোধ না করিয়া বিশ্বাস করিলেন এবং প্রভাতে গ্রাম্যলোক সমূহকে একত্রিত করিলেন। স্বপ্নের নির্দেশানুসারে তিনি ব্রজবাসিগণ সহ দ্বাদশাদিতো গমন করিয়া, যমুনা তীরে একটি স্থানের বৃক্ষাদি কাটিয়া ভূমি খনন করিলে, যথার্থই অপূৰ্ব্ব এক কৃষ্ণমূৰ্ত্তি বাহির হইলেন। এই মূৰ্ত্তিই পরে মদন গোপাল নামে খ্যাত হন। অদ্বৈত এই মূৰ্ত্তি মথুরার জনৈক চৌবেকে প্রদান করিয়া তথা হইতে প্রত্যাগমন করেন। এই মদনগোপালই পরে সনাতন গোস্বামী মথুরা হইতে বৃন্দাবনে লইয়া গিয়াছিলেন। সুতরাং শ্রীবৃন্দাবনের আদি মূৰ্ত্তির প্রকাশ শ্রীহট্টবাসী কর্তৃক সম্পাদিত হয়, ইহা বলা অন্যায় নহে। তীর্থ পরিভ্রমণের পর অদ্বৈত যেমন শান্তিপুরে প্রত্যাগত হইলেন, অমনি জনৈক দিগ্বিজয়ী পণ্ডিতের সহিত তাহার সাক্ষাৎ হইল। কিন্তু অদ্বৈত তীর্থ হইতে আসিয়াছেন, বৃথা বাদবিতণ্ডাতে বৃত হওয়া তাহার ইচ্ছা নহে, তথাপি বাধ্য হইয়া তাহাকে বিচারে প্রবৃত্ত হইতে হইল; দিগ্বিজয়ীর গৰ্ব্ব অচিরেই খৰ্ব্ব হইয়া গেল; তিনি পরাজিত হইয়া তাহার ভক্তরূপে খ্যাত হইলেন; ইহার নাম শ্যামদাস । লাউড়িয়া কৃষ্ণদাস অতঃপর অদ্বৈতের মহিমার কথা চতুর্দিকে বিস্তৃত হইয়া পড়িল, বহু লোক আকৃষ্ট হইয়া তাহার শিষ্যত্ব স্বীকার করিতে লাগিল; এই সময়ে লাউড়ের রাজা দিব্যসিং কাশী গমন ব্যপদেশে শান্তিপুরে উপস্থিত হন। কিন্তু তাহার আর কাশী যাওয়া হইল না, অদ্বৈতের এক হুংকারে তিনি বৈষ্ণবধৰ্ম্ম গ্রহণ পূৰ্ব্বক কৃষ্ণদাস নামে খ্যাত হন; লাউড়-বাসী বলিয়া শান্তিপুরে তিনি লাউড়িয়া কৃষ্ণদাস নামে সংজ্ঞিত হইতেন। তিনি অদ্বৈতের বাল্যলীলা সংস্কৃত ভাষায় লিপিবদ্ধ করেন, তদ্ব্যতীত বাঙ্গালার “বিষ্ণুভক্তি রত্নাবলি রচনা করেন।১২ কৃষ্ণদাস পরে শান্তিপুর হইতে ১০. “প্রেম গদ গদ দুৰ্ব্বাসা সাক্ষাৎ। শ্ৰীমাধব পুরির সতীর্থ হয় যে বিখ্যাত।”-অদ্বৈত মঙ্গল । ১১. শ্ৰীকৃষ্ণের প্রপৌত্র বজ্রনাভ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল বলিয়া ভক্তিরত্নাকরাদি প্রাচীন বৈষ্ণব গ্রন্থে পাওয়া যায়। ১২ “কৃষ্ণদাস নাম তার অদ্বৈত রাখিলা। অদ্বৈত চরিত কিছু তোহা প্রকাশিলা।”-অদ্বৈত প্রকাশ ।