পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ অতি সন্ত্রান্ত বংশীয় এক উপযুক্ত ব্যক্তিকে ঐ পদ প্রদানের প্রস্তাব করিলে তিনি ঐ পদ প্রাপ্ত হন।২৭ পূর্বোক্ত সওদাগরের পূৰ্ব্বপুরুষ বৈদ্যজাতীয় ছিলেন, পরে তিনি সাহুবংশে বিবাহ করিয়া বণিগৃত্তি অবলম্বন করিয়া ছিলেন। সওদাগরের প্রতি কৃতজ্ঞতা বশতঃই হউক, অথবা মূলে বৈদ্য ও কায়স্থ জাতীয় কয়েক প্রধান ব্যক্তি কোন সামাজিক বিবাদ মূলে স্বসমাজ হইতে পৃথক হইয়া, এই সম্প্রদায় ভুক্ত হইয়া হউক, উক্ত নবাব শ্রীহট্টীয় সাহু-সম্প্রদায়কে পুনঃ পূৰ্ব্ব উপযুক্ত স্থানে স্থাপনের চেষ্টা করিয়াছিলেন বলিয়া জনশ্রুতি আছে। একসময় উক্ত নবাব ১০৮ মূৰ্ত্তি কালী পূজার অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন, তৎকালে পূৰ্ব্বোক্ত সঙ্কল্প কাৰ্য্যে পরিণত করার উদ্যোগ হইয়াছিল বলিয়া কথিত আছে। জনশ্রুতি যে, এই কার্যের পূৰ্ব্ব সূচনা, স্বরূপ সিদ্ধ পুরুষ ঠাকুর কাচাকে একজন কালা পূজা করিবার অধিকার দেয়া হয়। ঠাকুর কাচা তান্ত্রিক সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন এবং অত্যন্ত্র কাল মধ্যে পূজা সমাধা করিয়া লন। তাহার পূজা সিদ্ধ হয় নাই বলিয়া আপত্তি উঠিয়াছিল; প্রবাদ এই যে তৎশ্রবণে কাচা, দেবীর আবির্ভাবের প্রমাণ প্রদর্শনার্থ একটি ধান্য লইয়া মৃন্ময়ী প্রতিমার উরুদেশে একটি রেখাপাত করিলে তাহা হইতে শোণিত নির্গত হয়। কাচা ঠাকুরও নবাবকে আশীৰ্ব্বাদ প্রদান ব্যতিরেকেই চলিয়া আসেন। অতঃপর নবাবের ও পতন ঘটিয়াছিল । কাশী নাথ বালিরাশি পরগণার শঙ্করসেনা গ্রামে ১৭৯৮ খৃষ্টাব্দে কাশী নাথের জন্ম হয়, তাহার পিতার নাম সৰ্ব্বানন্দ শৰ্ম্মা। কাশীনাথ বাল্যবধিই বিষয় বিরাগী ছিলেন, ধৰ্ম্মে তাহার মন একেবারে বসিত না বলিয়া তিনি বিবাহে সম্মত ছিলেন না, কিন্তু আত্মীয়বর্গ সৰ্ব্বদাই তাহাকে বিবাহের জন্য অনুরোধ করিতেন; তাহদের অনুরোধ এড়াইতে না পারিয়া চল্লিশ বৎসর বয়সে তিনি বিবাহ করেন, কিন্তু স্ত্রীর প্রতি কিছুতেই আশক্তি জন্মিলনা। তিনি নারী জাতিকে জগন্মাতার প্রতিরূপা জ্ঞান করিতেন, সুতরাং পরিণীতা পত্নীর সহিতা দৈহিক সম্বন্ধ ছিল না। তিনি তাহাকে “মা” বলিয়া ডাকিতেন। ঈদৃশ উচ্চাঙ্গের সাধক কাশীনাথের কিছুতেই গৃহে আবদ্ধ করিয়া রাখতে পারে নাই । কাশীনাথ প্রসিদ্ধ নিৰ্ম্মাই শিবের২৮ বাড়ীতে গিয়া সাধনায় প্রবৃত্ত হন। সেই স্থানে তিনি শব সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে। বালিশিরার তরফদার বংশীয় চাদ তৎকালে তাহার “উত্তর সাধক” হইয়াছিলেন। তিনি নিজেই নিৰ্ম্মাই পূজা করিতেন। হরের আরাধনায় তিনি বাকসিদ্ধ হইয়াছিলেন, যাহার কথা বলিতেন, তাহাই সফল হইত। এই জন্য লোক সমাজে তিনি “বাকসিদ্ধ কাশীনাথ” নামে খ্যাত হন। নিৰ্ম্মাই শিব এতদঞ্চলে বিশেষ বিখ্যাত, শিবরাত্রি ও বারণী যোগে প্রতি বৎসর তথায় বহু যাত্রী উপস্থিত হইত, ঝড় বৃষ্টি উপস্থিত হইলে আশ্রয়াভাবে ইহাদের অশেষ লাঞ্ছনা পাইবার সম্ভাবনা হইলেও, কাশী নাথের সময়ে একবারও তাহাদের কোন অসুবিধা হয় নাই। “তোমাদের কোন ক্লেশ হইবে না" এই বাক্যটি তিনি বলিলেই ঝড় বৃষ্টি নম্র হইয়া মুহুর্তে কোথায় চলিয়া যাইত। তাহার জিতেন্দ্রিয়তার কথা গল্পবৎ প্রতীয়মান হয়, তিনি মা মা বলিয়া কোন কোন যুবতীর স্তন্যপানে রত হইতেন। লোকে বিস্মিত হইয়া দেখিত যে, তিনি যেন শিশুভাব লাভ করিয়াছেন। ২৭. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাঃ ২য় খঃ ৪ৰ্থ অধ্যায় এবং উত্তরাংশ ৩য় ভাঃ ২য় খঃ ৪ৰ্থ অধ্যায় দ্রষ্টব্য। শ্রীহট্টের নবাব হরকিষুণ দাস মনসুর উলমুলক বাহাদুর ঐ পদে নিযুক্ত হইয়াছিলেন। ২৮. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ১ম ভাঃ ৯ম অধ্যায় দেখ।