পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ নিরুদ্দিষ্ট কেশব লাল এক সময়ে বাণিয়াচঙ্গে উপস্থিত হন, তখন বানিয়াচঙ্গাধিপতি দেওয়ান উমেদরাজা বৰ্ত্তমান ৩৫ উমেদরাজার অধিকৃত একটি গ্রামের জনৈকা যবনী, “পীরের শিরনী" বা ভোগ প্রস্তুত করিয়াছিল কিন্তু কোন সাধু ফকির না পাইয়া সে বড়ই দুঃখিত হইয়াছিল; কেশবলাল ঐ রমণীকে দেখিয়া দয়ার্দ্র চিত্তে তাহার বিষাদের কারণ জিঙ্গাসিলে, সে তাহার কাছে আপনার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে; তাহার বাক্য শ্রবণে তিনি আপনাকে “ফকির” বলিয়া পরিচয় দেন। তখন সে রমণী আহাদ ভরে তাঁহাকে দুখানা পিষ্টক প্রদান করে, তিনিও পিষ্টকদ্বয় গ্রহণ পূৰ্ব্বক পরে তাহা খাইবেন বলিয়া তাহাকে প্রবোধ দিয়া আপন ঝুলিতে তুলিয়া রাখেন। এই সময় দেওয়ানের বিশ্বাস উপাধধারী জনৈক ব্রাহ্মণ কৰ্ম্মচারী সেই গ্রামে ছিলেন; তিনি ইহা জানিতে পারিয়া কেশবলালকে দেওয়ানের কাছে লইয়া গেলেন। দেওয়ান উমেদরাজা মোসলমান হইলেও হিন্দু ধৰ্ম্মে তাহার বিদ্বেষ ছিল না; প্রকৃত ধাৰ্ম্মিক ব্যক্তির প্রতি তিনি শ্রদ্ধাবান ছিলেন। তিনি কেশবলালকে যবনীপৃষ্ট পিষ্টক গ্রহণের কারণ জিজ্ঞাসিলে, তিনি আপনাকে “ফকির" বলিয়াই উত্তর দিলেন। দেওয়ান তখন তাহাকে নিজ গৃহের প্রস্তুত “খানা" খাইতে বলিলেন ও খানা আনিতে ভৃত্যকে আদেশ দিলেন; তখন কেশব লাল ঠাকুরবাণীকে স্মরণ করিয়া একটি গীত গাইলেন, সে গীতটা এইঃ– “মুই কেন আইনু দেওয়ানের বাজারে রে বাণী নাথ! নদীর কুলে নগর, ফকিরের যুগান কেন মানীরে বাণী নাথ! মুই কেন আইনু দেওয়ানের বাজারে । বাসিয়াছে ভবেরি হাট, যার যার কাজে তারিঠাট, তাহাতে বেপারির কারখানা। কেহ কিনে কেহ বেচে, কেহ হরির নাম যাচে, হরির নামের লাগিয়া কেশবলাল বাউলারে বাশী নাথ! মুই কেন আইনু দেওয়ানের বাজারে।” এই গীতে তাহার পরিচয় হইয়া গেল। তিনি যে ফকির নহেন—হিন্দু উদাসীন তাহা জানা গেল; খানা আর আসিল না। ইনি যে জনতরির নিরুদ্দিষ্ট পূৰ্ব্বসিদ্ধ বালক, তাহাও জানা গেল । দেওয়ান তখন তাহাকে বাড়ী পাঠাইতে উদ্যোগ করিলেন ও ভূমিদান করিতে চাহিলেন। কেশব দান গ্রহণে অস্বীকৃত হইলেন, বলিলেন— “জমি ভূমি দোলা ঘোড়া রহুক পড়িয়া। দেশে দেশে মাগি খাইমু গোবিন্দের নাম লইয়া।” কিন্তু দেওয়ান কোনরূপেই ছাড়িলেন না, তখন তিনি সেই গোচারণের জঙ্গলটুকু মাত্র গ্রহণে ও একবার মাত্র গৃহ গমনে স্বীকৃত হইলেন। বহুদিনে মায়ের ছেলে ঘরে গেল, বহুদিনে রতি নাথের শূন্য ঘর আলো হইল, বহু দিন পরে তাহার জননী হারানিধি প্রাপ্ত হইলেন। হায়! তাহার পতি কোথায়? তিনি যে পুত্ৰশোকে শুকাইয়া বহু দিন পূৰ্ব্বেই দেহত্যাগ করিয়াছেন। জননী পুত্র কোলে করিয়া কাদিতে লাগিলেন। করুণ হৃদয় কেশব লাল মার সে ক্রন্দনের মৰ্ম্ম বুঝিলেন বলিলেন—“মা, আর কাদিও না, আমি ৩৫. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাঃ ৩য় খঃ ২য় অধ্যায়ে ইহার কথা দ্রষ্টব্য।