পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩৫ বিশেষভাবে দেখিতে আরম্ভ করে। কেশব লাল যখন বার বৎসরের বালক, তখন একটি গোবৎসে লইয়া সৰ্ব্বদা খেলা থাকিতেন, লেখা পড়ায় কিছুমাত্র মনোযোগ দিতেন না। পিতা বহুচেষ্টা করিয়াও যখন পুত্রকে পড়াইতে পারিলেন না, তখন তিনি নিরাশ হইয়া সে চেষ্টায় বিরত হন। আট বৎসর বয়সে কেশবের উপনয়ন হয় তৎকাল পর্যন্ত তাহার পুথির সহিত পরিচয় হয় নাই, সেই বৎস সহ বনে গমনই তাহার একমাত্র কার্য্য হইয়া দাড়াইয়াছিল। ইহার অল্পপরে একদিন বৎসচারণ হইতে বাড়ীতে আসিয়াই বৎস বঁাধিতে বাধিতে মাকে বলিলেন—“কানাইদাদা বলিয়াছে!" মা মনে করিলেন, ছেলে কোন বালকের সহিত খেলিতে যাইবে। পরদিন তাহাকে আর জাগাইয়া দিতে হইল না, কেশবলাল স্বয়ং জাগিয়াই বৎস লইয়া জঙ্গলে গেলেন । প্রভাতে বাড়ীতে বালককে না পাইয়া আত্মীয়গণ সেই জঙ্গলে গিয়া দেখিলেন যে কেশবলাল একটি কদম্ব বৃক্ষের উপরে একাকী এক শাখা হইতে অন্য শাখার যাইতেছেন, যেন কাহার সহিত খেলা করিতেছেন, অদৃশ্য ভাবে কে যেন আগে আগে ছুটিয়া যাইতেছেন, যেন কাহার সহিত খেলা করিতেছেন, অদৃশ্যভাবে কে যেন আগে আগে ছুটিয়া যাইতেছে, আর তাহাকে ধৃত করিতে তিনি চাহিতেছেন কিন্তু পারিতেছেন না। ইহা দেখিতে দেখিতে তাহারা অগ্রসর হইতে লাগিলেন। তাহারা বৃক্ষের নিকটে পৌছবার পূৰ্ব্বেই দেখিতে পাইলেন যে একটি বৃক্ষ শাখা কোলে করিয়া কেশব মাটিতে পতিত হইলেন। তদৃষ্টে আত্মীয়বর্গ দ্রুত ধাবিত হইয়া তাহাকে উঠাইতে গেলে, তিনি বলিয়া উঠিলেন “আমাকে ছুইও না। আমাকে কীৰ্ত্তন করিয়া গৃহে লইতে বাবাকে বল, তাহা না হইলে যাইব না।” যাহারা আসিয়াছিল, তাহারাই একথা রতিনাথকে জানাইল ও সকলে কীৰ্ত্তন করিয়া কেশব লালকে বাড়ীতে লইয়া গেল। বাড়ীতে উপস্থিত হইয়াই কেশব দেবগৃহে প্রবিষ্ট হইলেন ও কপাট বন্ধ করিয়া দিলেন। তাহাকে অন্যত্র লইয়া যাইতে চেষ্টা করিলেন। অষ্টাহ পরে তিনি গৃহ হইতে বাহির হন বলিয়া কথিত আছে এবং তখন তাহার অবক্ষয়ে অনেকটা পরিবর্তন লক্ষিত হইয়াছিল। এই অষ্টাহ পরে যখন সকলের খাতে উপস্থিত হইলেন, তখন তাহারা বিক্ষিত হইয়া শুনিলেন, যে নিরক্ষর কেশবের মুখে সুন্দর কবিতা স্ফুরিত হইতেছে। সকলে আশ্চৰ্য্য হইয়া মনে করিল যে যাহারা কৃপায় রত্নাকর বালীকি হইতে পারিয়া ছিলেন, তাহারই করুণায় এরূপ ঘটা বড় কথা নহে। কেশব লালের মুখ হইতে সৰ্ব্ব প্রথম যে কবিতা বাহির হইয়াছিল, তাহা এই: “জনিয়া ব্রাহ্মণ কুলে, ব্ৰহ্ম না চিনিলাম রে, মিছা মায়ার দৃঢ়পাশে বদ্ধ হৈয়া রৈলাম রে, কেশব লালের ভরসা কেবল কানাইয়া ধন হরি।" এই গীত গাইতে গাইতে তিনি গৃহত্যাগ করিয়া চলিলেন, আর কেহ তাহাকে ফিরাইতে পারিল না। তিনি যে কোথায় চলিয়া গেলেন, অনুসন্ধান করিয়াও কেহ পাইল না। তখন সুদীর্ঘজীবী ঠাকুর বাণী নাম৩৪ প্রসিদ্ধ মহাত্মা বৰ্ত্তমান ছিলেন, ইহার সহিত কেশব লালের ঐ সময় দেখা হইয়াছিল বলিয়া কথিত আছে। ৩৪. ইহার চরিত্র কথা পরে উক্ত হইবে ।