পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ গুরু গোরাচাদ লক্ষ্মীপুরের কামদেব বংশে জন্মগ্রহণ করেন, এই বংশের সংক্ষিপ্ত কথা ৩য় ভাগের ১ম খণ্ডে ৫ম অধ্যায়ে উক্ত হইয়াছে। এই বংশীয়গণ কায়স্থ হইলেও গুরুতা ব্যবসায়ী । গোরাচাদের পিতার নাম মাধবদাস। মাধব দাসের শিষ্য সম্পদ অল্প ছিল না। পিতৃ বিয়োগের পর গোরাচাঁদ শিষ্য সংরক্ষণে ও “বার্ষিকী" আদায় করিতে শিষ্য বাড়ী যাইতে আরম্ভ করেন। অপূৰ্ব্ব শারীরিক সৌন্দৰ্য ব্যতীত গুরুর যোগ্য গুণাবলীতে প্রথমে যে তিনি বিভূষিত ছিলেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। গুরুর ছেলে গুরু, তাই শিষ্য সমাজে তাহার অনাদর ছিল না। যাহারা গুরুর উচ্চাসনে আরূঢ় হইতে অভিলাষী, তাহাদের চরিত্র যেরূপ সজ্জিত, নিৰ্দ্দোষ ও অন্যের অনুকরণীয় হওয়া কৰ্ত্তব্য, প্রথমে তাহাও যে তাহার ছিল, এমন নহে, তথাপি গোরাচাদ গুরু ছিলেন। একদা তিনি এক শিষ্যগৃহে গমন করেন, শিষ্যের পত্নী অতি রূপবতী, সেই সরলা যুবতী গুরুকে প্রণাম করিতে আসিলেন; এদিকে গুরুদেব তাহার অতুল রূপ রাশি দর্শনে একবারে চঞ্চল চিত্ত ও অধৈৰ্য্য হইয়া উঠিলেন;৪০ এমন কি তিনি নির্লজ্জ্যভাবে নিজ মনোভাব তাহার কাছে ব্যক্ত করিতে ইতস্ততঃ করিলেন না। সেই শিষ্যপত্নী গুরুর মুখে অনুচিত বাক্য শ্রবণে যেমন ব্যথিত হইলেন তেমনি ক্রোধিতা হইয়া ভৎসনা করিতে লাগিলেন। ক্রোধে রমণীকে মুখরা করিয়া তুলিল; তিনি বলিলেন "গুরুদেব" আপনি পিতৃতুল্য, আপনার এ কিরূপ কথা?৭১ “গুরুদেব"। আপনি না গোস্বামী বলিয়া পরিচয় দেন? গোস্বামী কাকে বলে জানেন না? গো শব্দে ইন্দ্রিয় বুঝায়, যে ইন্দ্রিয় জয়ী, সে-ই গোস্বামী । কিন্তু ইন্দ্রিয় যাহার উপর স্বামিত্ব করে, সে “গোস্বামী গাভীর স্বামী ষাড় মাত্র গুরুদেব, আপনাকে অধিক কি বলিব, আপনি কি রূপ গোস্বামী বুঝিয়া লউন ৷” সেবক-পত্নীর এই ভৎসনা বাক্যগুলিতে গুরুদেবের জ্ঞান-নেত্ৰ ফুরিত হইল, তিনি রমণীর ৪০, “কারস্থ কুলেতে জন্ম বাস লক্ষ্মীপুরে। ব্যবসা গুরুতা তার জানয়ে সংসারে । প্রথম যৌবনে ছিল অত্যন্ত সুন্দর। একদিন চলিলেন সেবকের ঘর॥" ইত্যাদি । —রঘুনাথ লীলামৃত (মুদ্রিত) ৪১. “গোরা চাদ অধিকারীর এবাক্য শুনিয়া । রাগে পরিপূর্ণা নারী কহিল গৰ্জ্জিয়া। আপনি শ্ৰীগুরু।—মোর পিতার সমান। বীজ মন্ত্র মম কৰ্ণে করেছ প্রদান।” “গোস্বামী বলিয়া লোকে দাও পরিচয় । গোস্বামী শব্দের অর্থ কেহ মহাশয়? “গো শব্দে দেহেন্দ্রিয় অভিধানে কয় । । যেই জন করিয়াছে ইন্দ্রিয়কে জয়৷ জিতেন্দ্রিয় যেই জন সেই সে গোস্বামী । যাহা জানি বিস্তারিয়া কহিনু সে আমি৷ ইন্দ্রিয় স্বামিত্ব করে যাহার উপর। গাভী স্বামী বৃষ-সেই কেবল পামর। ইন্দ্রিয়ের সুখে যেই ব্যাকুল সদায় । তাহাকে গোস্বামী বলে, মনে দুঃখ পায়।” ইত্যাদি