পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ ব্রাহ্মণকে বলিলেন “ঠাকুরজী, মোনসী যে আহারে আমারই তুল্য।" ঠাকুর ছুটিয়া গিয়া তৎক্ষণাৎ বৃহৎ ৩২ খান লুচি ও দুইসের পরিমিত পায়স আনিয়া দিলে তথাবিধ আহারের পরেও মোনশী তত্তাবৎ উদরস্থ করিয়া পরিতৃপ্ত হইলেন। তাহার আহার দর্শনে “বাবু” বিশেষ সুখী হইলেন ও পরদিন উভয়ে একত্রে মধ্যাহ্নে ভোজনের জন্য সনিৰ্ব্বন্ধ নিমন্ত্ৰণ করিলেন। পরদিন দেখা গেল যে, উভয়েই সম পরিমিত দ্রব্য আহার করিতে সমর্থ। তখনকার লোকের আহার ও সামর্থ্য এবং স্বাস্থ্যের কথা শুনিলে এখন গল্প বলিয়াই বোধ হয়। মোনশী বেশ গাইতে জানিতেন। তৎকালে লোকের সুখ স্বচ্ছন্দতা যথেষ্ট ছিল, তাহারা প্রায়শঃ সঙ্গীত বিদ্যার আলোচনা করিত; সুরসংযোগে মহাভারত রামায়ণ, পদ্মা পুরাণ পড়িতে না পারিলে নিন্দিত হইতে হইত; মোনশী একবার ঝুলনোপলক্ষে স্বীয় গুরুপাট পাণিশালির আখড়াতে গিয়া ঝুলনের পালটি গাইতে ছিলেন। ইন্দানগরের জমিদার রাধাগোবিন্দ চৌধুরী সপরিবারে সেই স্থানে উপস্থিত ছিলেন, তাহার বিবাহ যোগ্য কন্যা শ্ৰীমতী, মোনশীর সুকণ্ঠ নিশ্ৰিত সঙ্গীত শ্রবণে ও দৈহিক লাবণ্য দর্শনে মোহিতা হইয়া, ইহার সহিত তাহার বিবাহ হয়, তাহাই দেবতার কাছে প্রার্থনা করেন। কন্যার ভাব ভঙ্গিতে তাহাতে গুরু ধনঞ্জয়ের উদ্যোগে ইহা কার্য্যে পরিণত হয়। মোনশী মহাশয়ের ন্যায় উদার ও জ্ঞাতি বৎসল ব্যক্তি বড় দেখা যায় না। তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা শ্যামাচরণ যখন পৃথগন্ন হন, মোনশী স্কোপাৰ্জ্জিত সম্পত্তির অৰ্দ্ধাধিক তাহাকে দিয়া স্বয়ং অল্পাধিক গ্রহণ করিয়াছিলেন । তদীয় জ্ঞাতি ভ্রাতা ব্রজ রামকে তাহার গোমস্থা নিযুক্ত করিয়া জীবনোপায় করিয়া দিয়াছিলেন। "লাতুর লড়াই"৪৫ অবসানে বিজয়ী সিপাহী কর্তৃক বাজার বিলুষ্ঠিত হইলে, এই দোকানের দ্রব্যাদিও গৃহীত হয়। অতঃপর তিনি দোকানের সমস্ত স্বত্বই ব্রজরামকে দান করেন। ব্রজরামকে শুধু কৰ্ম্মঠ ও কাৰ্য্যদক্ষ করিয়া তুলিবার জন্য এতদিন দোকান নিজ সম্পত্তি ভুক্ত রাখিয়াছিলেন। ব্রজরাম এই দোকান হইতে প্রচুর অর্থলাভ করিয়া “মহাজন” বলিয়া খ্যাত হন। ব্রজরাম পরম ধাৰ্ম্মিক লোক ছিলেন, তিনি বিবাহ না করায়, তাহার ভাগিনেয় ফেদুরাম এই সম্পত্তি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন।৪৬ মোনশী মহাশয় যখন স্বীয় কনিষ্ঠ ভ্রাতৃ দ্বয়ের বিবাহের উদ্যোগ করিতে ছিলেন, তখন তাহার বিধবা খুল্লতাত পত্নী নিজ পুত্রের বিবাহ হইলনা বলিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কোন প্রকারে ইহা জ্ঞান হইয়া অগ্ৰেই সেই বিধবার ক্ষোভ নিবারণ করেন, কেবল তাহাই নহে, সেই পিতৃহীন খুল্লতাত ভ্রাতাকে উপাৰ্জ্জন-ক্ষম করিবার উদ্দেশ্যে লাতুর বাজারের একটা দোকানে ইহাকে গোমস্তা করিয়া দিয়াছিলেন; এই দোকান হইতে সেই ভ্রাতা স্বীয় অবস্থায় উন্নতি বিধান পূৰ্ব্বক স্বচ্ছদে জীবনতিবাহিত করেন।৪৭ মোনশীর আর একজন জ্ঞাতি ভ্রাতার অবস্থা অতি শোচনীয় ছিল, এইজন্য তাহাকে তিনি নিজের উকালতি সনন্দ দান করিয়া স্বয়ং ব্যবসায় ত্যাগ করেন, সেই ভ্রাতার নাম রাজীব লোচন ছিল । রাজীব লোচন এই দান প্রাপ্ত সনন্দ বলে উকালতি করিয়া আপন অবস্থার পরিবর্তন করিয়াছিলেন । ৪৫। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তপূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাঃ ৫ম খঃ ৩য় অঃ দেখ। - ৪৬. কামাখ্যা নামক জনৈক কায়স্থ-সন্তান লাতুর অষ্টপতি বংশে বিবাহ করেন, তাহার অধস্তন বংশীয়বর্গ তদীয় নামানুসারে “কামুর গোষ্টি" নামে খ্যাত হয়। ফেদুরাম এই বংশীয় ছিলেন এ এক্ষণে বিলুপ্ত প্রায়, ফেদু রামের পুত্র শ্ৰীযুত গোবিন্দ চরণ, রায় জীবিত আছেন । ৪৭. মোনশী মহাশয়ের এই ভ্রাতার নাম ভবানী চরণ, ইহার পুত্রই লাতুর অন্যতম জমিদার শ্ৰীযুত বৈকুণ্ঠ চরণ রায় অষ্টপতি মহাশয় বৰ্ত্তমান আছেন।