পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৮৭ করিলেন। ইহার পরে প্রসিদ্ধ বঞ্চিত ঘোষ অজ্ঞান ঠাকুর ও মালী ধৰ্ম্মদাসের সহিত তাহার পরিচয় হয়। মালী ধৰ্ম্মদাস সম্মিলন ধৰ্ম্মদাস একজন কবি বলিয়া খ্যাত ছিলেন, প্রথমাবস্থায় তিনি বাঙ্গালা ভাষায় "হুসেনপৰ্ব্ব" রচনা করিয়া যশস্বী হন; শেষ বয়সে তিনি পরম বৈষ্ণব হইয়া উঠেন, এবং সাধু মহাত্মারূপে দেশবাসীর ভক্তির পাত্র হইয়াছিলেন । ধৰ্ম্মদাস জাতিতে মালী ছিলেন। বাণীর জননী পুত্রকে বিবাহ দিয়াছিলেন; বাণী দেশে আসার পর সেই পত্নীর গর্ভে একটি পুত্র জন্মগ্রহণ করে, ইহার নাম অনন্ত; ইহার কথা পূৰ্ব্বে (বংশ বিবরণে) বলা গিয়াছে। বাণীর আর একজন পুত্র ছিলেন;–তিনি অনন্তের বৈমাত্রের ভ্রাতা । একদা বাণীর এক শিষ্য কালীপূজার আয়োজন করেন। তাহার নিতান্ত ইচ্ছা হইল, বাণীকে দিয়া পূজা করাইবেন। কিন্তু একথা পূৰ্ব্বে বাণীকে বলা হয় নাই। যেদিন পূজা হইবে সেদিনই ইহা মনে হইল এবং তাহার প্রাণ বড়ই আকুল হইয়া উঠিল। সিদ্ধপুরুষ শিষ্যের আকুলতা নিজ প্রাণে অনুভব করিতে পারিলেন, তাহার মনও চঞ্চল হইয়া উঠিল ও অনতিবিলম্বে তিনি শিষ্যালয়ে উপনীত হইলেন; যথা— “দৈববলে জানিযা সেবকের মনোরথ । চারিদণ্ডে গেলা এক দিবসের পথ। শিয্যালয়ে উত্তরিয়া কল্যাণে তাহার। কালীপূজা করিয়া দেখাইলা চমৎকার। নভুত নভবিষ্যতি—জীবের অসাধ্য। প্রতিমাকে ভক্ষাইলা পূজার নৈবেদ্য৷”—চরিত্র চিন্তারত্ন । সিদ্ধপুরুষ বাণীকিশোর কি শক্তিবলে একদিবসের পথ চারিদণ্ড সময়ের মধ্যে গিয়াছিলেন, তাহার আলোচনা নিম্প্রয়োজন। ঠাকুর দুল্লভের জীবনী প্রসঙ্গে যথার্থই বলা হইয়াছে “আমরা প্রকৃত মানুষ, তাহা কি রূপে বুঝিব?" আর শিশু প্রকৃতি সরল ভক্তের আদার রক্ষার্থ চিন্ময়ী শক্তি, জড় প্রতিমার বিকাশ প্রাপ্ত হয় কি না, এবং সেই প্রতিমা নৈবেদ্য গ্রহণ করিতে পারে কি না, তাহাও আমরা সংসারের মায়ামোহিত মানুষ কিরূপে বুঝিব? কিন্তু এই রূপ অদ্ভূতকথা বিশ্বাসী লেখকগণের গ্রন্থপত্রে আরও দেখিতে পাওয়া যায়। ভক্তমান প্রভৃতি বৈষ্ণব গ্রন্থেও এরূপ বৃত্তান্ত প্রাপ্ত হওয়া যায়। দয়া বশতঃ দ্বিতীয়বার বিবাহ শিষ্যালয় হইতে বাণী অপর এক ব্রাহ্মণ গৃহে উপনীত হইলেন। এই ব্যক্তির এক কুজাকন্যা তনয়ার দুঃখে নিতান্ত দুঃখিত ছিলেন, তাহাকে দুঃখিত দেখিয়া বাণী এই কন্যাকে বিবাহের জন্য প্রার্থনা করিলেন। শিষ্য এতৎবাক্য শ্রবণে পরম আহাদ সহকারে গুরুকে কন্যা সম্প্রদান করিলেন। এই কন্যার গর্ভে তাহার দ্বিতীয় পুত্র রাজেন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। রাজেন্দ্র যখন উপযুক্ত হইয়াছেন, সেই সময়ে অকস্মাৎ একদিন পাগল শঙ্কর বাণীগৃহে উপস্থিত হইলেন। দুইজনে বহু কথাবাৰ্ত্ত হইল; পাগল শঙ্কম বিদায় লইয়া পুনঃ তীর্থ ধাত্রা করিলেন; বহুতীর্থ দর্শনান্তর কুরুক্ষেত্রে গেলে তাহার দেহপাত হইল। সিদ্ধপুরুষ বাণীর নিৰ্ম্মল