পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ “বাণীঠাকুরের ভাগা” কথাটি তাহাদের প্রতি তুল্য-উদাহরণ স্বরূপ প্রযোজ্য হইয়া থাকে।৯৮ এই ঘটনার পর ঠাকুরবাণী গৃহত্যাগ করিয়া নানাস্থান ভ্রমণ করেন। শ্রীহট্ট শহরে উপস্থিত হইলে তিনি পাগল বলিয়া বন্দিশালে নীত হইয়াছিলেন, কিন্তু তাহার বন্ধন পুনঃ পুনঃ মুক্ত হইয়া পড়ায়, কারারক্ষক বিক্ষিত হন,—তিনি ইহা নবাবকে জ্ঞাপন করেন। শ্রীহট্টের নবাব এই সংবাদ অবগত হইয়া বাণীকে সিদ্ধপুরুষ জ্ঞানে অনেক অর্থদান করেন। তিনি সেই অর্থ পথে পথে বিতরণ করিয়া তথা হইতে চলিয়া আসেন। শহরের লোকেরা তাহার মহিমা জ্ঞাত হইয়া, তাহাকে অন্যত্র যাইতে দিল না, তিনমাস কাল পরম যত্নে তথায় রাখিয়া দিল; এবং অনেকেই তাহার নিকট হইতে মন্ত্রগ্রহণ করিয়া কৃতাৰ্থ হইল। শ্রীহট্ট হইতে ঠাকুরবাণী রূপনাথদর্শনে জয়ন্তীয়ায় উপস্থিত হন। জয়ন্তীয়াতে তিনি সাত দিন ছিলেন । তথায় এক রাত্রে তিনি স্বপ্নে দেখিলেন যে, স্বয়ং মহাদেব তাহাকে বলিতেছে—“সাধো পাগল শঙ্কর সমীপে সত্বর উপস্থিত হও তিনিই, তোমাকে তত্ত্বজ্ঞান শিক্ষা দিবেন।" এই স্বপ্লাদেশ প্রাপ্তে বাণী তথা হইতে চলিলেন ও নানাস্থান ভ্রমণপূৰ্ব্বক নবিগঞ্জের বাজারে উপস্থিত হইলেন, এই স্থানে পাগলশঙ্কর নামক সাধু পুরুষের সহিত তাহার সাক্ষাৎ হইল, বাণী যেন আকাশের চাদ হাতে পাইলেন; পাগলশঙ্করও বাণীর ন্যায় মহাত্মার সঙ্গলাভে পরম সুখী হইলেন। পাগলশঙ্কর সম্মিলন পাগল শঙ্করের জন্মস্থান সতরশতী পরগণার বরাকপার গ্রাম, পাগলশঙ্কর পরম সিদ্ধপুরুষ ছিলেন, শ্রীহট্ট জেলার নানাস্থানেই তাহার অনেক ভক্ত ছিল: বাণীকিশোর এক মাস কাল পাগল শঙ্করের কাছে অবস্থিতি করিলেন । এই একমাস উভয়ে কেবল হরিনাম প্রসঙ্গে যাপন করিয়াছিলেন । এই সময় আর একজন মহাপুরুষ তাহাদের সহিত সম্মিলিত ও বন্ধু বলিয়া পরিগণিত হন; ইনি তরফের সৈয়দ বংশীয় সাধক গদাহাসন সাহেব; ইহার নামে তত্ৰত্য একটি পরগণার নামকরণ হইয়াছিল, স্থানান্তরে বলা গিয়াছে। কিছুদিন পরে ঠাকুরবাণী ও পাগলশঙ্কর গঙ্গাস্নানের উপলক্ষে মুর্শিদাবাদ গমন করেন। নবিগঞ্জ হইতে যাত্রা করিয়া “পথে পথে নানা ভঙ্গি নৰ্ত্তন কীৰ্ত্তন। পঞ্চদশদিনে পাইলা দর্শন।" —চরিত্র চিন্তারত্ন । তথা হইতে কণ্টকনগর, অম্বিকা প্রভৃতি দ্বাদশ পাঠ পরিভ্রমণপূর্বক নবদ্বীপে উপস্থিত হন; নবদ্বীপ হইতে শ্ৰীক্ষেত্র গমন করেন । তথা হইতে প্রত্যাগমন কালে তাহদের “বঙ্গাধিপতি যবনরাজের” সহিত সাক্ষাৎ হয়; তিনি সাধুদের দৈবশক্তির পরিচয় পাইয়া— "শ্রীহট্টাধিপের স্থানে এক পত্ৰ দিয়া বাণীকে পাঠাইলা দেশে সম্মান করিয়া।” —চরিত্র চিন্তারত্ন । দেশে আসিয়া উপস্থিত হইলে উভয়ে একে অন্যের নিকট বিদায় লইয়া স্ব স্ব স্থানে গমন ৯৮. এই গল্পটি বাণীবংশজ আমাদের শ্রদ্ধাভাজন প্রেরক মহাশয় হইতে প্রাপ্ত নহে। সাধু মহাত্মা সরল, তাহারা সাংসারিক বিচারবুদ্ধির চালে চলেন না বটে, কিন্তু নানা কারণে এ গল্প কতদূর সত্য বলা যায় না; তবে “বাণী ঠাকুরের ভাগা” কথাটা সুপ্রচারিত।