পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপসংহার শ্ৰীগৌরাঙ্গ মহাপ্ৰভু জন্মকথা শ্রীহট্টের বুরঙ্গাবাসী মধুকর তনয় উপেন্দ্রমিশ্রের কথা পূৰ্ব্বে বহুস্থানে উল্লেখ করা হইয়াছে; উপেন্দ্র মিশ্র বুরুঙ্গা হইতে ঢাকা দক্ষিণে আসিয়া বাস করেন। উপেন্দ্র মিশ্রের ৩য় পুত্র জগন্নাথ মিশ্র অধ্যয়ন-মানসে নবদ্বীপে গমন করিয়া সেই স্থানেই বাস করেন। তিনি শ্রীহট্টবাসী নীলাম্বর চক্রবত্তীর দুহিতা শচীদেবীর পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন। জগন্নাথ মিশ্রের “পুরন্দর" উপাধি ছিল, শ্ৰীগৌরাঙ্গ এই শচী-পুরন্দরের দ্বিতীয় পুত্র। শ্রীগৌরাঙ্গের জন্মের পূৰ্ব্বে জগন্নাথ স্ত্রীকে লইয়া দেশে (ঢাকাদক্ষিণে) আসিয়াছিলেন। তথায়ই শচীর গর্ভলক্ষণ প্রকাশ পায়; তখন জগন্নাথজননী শোভাদেবী এক বিচিত্র স্বপ্নদর্শনে এই বিষয় জ্ঞাত হইয়া বধূকে স্বপ্নকথা বলেন এবং তাহাকে নবদ্বীপে প্রেরণ করেন; আমরা "ইতিবৃত্তের” ৩য় ভাগ ১ম খণ্ডের ৩য় অধ্যায়ে তাহা বিস্তারিতরূপে বর্ণন করিয়াছি; শচীর সেই গর্ভের সন্তানই শ্ৰীগৌরাঙ্গ। শ্রীগৌরাঙ্গ ১৪০ শকে ফাল্গুনী পূর্ণিমাযোগে জন্ম গ্রহণ করেন। তাহার জন্মকালে চন্দ্রগ্রহণ হইয়াছিল, নবদ্বীপের হিন্দু অধিবাসীবর্গ পবিত্র মনে গঙ্গাস্নান করিয়া তখন হরিনাম করিতেছিল । যিনি ভবিষ্যতে হরিনামের বিজয়ভেরী বাদন করিয়া ভারতবাসীকে মোহনিদ্রা হইতে জাগাইয়াছিলেন, তাহাদের জ্ঞান উদ্বুদ্ধ করিয়াছিলেন, তাহার জন্মকালেই তৎসূচনা হইয়াছিল। শচী তাহাকে নিমাই বলিয়া ডাকিতেন। নিমাইর কি যে এক মোহিনী শক্তি ছিল; যে তাহাকে দেখিত, মোহিত হইত; সংসারের ভাবনাবিবৰ্ত্ত তাহার মন হইতে অন্তহৃত হইত। নিমাই যখন শিশু, তখন শচীদেবী গৃহের মধ্যে নানারূপ অলৌকিক ব্যাপার অবলোকন করিতেন। কখন যেন শুনিতেন বাহিরে কাহারা স্তুতি করিতেছে, কখন শিশুর শুন্যপদে নুপুরের ধ্বনি শুনিতে পাইতেন । এইরূপ বহুবিধ ঘটনায় শচী ও জগন্নাথের মনে বিবিধ আশঙ্কার উদয় হইত। পাছে কোন দৈব উৎপাতে শিশুর অনিষ্ট ঘটে, ইহা ভাবিয়া ভীত হইতেন । উৎপাতও নানারূপ উপস্থিত হইত। শীশুলীলা একদিন একটা সাপ আসিয়া শিশুর পার্শ্বে পড়িয়া রহিয়াছিল, দেখিয়া সকলে হায় হায় করিয়া উঠিল, সাপটি কিছুকাল পরে আপনিই চলিয়া গেল। এমন আর একদিন হইয়াছিল। শিশু যখন কাদিতেন—কিছুতেই থামানো যাইত না, ক্ৰন্দন থামাইবার একমাত্র মন্ত্র ছিল হরিনাম । কেহ হরিনাম করিলে শিশু তাহার মুখের দিকে মুগ্ধ হইয়া চাহিয়া খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিত, ইহাতে বড়ই আমোদ বোধ হইত; সকলেই ইচ্ছা করিয়া হরি হরি বলিয়া হরিনাম করিলে শিশু সহজেই কোলে যাইত; সুন্দর শিশুকে হরি বলিয়া লোকে কোলে লইত। গৌরবর্ণ এই সুন্দর শিশুর ঈদৃশ অদ্ভুত স্বভাব দেখিয়া পাড়ার স্ত্রীলোকেরা তাহাকে গৌরহরি নাম প্রদান করেন; গৌরহরিই শেষটা গৌরনাথ নামে খ্যাত হন। পিতা তাহার নাম রাখিয়াছিলেন বিশ্বম্ভর মিশ্র । নিমাই হাটিতে শিখিলে জননী তাহাকে বিবিধ অলঙ্কারে সাজাইয়া রাখিতেন কিন্তু বালকের চাঞ্চল্য অত্যন্ত অধিক ছিল—পৃহস্থালীর দ্রব্যাদি তাহার হাতে পড়িলেই বিনষ্ট হইত। একদিন একজন অতিথি গৃহে উপস্থিত হইয়াছিলেন, নিমাই তাহার নিবেদিত অন্ন বার আর আহার