পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ নেত্রজলে অস্পষ্ট হইয়া গিয়াছিল২৮ এইজন্য তিনি একখানা নূতন পুথি লিখিয়া লইয়াছিলেন, উহার পাশ্বে ক্ষুদ্রাক্ষরে স্বয়ং শ্ৰীমহাপ্ৰভু কোন কোন শব্দের অর্থ লিখিয়া দিয়াছিলেন । শ্রীনিতানন্দ নিজ শিষ্য বৃন্দাবন দাসের২৯ জন্য উক্ত গ্রন্থ গদাধর হইতে গ্রহণ করেন, সে গ্রন্থ বৃন্দাবন দাসের পাট দেনুড়ে এখনও রহিয়াছে। তাহাতে শ্ৰীগৌর গদাধরের যুগল হস্তাক্ষর দেখার সুযোগ ঘটে ৩০ শেষ কথা শ্ৰীমহাপ্ৰভু নীলাচলে রহিলেন, গৌড় দেশীয় ভক্তবর্গ প্রতিবৎসর রথোৎসবের সময় নীলাচলে গিয়া তাহার সহিত সম্মিলিত হইতেন ও ২/৩ মাস তথায় অতিবাহিত করিতেন। মধ্যে একবার মহাপ্রভু বৃন্দাবন গমন উপলক্ষে রামকেলি গ্রাম পর্যন্ত আসিয়াছিলেন; সেবার আর তাহারা নীলাচলে যান নাই। রামকেলিতে রূপ ও সনাতন তাহার সহিত গিয়া দেখা করেন, ইহারা হুসেন শাহের প্রধান কৰ্ম্মচারী ছিলেন। শ্ৰীগৌরাঙ্গের দর্শনাবধি ইহাদের সংসারে বিতৃষ্ণা জন্মে, এবং তাহারা গৃহত্যাগ করিয়া তৎসহ মিলিত হন। ইহারাই শ্ৰীগৌরাঙ্গের মতানুযায়ী শাস্ত্র প্রণয়ন করেন ও বৃন্দাবনে বিলুপ্ত তীর্থস্থল উদ্ধার ক্রমে গোবিন্দাদি বিগ্রহ প্রকাশ করেন। এবার শ্ৰীমহাপ্রভুর বৃন্দাবন গমনে ব্যাঘাত ঘটিলেও, নীলাচল আসিয়া কিছুকাল মধ্যেই তিনি বনপথে তথায় গমন করেন, গমনকালে বন্যপশু সমুহ তাহার কাছে আসিত, এবং হিংসাবৃত্তি ভুলিয়া তাহারা শ্ৰীমহাপ্রভুকে ঘেরিয়া দাড়াইত। শ্ৰীমহাপ্রভুর ভাব-সংক্রমিত হইয়া পশুপক্ষীরাও নৃত্য করিয়া উঠিত। বৃন্দাবন হইতে আসিতে তিনি কাশীতে প্রকাশানন্দ সরস্বতী নামক এক প্রধান মায়াবাদী সন্ন্যাসীকে স্বমতে আনয়ন করেন। ইনি তৎকালে ভারতবর্ষের সৰ্ব্বপ্রধান বিদ্যাগৰ্ব্বিত সন্ন্যাসী ছিলেন, সাৰ্ব্বভৌমের ন্যায় তিনিও শেষে প্রবোধানন্দ সরস্বতী নামে খ্যাত হন। ইহার প্রণীত শ্রীচৈতন্যচন্দ্রামৃত সংস্কৃত গ্রন্থ ভাণ্ডারে এক অপূৰ্ব্ব রত্ন, তদ্ব্যতীত “শ্রীবৃন্দাবনশতক" প্রভৃতি ইহার আরো গ্রন্থ আছে। শ্ৰীমহাপ্রভুর নীলাচল বাসের শেষ দ্বাদশ বৎসর তিনি কৃষ্ণপ্রেমে এরূপ বিহবল থাকিতেন যে অতি অল্পকালই তিনি ভক্তবর্গের সহিত মিলিতে পারিতেন। ভাগবত পুরাণে গোপীদের যে ভাবের কথা লিখিত হইয়াছে, বঙ্গীয় প্রাচীন কবি চণ্ডীদাস রাধিকার যেরূপ ভাবের বর্ণনা করিয়াছেন, শ্রীচৈতন্যদেব তাহাই প্রত্যক্ষ দেখাইয়াছিলেন। রাধা, যে কবিকল্পিত নহেন শ্রীচৈতন্যের ভাব দেখিয়া লোকে তাহা বুঝিতে পারেন। তখন আর তাহার ভাবের সহিত মিলিবার ইচ্ছা বা শক্তি থাকিল না। তবে যে মিলিতেন—সে অভ্যাস বশে । তখন স্বরূপ আর রামানন্দ–যিনি সংস্কৃত জগন্নাথ বল্লভ নাটক রচনা করিয়াছেন—সৰ্ব্বদা তাহারা কাছে থাকিতেন, তাহাকে রক্ষা করিতেন । স্বরূপ তাহার ভাবের অনুরূপ গান গাইতেন, রামানন্দ কৃষ্ণকথা বলিয়া ধৈর্য্য ধরাইতেন। তিনি যে শ্রীচৈতন্য, ইহারা যে স্বরূপ ও রামরায়, তাহার ইত্যাকার জ্ঞান থাকিত না। ভাবিতেন—তিনি রাধা। শ্রীকৃষ্ণ তাঁহাকে ফেলিয়া চলিয়া গিয়াছেন। তাহার কাছে ললিতাও বিমাকা সখী রহিয়াছেন । এই যে শ্রীচৈতন্যের ঈশ্বরানুরাগ, ইহাতে প্রার্থনা নাই,—মুক্তির কথা নাই; ইহা ভক্তির চরম দশা ও চরম আদর্শ। ইহার উপরে শিখিবার কিছু না বলিবার কিছু নাই। এক শ্রীচৈতন্যই ২৮. অনুর, বল্লী নামক প্রাচীন গ্রন্থে লিখিত আছে যে এই গ্রন্থ বৃন্দাবনে নীত হয় । ২৯. এই ৪র্থ ভাগে “শ্রীবাস পণ্ডিত" প্রসঙ্গে ইহার নামও লিখিত হইয়াছে। ৩০. হস্তাক্ষর চিত্রের চারিটি ছত্রে যাহা লিখিত আছে, তাহা বিজয়া পত্রিকায় আমরা সচিত্র প্রকাশ করিয়াছিলাম।