পরিশিষ্ট শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২১৭ আজকাল বাঙ্গালার যে সব খণ্ডাংশের ইতিহাস লেখা হইতেছে, তাহাতে ইংরেজ লেখকের কথা অবমানিত হয় না। প্রমাণ স্বরূপে আমরা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত নামক নূতন গ্রন্থের নামোল্লেখ করিতে পারি। বাঙ্গালা সাহিত্য ক্ষেত্রে সুপরিচিত শ্ৰীযুক্ত অচ্যুতচরণ চৌধুরী মহাশয় কর্তৃক এই গ্রন্থ রচিত। ইহা শ্রীহট্ট ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশ। ইহা ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক। চৌধুরী মহাশয় সুলেখক। বহুদিন যাবৎ বহু পরিশ্রম করিয়া ইনি বহু সন্ধান লইয়াছেন। তাহার সহিষ্ণুতা প্রশংসনীয়। শ্রীহট্টের ভূগোল ও ইতিহাস সম্বন্ধে যে সব বিষয়ের আলোচনা হইয়াছে, তাহা বাস্তবিক কৌতুহলোদ্দীপন করিয়া থাকে। যাহার পর যে বিষয়টার সমাবেশ প্রয়োজনীয়, বেশ সুসম্বন্ধভাবে তাহার পর সেই বিষয়টার উল্লেখ হইয়াছে। দেববিগ্রহের আবির্ভাব ও তিরোভাব সম্বন্ধে হিন্দুর বিশ্বাসমতে আলোচনা হিন্দুলেখকের যোগ্য হইয়াছে। স্বভাববর্ণনা ভাষার মাধুর্য্যে হৃদয়োম্মাদক। আলোচ্য গ্রন্থ খানি সম্পূর্ণ নহে। ইহা পূৰ্ব্বাংশ মাত্র। প্রকাণ্ড গ্রন্থ, ৬/৭ শত পৃষ্ঠার ত কম নহে। সুন্দর কাগজ, ছাপাই ও বাধাই। এ গ্রন্থ মুদ্রাঙ্কণে গ্রন্থকারের বহু অর্থ ব্যয় হইয়াছে। সমগ্র গ্রন্থে ভাগ ও খণ্ড আছে। এ সকল খণ্ডে অবশ্য জ্ঞাতব্য বিষয়ের অবতারণ ও বিশ্লেষণ হইয়াছে। এরূপ ধরণের ইতিহাস বাঙ্গালায় বিরল। প্রাচীন তথ্য পড়িতে পড়িতে, বহু স্থানে বাঙ্গালী বীরের বীরত্ব কাহিনীর আলোচনা করিতে করিতে মন মাতোয়ারা হইয়া পড়ে। দেশের পূৰ্ব্বাবস্থা ও অধুনাতন অবস্থার তুলনা সমালোচনায় পুলকে প্রাণ ভরিয়া যায় এবং অনেক স্থলে চক্ষের জলে বক্ষঃস্থল ভাসিয়া যায়। শ্রীহট্টের অনেক সুচারু শিল্প লোপ পাইয়াছে। তাহার বিষয় এ গ্রন্থে পড়িলে বুকের হাড় খসিয়া পড়ে। ফলে আলোচ্য গ্রন্থখানি খাটি ইতিহাস । এইরূপ ভাবে যদি সকল জেলার ইতিহাস লিখিত হয়, তাহা হইলে একদিন বাঙ্গালার খাটি ইতিহাস দেখিবার আশা করিতে পারি। প্রত্যেক বাঙ্গালীর শ্রীহট্টের ইতিহাস পাঠ করা উচিত । ইহাতে কয়েক খানি চিত্র আছে, মূল্য ৪ টাকা। গ্রন্থের আকৃতি এবং প্রকৃতি হিসাবে ইহা নিশ্চিতই সুলভ মূল্য।" আনন্দবাজার পত্রিকা—৩২ শে শ্রাবণ ১৩১৮ সাল “আমরা শ্রীযুক্ত অচ্যুতচরণ তত্ত্বনিধি প্রণীত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত নামক গ্রন্থের পূৰ্ব্বাংশ দেখিয়া প্রীতিলাভ করিলাম। এই গ্রন্থে গ্রন্থকার মহাশয় যে অসাধারণ ঐতিহাসিক গবেষণার পরিচয় দিয়াছেন তজ্জন্য তিনি ইতিহাসপাঠার্থী ব্যক্তি মাত্রেরই ধন্যবাদার্হ। এই গ্রন্থের প্রথম ভাগে শ্রীহট্টের ভৌগোলিক বৃত্তান্ত এবং দ্বিতীয় ভাগে ঐতিহাসিক বৃত্তান্ত সন্নিবেশিত হইয়াছে। উপসংহারে কাছাড়ের বৃত্তান্ত আলোচিত হইয়াছে। এক খানি মানচিত্র, অনেকগুলি সুপ্রসিদ্ধ স্থানের প্রতিচ্ছবি এবং কতকগুলি প্রয়োজনীয় দলিলের প্রতিলিপি দ্বারায় গ্রন্থখানি সমালকৃত করা হইয়াছে। শ্রীযুক্ত অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি মহাশয় এই বিরাট আয়তনের অতি সুন্দর পুস্তক খানিকে সৰ্ব্বশ্রেণীর পাঠকগণের পাঠের উপযোগী করিয়া প্রণয়ন করিয়াছেন। আমরা তাহার এই অশেষ শ্রম বিপুল গবেষণা এবং রচনা প্রণালীর প্রাঞ্জলতা দেখিয়া পরম প্রীতিলাভ করিলাম। ঐতিহাসিক উপাদান সংগ্রহ, সরল ও চিত্তাকষী ভাষায় সেই সকল উপাদান উপযুক্তরূপে বিন্যস্ত করা এবং বিশ্বাসযোগ্য দলিল প্রমাণ প্রভৃতির দ্বারায় ঐতিহাসিক ঘটনার সমর্থন করা ঐতিহাসিক নিবন্ধলেখকগণের প্রধানতম গৌরবের বিষয় । সরকারী অনেক দলিল আদি হইতে এবং প্রাচীন বাঙ্গালা গ্রন্থাদি হইতে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য এই পুস্তকে সংগৃহীত হইয়াছে সত্য, কিন্তু এই গ্রন্থে শ্ৰীযুক্ত অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি
