পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
সংকলন

চিত্র আমাদের আশাপটে অঙ্কিত হইয়া উঠে, পরবর্তী অঙ্কের আরম্ভেই সে-চিত্রে দাগ পড়িয়া যায়।

 বিদূষক যখন জিজ্ঞাসা করিল, ‘এই গানটির অক্ষরার্থ বুঝিলে কি’, রাজা ঈষৎ হাসিয়া উত্তর করিলেন, “সকৃৎকৃতপ্রণয়োঽয়ং জনঃ। আমরা একবার মাত্র প্রণয় করিয়া তাহার পরে ছাড়িয়া দিই, সেইজন্য দেবী বসুমতীকে লইয়া আমি ইহার মহৎ ভর্ৎসনার যোগ্য হইয়াছি। সখে মাধব্য, তুমি আমার নাম করিয়া হংসপদিকাকে বলো, ‘বড়ো নিপুণভাবে তুমি আমাকে ভর্ৎসনা করিয়াছ।’ ··· যাও, বেশ নাগরিকবৃত্তি দ্বারা এই কথাটি তাহাকে বলিবে।”

 পঞ্চম অঙ্কের প্রারম্ভে রাজার চপল প্রণয়ের এই পরিচয় নিরর্থক নহে। ইহাতে কবি নিপুণ কৌশলে জানাইয়াছেন, দুর্বাসার শাপে যাহা ঘটিয়াছে, স্বভাবের মধ্যে তাহার বীজ ছিল। কাব্যের খাতিরে যাহাকে আকস্মিক করিয়া দেখানো হইয়াছে, তাহা প্রাকৃতিক।

 চতুর্থ অঙ্ক হইতে পঞ্চম অঙ্কে আমরা হঠাৎ আর-এক বাতাসে আসিয়া পড়িলাম। এতক্ষণ আমরা যেন একটি মানসলোকে ছিলাম— সেখানকার যে-নিয়ম, এখানকার সে-নিয়ম নহে। সেই তপোবনের সুর এখানকার সুরের সঙ্গে মিলিবে কি করিয়া। সেখানে যে ব্যাপারটি সহজ-সুন্দরভাবে অতি অনায়াসে ঘটিয়াছিল, এখানে তাহার কী দশা হইবে, তাহা চিন্তা করিলে আশঙ্কা জন্মে। তাই পঞ্চম অঙ্কের প্রথমেই নাগরিকবৃত্তির মধ্যে যখন দেখিলাম যে, এখানে হৃদয় বড়ো কঠিন, প্রণয় বড়ো কুটিল এবং মিলনের পথ সহজ নহে, তখন আমাদের সেই বনের সৌন্দর্যস্বপ্ন ভাঙিবার মতো হইল। ঋষিশিষ্য শার্ঙ্গরব রাজভবনে প্রবেশ করিয়া কহিলেন, “যেন অগ্নিবেষ্টিত গৃহের মধ্যে আসিয়া পড়িলাম।” শারদ্বত কহিলেন, “তৈলাক্তকে দেখিয়া স্নাত ব্যক্তির, অশুচিকে দেখিয়া শুচি ব্যক্তির, সুপ্তকে দেখিয়া জাগ্রত জনের এবং বন্ধুকে দেখিয়া