পাতা:সময় অসময় নিঃসময় - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাঠকৃতিতেও একাধিক কেন্দ্রের উপস্থিতি অবশ্যম্ভাবী। উপস্থিতি আর অনুপস্থিতির দ্বিরালাপ উত্তরোত্তর অবারিত হয়ে উঠবে আগামীকালের বয়ানে।

লেখা আমাদের যুদ্ধক্ষেত্র

লেখা যুদ্ধ, লেখা যুদ্ধক্ষেত্র, লেখা জয়, লেখা পরাজয় এবং লেখাই রণকৌশল। বহুত্ব তার স্বভাবে, তার নিরন্তর পরিচর্যায়। অন্তর্ভুবনের ক্রমিক উদ্ভাসনে, বহির্জগতের নানা গ্রন্থনায়। নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে লেখায়, লেখার ভিতর দিয়েই দেখতে হবে ভুবনখানি। বুঝতে হবে সময়কে, জানতে হবে পরিসরকে। লেখার গভীরে নেই কোনও দুষ্প্রবেশ্য রহস্য, নেই আধিপত্যবাদী চূড়ান্ততা, নেই নিষ্ক্রিয় রুদ্ধতা। যুক্তি-বিধি-বিজ্ঞান ঈশ্বর: কোনও কিছুই পাঠকৃতিকে স্থির বিষয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে না। লেখার শক্তি ও লাবণ্য তার উৎসে নেই। রয়েছে পথ থেকে পথান্তর সৃজনে। এখানেই তার মুক্তি, এখানেই তার সার্থকতা। গ্রন্থনার প্রতিটি অনুপুখে আভাসিত কোনো-একটি বৈশ্বিক দ্যোতনার তাই ভাষ্য করব না শুধু, গ্রন্থিমোচন করব। প্রতিটি বিন্দুতে প্রতিটি স্তরে আবিষ্কার করব, অন্তরালে কিছুই প্রচ্ছন্ন নেই। আমাদের মেধাবী আবেগ তীক্ষ্ণ বল্লমের মতো লেখার পরিসরকে এফোঁড় ওফোঁড় করে যাবে। কোথাও কোনও পূর্বানুমিত অর্থ তাতে প্রতিবন্ধক হতে পারবে না। সমগ্রতা যখন প্রত্যাহ্বানের মুখোমুখি, তাৎপর্যের একক ও সামূহিক বাচনের দ্বিবাচনিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করাই লেখার ধর্ম। সর্বব্যাপ্ত ভাঙনের কালবেলায় এই আমাদের দ্রোহ, এই আমাদের প্রতিবাদ। এই আমাদের অঙ্গীকার। লেখা চলছে। লেখা চলবে।

১০২