পাতা:সময় অসময় নিঃসময় - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করেছেন, লেখায় ফুটে উঠেছে অবসাদের চিহ্ন। ’রাস্তায় আবার’ সংকলনে ‘হে জীবন’ কবিতায় ভাস্কর যেন বুঝিয়ে দিয়েছেন, কত সাবলীলভাবে জন্ম নেয় লেখা:

‘ছুঁয়ে যাই দগ্ধ বাড়িগুলো
ছুঁয়ে যাই মানুষের মুখ
ছুঁয়ে যাই শান্ত ঘণ্টাধ্বনি
ছুঁয়ে যাই সহস্র অসুখ।
... ... ...
ছুঁয়ে যাই তোমার দুচোখ
ছুঁয়ে যাই হারমোনিয়াম
ছুঁয়ে যাই ব্যর্থ এ জীবন
হে জীবন তোমাকে প্রণাম!’

 তবে, সময়ের লেখা ও সাহিত্যের টানাপোড়েন এবং প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানের কাছে লিখিয়ের আত্মসমর্পণে সাহিত্যিকের কিংবদন্তিতুল্য উত্থান সবচেয়ে ভালো ধরা পড়েছে জয় গোস্বামীর মধ্যে। এমন সম্ভাবনা যেমন বিরল ছিল, তেমনি এমন বিপুল অপচয়ও দেখা যায় না। বহু স্মরণীয় লেখার উদগাতা হয়েও জয়, নিজেরই কবিতার ভাষায়, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতাপের সংঘে ‘দুগ্ধপোষ্য’ সাহিত্যিকে পরিণত হয়েছেন। তার সাম্প্রতিক রচনাপুঞ্জ অপচয়ের অভ্রান্ত দৃষ্টান্ত। অথচ ‘উন্মাদের পাঠক্রম’-এর ‘সৎকার গাথা’র মতো অসামান্য লেখা জয়ের কাছেই পেয়েছি আমরা:

‘আমরা সেদিন আগুনের নদী থেকে
তুলে আনলাম মা-র ভেসে যাওয়া দেহ
সারা গা জ্বলছে বোন তোর মনে আছে
প্রতিবেশীদের চোখে ছিল সন্দেহ?

দীর্ঘ চক্ষু, রোঁয়া-ওঠা ঘাড় তুলে
এগিয়ে এসেছে অভিজ্ঞ মোড়লেরা
বলেছে—‘এ সভা বিধান দিচ্ছে, শোনো—
দাহ করবার অধিকারী নয় এরা।’

সেই রাত্রেই পালিয়েছি গ্রাম ছেড়ে
কাঁধ মা-র দেহ, উপরে জ্বলছে চাঁদ
পথে পড়েছিল বিষাক্ত জলাভূমি
পথে পড়েছিল চুন লবণের খাদ

আমার আঙুল খসে গেছে, তোর বুক
শুকিয়ে গিয়েছে তীব্র চুনের ঝাঁঝে
আহার ছিল না, শৌচ ছিল না কারো
আমরা ছিলাম শববাহনের কাজে

১১৩