পাঁচ বছর আগেও বাঙালির ভুবন ঠিক এরকম ছিল না। সন্দেহ নেই যে, পাঁচ বছর। পরেও আজকের মতো থাকবে না। খাটি হাওয়ামোরগের মতো লিখিয়েদের, সম্পাদকদের আজ শুযে নিতে হবে দ্রুত ধাবমান সময়ের বার্তা। তবু শব্দাতিগ গতির এই পরিবর্তনমালায় পুঞ্জীভূত আন্তর্জাতিকতা চিন্তাবিষে যে-বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলেছে—তা যেন বাঙালির নিজস্ব অনুভবকে গ্রাস না করে। কতখানি গ্রহণ করব কতখানি বর্জন আর কতখানি বা পুনর্নির্মাণ করব-পড়ুয়াদের কাছে এ বিষয়ে অত্যন্ত জরুরি দিগদর্শক সংকেত পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন লিটল ম্যাগাজিনের যোদ্ধারা। এত গতির ঘূর্ণাবর্তেও কোন উপকরণ স্থির অপরিবর্তনীয়—নতুন-নতুন প্রতিবেদন ও বয়ন তৈরি করে সেদিকেও তারা আলোকপাত করুন। এই মুহুর্তে এর চেয়ে বড়ো দায়। আর কিছু নেই।
এসময় নাকি সংশয়ের, আকছার শোনা যায় একথা। সত্যভ্রম নাকি এখন বেশি। জোরালো ও কার্যকরীএমন ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু বোধহয় কর্কশ সত্যটা বলে নেওয়াই ভালো। যাদের কোনো কেন্দ্র নেই, এমনকি কেন্দ্রহীনতাই যাদের অভিজ্ঞান ও প্রত্যয়—এরা কিন্তু ছদ্মবেশীঅপ্রাতিষ্ঠানিকতা তাদের কাছে সিঁড়িমা, ব্যবহার করুন এবং যুঁড়ে ফেলে দিন গোছের আসবাব। গাছের খেতে খেতে আর তলার কুড়োতে কুড়োতে এরাই ফন্দিফিকির খুঁজে বেড়ায়, কীভাবে কোথায় উপরে ওঠার পথটা লুকোনো। সাহিত্য ‘করাএদের কাছে নামী-দামী হওয়ার জন্যেকোনো সত্যের মুখোমুখি হওয়ার জন্যে নয়। ছদ্মবেশও তাই যখন-যেমন পরে নেয় এরা। সংশয়। এদের জন্যে কারণ চোখের কূলিটা তো নজরে পড়ে না কখনো। লেখক-জীবনের শুরুতে অধ্যবসায় থাকে, থাকে আবিষ্কারের পৃহা। কিন্তু পরে একে একে সব ঝরে। যায়। যে যে আকল্প পদ্রুয়ারা সাদরে নিয়েছেন, এরা কেবলই এর পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। নিজেকে ভাঙার মধ্যে পাঠকের সমর্থন হারানোর শঙ্কা থাকে বলে নিজের মৌচাকে নিজেই ঝুদ হয়ে থাকতে চায়। সংশয়বাদ এদের খেয়া-পারানির কড়ি হয়ে পড়ে।
স্বভাবত লিটল ম্যাগাজিন এই সংশয়বাদে বিশ্বাসী নয়। অন্তত সাম্প্রতিক পৰ্বাত্তরের আবহে নিশ্চিতভাবে ছোট পত্রিকার ওপর ঐতিহাসিক দায়িত্ব বর্তেছে। অধির মধ্য দিয়ে পথ ও পাথেয় চিনে নেওয়ার এই দায় যুগপৎ আত্মবিনির্মাণের, জগৎবিনির্মাণেরও। বাঙালির শেকড়ে জল নেই নানা কারণে। জল দাও, আর্তিকে মান্য করে প্রাকৃতায়নকেও শ্রদ্ধা জানাতে হবে। অথচ একই সঙ্গে আত্মস্থ করে নিতে হবে চিন্তার বিশ্বায়ন-সম্পূক্ত। প্রবণতাগুলিকেও। সত্য যে দিবাচনিক, ছোট পত্রিকা নিজের বহুমাত্রিকতার মধ্য দিয়ে। তা স্পষ্ট করে তুলুক। ঘটতে থাকুক অজস্র বিছুরণ, উথাপিত হোক প্রশ্নের পরে প্রশ্ন। লিটল ম্যাগাজিন নামক শমীবৃক্ষে মেগা প্রশ্নমালার আগুন যেন নিৰ্বাপিত না হয়। কখনো।