পাতা:সময় অসময় নিঃসময় - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অনুপুঙ্খ দিয়ে বুঝিয়ে দেন, আসলে আসগরের ভূমিকা অনুগত পোষা কুকুরেরই। প্রভুর কাছে তার লেজ নাড়া, অন্যের কাছে তর্জন। তাই ‘সরোয়ার কবির হাসলে আসগরও অগত্যা হাসে,’ ‘আসগর দরজায় ধাই ধাঁই করে ঘুষি মারে আর চ্যাঁচায়’, ‘রাগ করার সুযোগ পেয়ে আসগর ‘খ্যাঁক করে উঠলো’, ‘কৃতজ্ঞতায় সে জিভ নাড়ে’। এখানে বলা যেতে পারে, আসগরের জিভ নাড়া হলো আরগসের লেজ নাড়ার বিকল্প। অতএব কচিৎ কখনো ‘সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যাবে’ ভাবলেও খাঁচা থেকে বেরোনোর কোনো পথ খোঁজে না আসগর। কবির ভাইকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতেই হবে’ এই সিদ্ধান্ত থেকে কুকুর আরগসকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির উপায় হিসেবে সে ব্যবহার করতে চায়। সরোয়ার যখন ভোরে লনে ব্যায়াম করে ‘আরগসকে আদর করে তখন সরোয়ার কবিরের ইমপ্রেশনটা জাস্ট ভালো করা। ব্যাস, দিস মাচ। সায়েবকে তখন শুধু খুশি করা। কথাটা বলবে সরোয়ার কবির যখন অফিস যাবে তার আগে আগে। কিন্তু ঠিক পরিকল্পনা মতো কাজ হয় না। সুযোগ কেবলই পিছলে যায়।’ এই প্রক্রিয়াও তাৎপর্যপূর্ণ। কমলালেবুর প্রসঙ্গ থেকে আরগসের মিল বাড়িয়ে দেওয়ার কথা থেকে আসে বাউয়েলস ক্লিয়ার হওয়ার প্রসঙ্গ। কার্নিভালের স্পর্শে এই অংশটি খুব চিত্তাকর্ষক।

 এই এক পর্যায় যখন সরোয়ার কবির ও তার স্ত্রী জেসমিনকে উপলক্ষ করে উচ্চবর্গীয়ের হাস্যকর অন্তঃসারশূন্যতা ও জান্তব অস্তিত্ব উন্মোচিত হয়েছে। তাই সরোয়ারের প্রধান বিবেচনা কথায় কথায় কোষ্ঠ নিয়ে কথা তোলা। কিন্তু তা আবার জেসমিনের রুচিতে বাধে, সে ফিগারের ব্যালান্স নষ্ট হওয়া নিয়ে চিন্তিত। সরোয়ার কোষ্ঠ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত অবিরাম সিগ্রেট টেনে যায়, ভোরবেলায় জগিং ও ব্যায়ামের অন্যতম উদ্দেশ্য পাকস্থলি পরিষ্কার করা। তবে কোনো-এক বন্ধুর সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে সে যা বলে, তাতে তার শ্রেণীগত জান্তবতা স্পষ্ট। ইলিয়াসের স্যাটায়ার এখানে শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছেছে: ‘ঘুম ভাঙলে বিছানায় শুয়ে শর্ট একটা ইণ্টারকোর্স সলভস ইওর প্রবলেম। কয়েকটা স্ট্রোক দিলেই তলপেটে চাপ পড়বে, এরপর রেগুলার ডোজ অফ থ্রি সিগারেটস এ্যাণ্ড ইউ গেট ইউর বাওয়েলস ক্লিয়ার।’ এর সঙ্গে সে জড়িয়ে নেয় জেসমিনের ফিগার স্লিম রাখার জন্যে ব্যাকুলতাকেও:‘ভোরবেলা ঘুম থেকে না উঠেও যে, এক্সারসাইস করতে পাচ্ছো এতেও তোমার ফিগার স্লিম থাকবে। এক নম্বর সাঁতার আর দুই নম্বর সেক্সয়াল ইণ্টারকোর্স, ইন দি আর্লি মর্নিং—আইদার অফ দিস টু কিপস ইওর ফিগার স্লিম।’ অতএব বলতে ইচ্ছে করে, ‘যুগলবন্দি’ নামটি বহুস্বরিক। একদিকে আরগস ও আসগর, অন্যদিকে সরোয়ার ও জেসমিন—জান্তবতাই তাদের অদৃশ্য-এক অভিন্ন সূত্রে বেঁধে রাখে। তাই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঈষৎ খিটমিটের এবং স্ত্রীর কাছে সরোয়ারের জড়সড় হয়ে যাওয়ার সুযোগ নিতে আরগসের বাউয়েলস ক্লিয়ারের প্রসঙ্গ ব্যবহার করে আসগর।

 এবার বয়ানও পৌঁছায় উপসংহারে। বিকেলে আব্দুলের জিম্মা থেকে আরগসকে নিয়ে বাইরে যায় আসগর। সে যে ডান হাতের কজিতে শেকলের একটি প্রান্ত বেশ টাইট করে জড়িয়ে নেয়—এই আপাত-তুচ্ছ বিবৃতি গভীর দ্যোতনাগর্ভ। কুকুরের সঙ্গে

১৭৫