পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাজন

 ‘তোর মাথা দেখেছিস, বেহায়া বজ্জাত মাগি! ছেলেটাকে মারবি না কি অ্যাঁ?’

 করুণার বৌ-এর কোল হইতে ছেলেটাকে বাঙ্গা ছিনাইয়া নিল। এঘরে আর থাকা চলে না। পাশের একটা ঘরে গিয়া বিছানায় বসিয়া নাতিকে কোলে করিয়া চুপি চুপি কাঁদিতে লাগিল। নাতির গগনভেদী আর দিদিমার মৃদুল কান্নার সমন্বয় এবাড়ীতে একটা নূতনত্বের সৃষ্টি করিল বৈ কি আজ। পূজার বাজনা শুনিতে শুনিতে মনে হইতে লাগিল, কয়েক মাইল দূরের গ্রামগুলিতে যেমন বন্যার জলে দুর্ভিক্ষের আগুন জ্বালাইয়া রাখিয়া যাইবার মত অদ্ভুত কাণ্ড ঘটাইয়া গিয়াছে পূজার উৎসবটা সেই রকম মানুষের জীবনটা নিরানন্দে ভরিয়া দিতেছে।

 এঘরের জানালা দিয়া পথ দেখা যায়। আর দেখা যায় পথের ওদিকের সাড়ে তিনটা কাঁচাপাকা বাড়ী। মাঝখানের বাড়ীটার একটা ঘরের জানালা প্রায় এই জানালাটার প্রতিফলিত ছবির মত। রাখাল দাসের ছবির মত সেজ মেয়ে টুনুর ঘর বলিয়া জানালাটায় কেবল একটা পর্দ্দা আছে,—তবে আধখানাই প্রায় ছেঁড়া। সকাল বেলাই খবর পাওয়া গিয়াছিল আজ টুনুরও জামাই আসিয়াছে। এখন দেখা গেল, শুধু আসে নাই, সশরীরে আসিয়াছেন। বেলা বারটার সময়েও টুনু জানালার শিক ধরিয়া দাঁড়ান মাত্র শরীরটা অনায়াসে এবং হয়ত অকারণে তার পাশে আসিয়া দাঁড়াইতে দ্বিধা করে না—টুনুর কৌতূহলেরও যেন আর ক্ষণিকের স্বাধীনতা নাই, বাহিরের জগৎকে একটু দেখিয়া লইতে জানালায় আসিলেও তাকে লজ্জা দেওয়া চাই।

 অথচ টুনু সঙ্গেই যাইবে—তিনটা কি চারটা দিন পরে। ছমাস আগে হইতে ঠিক হইয়া আছে, এবার টুনু সঙ্গেই যাইবে। অন্ততঃ ছ’মাসের জন্য