পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরীসৃপ
১৬

 সবগুলি বাড়ী নয়, মাঝে মাঝে মাচা আছে, কিন্তু খুব কাছের মাচাটি ছাড়া একটিকেও মাচা বলিয়া চেনা যায় না।

 ‘আরে হোই মহিম, আছ নাকি, হেঁই?’

 নিজের হাঁক শুনিয়া ভৈরবের নিজেরই চমক লাগে। এত জোরে হাঁক না দিলেও চলিত। কাছের মাচাটি হইতে মহিমের জবাব আসিবার আগে আরও দূরের সাড়া আসিল।

 ‘ভৈরব মামা, আগো ও ভৈরব মামা, একবারটি এসাে ইদিকে—সর্ব্বনাশ হইছে মাের—শুনছ ভৈরব মামা, আগো ও ভৈরবমামা!’

 বেশ বুঝিতে পারা যায়, আলতামণির গলা। সম্পদের আলােচনায় এমন কোমল আর মনােহারী, বিপদের আর্তনাদে এমন তীক্ষ্ণ আর মর্ম্মভেদী গলা রাজনগরে আর কারো নাই।

 কিন্তু কোনদিক হইতে কেহ সাড়া দিল না। এমনি ভাবে রাত্রিশেষে ঘরের চালায় উঠিয়া আশ্রয় গ্রহণের আশঙ্কা থাকায় গ্রাম আগেই অর্দ্ধেক খালি হইয়া গিয়াছে। কিন্তু যারা গিয়াছে তাদের বেশীরভাগ স্ত্রীলােক আর শিশু, ঘরের চালায়, মাচায়, চালের বাঁশ আর গাছের ডাল হইতে দোলনার মত ঝুলানাে তক্তপােষে, অনাথদের বাড়ীর পিছনের উঁচু মাটির ঢিপিটায় আর ছোটবড় কয়েকটা নৌকায় যারা আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে তাদের অধিকাংশই পুরুষ। এ অবস্থায় কেউ যে ঘুমাইয়া পড়িয়াছে তাও মনে করা চলে না। তবু আলতামণির আর্ত্তনাদে কেহ সাড়া দিল না।

 ভৈরবের হকের জবাবে মহিম বলিল, ‘চালায় বটে নাকি? কতক্ষণ?’

 ভৈরব বলিল, “এই মাত্তর উঠলাম, ভাবছিলাম চৌকীর পরে