পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭
বন্যা

রাতটুকুন কাটাব, তা শালার জল হু হু করে বাড়তে শুরু করে দিলে। দিনে দিনে ভাগ্যি সব কটাকে রেখে এলাম বনগাঁয়ে, নয় তাে বিপদ ঘটত। চাল ক’টা নিতে এসে নিজে হলাম আটক। কানাই না’টা নিয়ে গেল বিকেলে, বলল কি, এই এলাম বলে মামা, হাটতলা যাব আর আসব। মিথ্যুক লক্ষ্মীছাড়া বাঁদরটার আর পাত্তা নেই।

 আবার আলতামণির আর্ত্তনাদ শােনা গেল, ‘মহিমমামা! ভৈরবমামা!—আগাে শুনছ?’

 ভৈরব মহিমকে বলিল, ‘ঘরে ঘরে সমান বিপদ, আলতামণির চিল্লানিটা শুনছ? সবার আগে মাচান হল তাের, আগে থেকে পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে বসে আছিস মাচানে উঠে, এত চেঁচানি কিসের রে বাবু!’

 ‘অমনি স্বভাব ছুড়ির, গাঁ শুদ্ধু লােক দেখতে পারে না সাধে?’

 মহিম বােধ হয় তামাক সাজিতে আরম্ভ করিয়াছে, আগুন দেখা গেল। একটু তামাক টানিতে পারিলে মন্দ হইত না, কিন্তু মহিমের মাচানে যাওয়ার উপায় নাই। গেলেও সুবিধা হইবে না, অতটুকু মাচানের উপর মহিমের বৌ, মহিমের ছেলের বৌ, দু’টি বয়স্কা মেয়ে, সকলে আশ্রয় নিয়াছে। তাদেরি বােধ হয় নড়িবার ঠাঁই নাই, ওর মধ্যে কোথায় বসিয়া সে তামাক টানিবে? ডিঙ্গি নৌকাটি অবশ্য আছে মহিমের, কিন্তু তাকে তামাক খাওয়ানাের জন্য মহিম যে মাচান হইতে নামিয়া ডিঙ্গিতে করিয়া এখন তার চালায় আসিয়া উঠিবে সে ভরসা নাই। কোমরে দু’টি বিড়ি আর দেশলাই গোঁজা ছিল, একটু হিসাব করিয়া ভৈরব একটা বিড়ি ধরাইল।

 তারপর আবার শােনা গেল আলতামণির আর্ত্ত চীৎকার,—এবার আওয়াজটা আরও তীক্ষ্ণ, আরও মর্ম্মভেদী।