পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরীসৃপ
১৮

‘ও মহিমমামা! ও ভৈরবমামা! তোমাদের ভাগ্নি-জামাই যে মরে গেল গো, একবারটি আসবে না?’

 মহিম হুঁকায় একটা টান দিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘যাবে নাকি?'

 ভৈরব বলিল, ‘চল যাই। হুঁকাটা এনো দাদা, বিড়িফিড়ি একদম মুখে রুচে না।’

 বাড়ীর পিছনে সব চেয়ে মোটা আমগাছটার অনেক উঁচুতে মোটা ডাল বাছিয়া আলতামণির মাচান বাঁধা হইয়াছে। গাছটার সকলের নীচের ডালটা পর্যন্ত জল উঠিয়াছে, দেড়খানা মানুষ ডুবিয়া যাইবে। আশ্চর্যের কিছু নাই, উঁচু জমিতে উঁচু ভিটায় ভৈরবের বড় ঘর, চাল হইতে নামিবার সময় দেখিয়া আসিয়াছে সে ঘরের দরজার অর্ধেকের বেশী জলের নীচে ডুবিয়া গিয়াছে। ইট দিয়া তক্তপোষ উঁচু করিয়া কি সাহসেই সে ঘরের মধ্যে রাতটা কাটাইয়া দিবে ভাবিয়াছিল! তক্তপোষটা এখন বোধ হয় ঘরের মধ্যে ভাসিয়া বেড়াইতেছে।

 এখানে আলতামণির অবস্থা সত্যই কাহিল। কাছে আসিয়া ভৈরব ও মহিম দু’জনেই বুঝতে পারিল, অকারণে আলতামণি ওরকম আর্ত্তনাদ করে নাই। আমগাছের ডুবুডুবু ডালটা সে এক হাতে প্রাণপণে জড়াইয়া ধরিয়া আছে, অন্য হাতে ধরিয়া আছে কানাইকে। কানাই জীবিত না মৃত বুঝিবার উপায় নাই, কিন্তু একেবারেই নিশ্চেষ্ট, আলতামণি ছাড়িয়া দিলেই জলে ডুবিয়া স্রোতে ভাসিয়া চলিয়া যাইতে পারে, এমনিভাবে গা এলাইয়া দিয়াছে।

 ‘ধর মামা, চট করে ধর একজন,—হাত এলিয়ে গেছে আমার। কত্‌খন এমনি করে ধরে আছি।’